স্থানীয় সংবাদ

দুই যুবককে পিটিয়ে আহত করেছে বনরক্ষীরা

মূমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি ঃ মোংলায় হরিণ শিকারের নামে মিথ্যা অভিযোগ এনে দুই যুবককে বালুর মাঠ ও দোকান থেকে ডেকে নিয়ে অফিসে আটকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে বনরক্ষীরা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে পুর্ব সুন্দরবনের চাদঁপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা রানা দেব ও তার বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ও স্বজনরা। পরে স্থানীয়দের তোপের মুখে রাত ১টার দিকে ছেড়ে দিলে, অচেতন হওয়া ওই যুবকদের মূমুর্ষ অবস্থায় উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে স্বজনরা। তবে বন বিভাগ বলছে, মারধর করা হয়নি, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে আনা হয়েছে অফিসে। ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনরা জানায়, বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারী) সন্ধ্যা রাতে বাসা থেকে বের হয়ে স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলেন বেল্লাল ও পাশের বালুর মাঠে ছিলেন নাইম নামের দুই যুবক। এ সময় পুর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা রানা দেব ও স্পীড বোট ড্রাইভার রাজা মিয়া সহ প্রায় ১০/১৫ জনের এক দল বনরক্ষী জয়মনির বটতলা এলাকায় গিয়ে তাদের ডেকে চাঁদপাই ফরেষ্ট রেঞ্জ অফিসে নিয়ে আসে। কিছুক্ষন পরে অফিসের মেইন গেট বন্ধ করে হরিণ শিকারের নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাদের হাত-পা বেধে ওই সকল বনরক্ষীরা বেধরক মারপিট করে। এতে গুরুতর আহত হয় ওই দুই যুবক বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ও স্বজনদের। মারধরের সময় বনরক্ষীদের হাতে-পায়ে ধরেও বন বিভাগের হাত থেকে রেহাই পাননি যুবকরা। দেখাও করতে দেয়া হয়নি পরিবারের স্বজনদের। রাত সাড়ে ৮টা থেকে এমন অমানবিক নির্যাতন চলে রাত পোনে ১টা পর্যন্ত। পরে এলাকাবাসীর তোপের চাপের মুখে রাত ১টার দিকে তাদের ছেড়ে দেয় রেঞ্জ কর্মকর্তা রানা দেব। পরে গুরুতর অবস্থায় রাত দেড়টার দিকে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তাদেরকে। বন বিভাগে এমন কর্মকান্ডে হতাশ জয়মনি জেলে পল্লী সহ গ্রামবাসীরা। আহত যুবক চিলা ইউনিয়নের জয়মনি এলাকার এছাহাক হাওলাদারের ছেলে বেল্লাল ও সোনাইলতলা গ্রামের আঃ সালাম হাওলাদারের ছেলে নাইম হেসেন। স্থানীয়রা জানায়, রাত ৯টার দিকে বেশ কয়েকজন নারী চাদঁপাই ফরেষ্ট অফিসের সামনে কান্নাকাটি করছিলেন। এসময় জিজ্ঞাসা করলে দুই যুবককে অফিসে আটকে রেখে মারধর করা হচ্ছে এমন কথা বলছে প্রথমে আমাদের অফিসে ডুকতে দিচ্ছিলোনা বনরক্ষীরা। পরে ফরেষ্টারদের কাছে জানতে চাইলে রাত ১টার দিকে ছেড়ে দেয় যুবকদের। পুর্ব সুন্দরবন চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা রানা দেব জানায়, ওই সকল যুবকদের বিরুদ্ধে হরিণ শিকারের অভিযোগে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের অফিসে ডেকে আনা হয়েছে, তবে মারধর করা হয়নি এবং তেমন কোন অভিযোগ না পেয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে’র মেডিকেল অফিসার ডাঃ মেহদী হাসান বলেন, বন বিভাগের মারধরে আহত দুই যুবককে শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাদের শরীরে তেমন ক্ষত না থাকলেও মারধরের আঘাতের ব্যাপক চিহ্ন রয়েছে। আহতদের মধ্যে একজন মরন ব্যাধি ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। তাই অতিরিক্ত মারধরে কিডনী ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এজন্য ৪৮ ঘন্টা পর্যবেক্ষনে রাখার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে বড় ধরনের সমস্যা আছে কিনা। যদি অবস্থার অবনতি হয় তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেলে পাঠানো হবে। গত বছরের ৩০ মার্চ জয়মনি জেলে বহরে গুলি বর্ষণ ও নিজ হাতে মারধরের অভিযোগে এর আগের রেঞ্জ কর্মকর্তাকে যোগদানের দেড় মাসের মাথায় প্রত্যাহার করেছিল বন মন্ত্রনালয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button