স্থানীয় সংবাদ

কেশবপুরে ১৯০ টি স্কুল মাদ্রাসা ও কলেজে শহীদ মিনার নেই

আব্দুল মোমিন, কেশবপুর প্রতিনিধি : কেশবপুর উপজেলার ২৯৫টি স্কুল মাদ্রাসা ও কলেজের মধ্যে ১৯০ টিতেই শহীদ মিনার নেই। ফলে ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভাষা শহীদদের প্রতি যথাযথ ভাবে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন না। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ইট সাজিয়ে, কলাগাছ ও শ্রেণী কক্ষের বেঞ্চ দিয়ে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকেন বলে জানা গেছে। কেশবপুর উপজেলার দু’শিক্ষা দপ্তরে তথ্য অধিকার আইনে আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এ উপজেলায় ১৫৮ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭৩ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১২টি কলেজ এবং ৫২টি দাখিল ও সিনিয়র মাদ্রাসা রয়েছে । এর মধ্যে ১৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, ৬২ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে, ৭ টি কলেজে ও ১৯ টি মাদ্রাসায় শহীদ মিনার রয়েছে। এর বাইরেও এ উপজেলায় বেশ কিছু কিন্ডার গার্টেন, প্রতিবন্ধী স্কুল, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী ও কওমী মাদ্রাসা রয়েছে। যার কোনটিতেই নেই শহীদ মিনার। এর ফলে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ জানাতে পারেন না। কর্মকর্তারা বলছেন, ৎুতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয়ভাবে অনুদান সংগ্রহ করে শহীদ মিনার নির্মাণ করার পরামর্শ দেয়া হয়। এরজন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। আর শিক্ষকরা বলছেন, স্থানীয়ভাবে অনুদান সংগ্রহ করা কঠিন ব্যাপার। তাছাড়া, একটি শহীদ মিনার নির্মাণে কয়েক হাজার টাকা দরকার। যা কোনোভাবেই স্থানীয়ভাবে জোগাড় করা সম্ভব না। শিক্ষাবিদরা বলছেন, সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন খাতে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছে। যার একটি বড় অংশ লুটপাট হয়ে যায়।। বহু স্কুলে এসব খাতের টাকার একটি অংশ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আর প্রধান শিক্ষকরা ভাগাভাগি করে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও কোনো কোনো স্কুলে বরাদ্দের পুরো অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ওইসব স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সততা আর দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণে এটি সম্ভব হয়। শিক্ষাবিদরা বলছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকার ভবন নির্মাণ করছে। অনেক স্কুলে অহেতুক ভবন করা হচ্ছে। অথচ শহিদ মিনার নির্মাণ করে দিচ্ছে না। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা বাবু বলেন, অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর ইট সাজিয়ে ও শ্রেণী কক্ষের বেঞ্চ দিয়ে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকেন। তবে এ দিনে প্রত্যেক বিদ্যালয়ে প্রভাত ফেরী ও আলোচনা সভা হয়। চলতি মাসে প্রধান শিক্ষকদের সভায় প্রত্যেক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আকরাম হোসেন খান জানান, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার থাকা উচিত। এ ব্যাপারে ইতিপূর্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। শহীদ মিনার নেই এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকেও অবগত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তুহিন হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য ও অমর একুশের চেতনা, মূল্যবোধ সম্পর্কে জানতে এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা উচিত। শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারি ভাবে বরাদ্দ না থাকায় অনেক স্কুলে তা নেই। তারপরও সব স্কুল কর্তৃপক্ষকে স্থানীয়ভাবে অর্থ জোগাড় করে শহীদ মিনার নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করা হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button