স্থানীয় সংবাদ

খুলনাঞ্চলে সিজিনাল তরমুজ চাষাবাদে ব্যস্ত চাষিরা

এবার খুলনাঞ্চলে সিজিনাল তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১২,৬১২ হেক্টর জমিতে, আবাদের অগ্রগতি ৩,১৮১ হেক্টর, চলছে বীজ বপণ ও পরিচর্যার কাজ

মোঃ আশিকুর রহমান ঃ খুলনাঞ্চলে রবি মৌসুমের আবাদকে ঘিরে গ্রীষ্মের কাঠ ফাটানো রৌদ্দুরে দেহের প্রশান্তি যোগানোর পাশাপাশি স্বল্প খরচে অধিক লাভবান হতে খুলনাঞ্চলের কৃষকেরা এখন চরম ব্যস্ত সিজিনাল তরমুজের চাষাবাদ ও পরিচর্যা নিয়ে। আগাম ফলন পেতে পুরাদমে চলছে সিজিনাল তরমুজের বীজ বপণ ও পরিচর্যার কার্যক্রম। বর্তমানে তরমুজ চাষীরা সিজিনাল তরমুজের যে বীজ বপণ করেছেন, তাতে আগামী ৩৫/৪০ দিনের মধ্যে ক্ষেতে ফুল আসা শুরু করবে বলে জানিয়েছেন একাধিক কৃষকেরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চল সুত্রে জানা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ ( রবি মৌসুম) অর্থ বছরে খুলনা অঞ্চলের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলায় সিজিনাল তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ১২,৬১২ হেক্টর জমি। অঞ্চল ভিত্তিতে খুলনাতে ১২,২২৫ হেক্টর, বাগেরহাটে ১৬২ হেক্টর, সাতক্ষীরাতে ২১৫ হেক্টর ও নড়াইলে ১০ হেক্টর জমি তরমুজ চাষাবাদের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারী (রবিবার) সংশিষ্ট সূত্রের, সর্বশেষ তথ্যনুসারে খুলনাঞ্চলে আবাদকৃত জমির অগ্রগতি হয়েছে ৩১৮১ হেক্টর জমি, যার অগ্রগতির হার ২৫.২%। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে খুলনাঞ্চলে রবি মৌসুমের সিজিনাল তরমুজের রোপন ও পরিচর্চার কার্যক্রম চলছে। চাষিরা এখন ব্যস্ত বীজবপণ ও পরিচর্চা নিয়ে। তাদের অপেক্ষা এখন আগাম প্রত্যাশিত ফলের। খুলনাঞ্চলে এ বছর পাকিজা, নাম্বার ওয়ান, বিগ পাঞ্জাব, ড্রাগন, ড্রাগন কিং, জাম্বু জাগুয়া, বিগ পাকিজা, সুপার , সুপার ড্রাগন, আইছমোর, পাকিজা, এশিয়ান টু, রিজেন্ট টু, এলটি শান্তি, বিগ ফ্যামিলি, গঙ্গা, ব্যাক ব্যারীসহ উন্নত জাতের তরমুজের চাষাবাদ করা হচ্ছে। এবার চাষিরা বৃষ্টিপাতের কারণে ফেব্রুয়ারী মাস হতে চাষাবাদ শুরু করছে, যার কার্যক্রমও চলমান। নির্ধারিত সময়ে চারা রোপণ করলে সঠিক পরিচর্চার মাধ্যমে ৬৫/৭০ দিনের মধ্যে তরমুজ বাজারজাত করণের উপযুক্ত হয়ে ওঠে। যে সকল কৃষক দেরীতে চারা রোপন করবে, তারা দেরীতে ফলন পাবেন।
খুলনার দাকোপ উপজেলার বাজুয়া এলাকার কৃষক বিধান মন্ডল জানান, এবার ৩০ বিঘা ৪টি ক্ষেতে জমিতে সিজিনাল তরমুজের বীজ রোপনের কার্যক্রম চলছে। এবার বৃষ্টিবাদল হওয়ার দরুন তরমুজের বীজ বপণে কিছুটা দেরী হয়েছে। আমি ৩২ বিঘা জমিতেই উন্নত মানের পাকিজা জাতের তরমুজের বীজ রোপন করছি। সাধারনত বীজ বপণের ৩৫/৪০ দিনের মধ্যেই ক্ষেতে ফুল আসা শুরু করবে। তারপর দেখতে দেখতে প্রত্যাশিত সিজিনাল তরমুজ বাজারে উঠবে। সঠিক পরিচর্চার মাধ্যমে নির্ধারিত সময়েই তরমুজ বাজারজাত করতে সক্ষম হবো বলে আশা করছি। দাকোপ উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান জানান, সিজিনাল তরমুজ চাষে দিনকে দিন কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। চর অঞ্চলের মতো আমাদের স্থানীয় অঞ্চলগুলোতে বর্তমান সময়ে সিজিনাল তরমুজ চাষে কৃষকরা দারুন লাভবান হচ্ছেন, যে কারণে সিজিনাল তরমুজ চাষে তাদের আগ্রহ। বর্তমানে তরমুজের বীজ বপণ ও পরিচর্চা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে দাকোপ উপজেলার তরমুজ চাষীরা। আমার নির্ধারিত দুটি বক্ল দাকোপে সাড়ে ৪’শ ও বাজুয়াতে ৭’শ, সর্বমোট প্রায় ১১৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষাবাদের কার্যক্রম চলমান। সময় মতো মাঠ পরিদর্শন করে পরমর্শ প্রদান, উঠান বৈঠক, সঠিক সময়ে ও সঠিক পরিমানে সার ও কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শসহ নিয়মিত মনিটরিং অব্যহত রয়েছে। এছাড়া ভ্রাম্যমান পরামর্শ কেন্দ্র’র মাধ্যমেও চাষিদের পরামর্শ প্রদান করাও হচ্ছে।
দাকোপ উপজেলার কৃষি অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, দাকোপ, বাজুয়া, পানখালি, লাউলোব, কৌলাসগঞ্জ, বানিয়া শান্তাহার ও তিলডাঙার কৃষকেরা সিজিনাল তরমুজ চাষাবাদ করে দারুন লাভবান হচ্ছেন, ইতোমধ্যে উপজেলার তরমুজ চাষের নির্ধারিত ব্লক গুলোতে চাষাবাদ ও পরিচর্যা চলছে। এবার আমার উপজেলায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে সিজিনাল তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। আশাবাদী বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা না দিলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণসহ এলাকার কৃষকেরা তাদের প্রত্যাশা পূরণেও সক্ষম হবো। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চল খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক মোহন কুমার ঘোষ জানান, খুলনাঞ্চলে এখন পুরাদমে চলছে সিজিনাল তরমুজ চাষাবাদের কর্মযজ্ঞ। এবছর খুলনাঞ্চলে সিজিনাল তরমুজের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ১২,৬১২ হেক্টর জমি। ইতোমধ্যে আবাদের অগ্রগতি ৩১৮১ হেক্টর জমিতে সম্পন্ন হয়েছে, হার ২৫.২%। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা না দিলে খুলনা অঞ্চলে সিজিনাল তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগের বেশি অর্জনে সক্ষম হবে বলে আমি আশাবাদি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button