স্থানীয় সংবাদ

কলাপাড়ায় পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবে মহিষ পালন এখন বিলুপ্তির পথে

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : কলাপাড়ায় হারিয়ে যেতে বসছে ঐতিহ্যের মহিষ পালন। সময়ের পরিবর্তনে এখন আর চোখেই পড়ে না মহিষ পালন। দলবেঁধে ঘুরতে দেখা যায়না বিলে। বর্ষা মৌসুমে হালচাষে নেই মহিষের উপস্থিতি। দুধ আর মাংসের জন্য বিখ্যাত হলেও এখন আর নেই এসবের সহজলভ্যতা। একটা সময় গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে পারিবারিক খামারে মহিষ পালন দেখা যেত। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বিলে চোখ বুলালে দেখা যেত মহিষের পাল। দল বেঁধে খাওয়া আর বিলকে মাতিয়ে রাখাই ছিল মহিষের কাজ। গ্রামের মধ্যে যাদের জমি বেশি থাকত তাদের মহিষও বেশি থাকত। মহিষের দুধ আর মাংসের জন্য লালন-পালন করত তখনকার কৃষকেরা। হালচাষের জন্য ছিল মহিষের আলাদা কদর। তথ্য সূত্রে জানা যায়, কলাপাড়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবারে বাপ-দাদার পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। একদিকে মহিষের খাদ্য সংকট অন্যদিকে গ্রামগঞ্জের খাল দখলে পানি না থাকায় একেবারে হারিয়ে যেতে বসেছে মহিষ পালন। একটা সময় এলাকায় অনেক মহাজনের ৬০ থেকে ৭০টি মহিষ ছিল। বিভিন্ন গ্রামে অনেকেই মহিষ পালন করত। এখন অনেক পরিবারে ২০টির মত মহিষ আছে। তবে এখন খাবার পানির অভাবের কারনে মহিষ পালন করা যায়না। মহিষের খাবার কিনে খাওয়ানোও সম্ভব নয়। কমপক্ষে ২০টি মডিহষ পালনে প্রতিদিন ২মন খাবার ও ১মন পানির প্রয়োজন হয়। এখন আর মহিষ দিয়ে হাল চাষ হয়না। সব মিলিয়ে বিলুপ্ত প্রায় এ মহিষের এ জাতটি। সোমবার সরেজমিনে গ্রামে গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা একটা সময় মাঠে-ঘাটে-বিলে মহিষ ছেড়ে দিয়ে লালন পালন করতো। পুরো খালে-বিলে পানি আর ঘাসে পরিপূর্ণ থাকত। রোগ-বালাই কম হতো। বিশেষ করে হালচাল করার প্রধান মাধ্যম ছিল মহিষ। সকাল থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত টানা হালচাষ করা যেতো এ মহিষ দিয়ে। তখনকার সময় পাওয়ার টিলার ছিলোনা। খরচ লাগত কম হালচাষে। এখন আর মহিষ দিয়ে কেউ হালচাষ করেনা। যারা এখনো মহিষ লালন-পালন করে তারা খুব কষ্টে আছে। খাবার, পানি, চিকিৎসা সব মিলিয়েই মারাত্মক সংকটে ভুগে মহিষ পালনকারী মহাজনরা। হয়ত আরো কয়েক বছর পর কেউই আর মহিষ পালন করবেনা। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা বশির উদ্দিন বলেন, এখন রোগ বালাই হয় অনেক। বিশেষ করে খাবার সংকটের কারনেই মহিষ পালন করা প্রচুর কষ্টসাধ্য। আগে গ্রামের মাঠ-ঘাট, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় খোলা ছিল। ইচ্ছে মত মহিষ ছেড়ে দিতাম। এখন আর আগের মতো পানি ও ঘাস না থাকার কারনে আমরা মহিষ পালন অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। চাকামাইয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা জব্বার মিয়া জানান, মহিষ পালনে লাভবান হওয়া যায়। একটা ১বছর বয়সি মহিষের বাচ্চা ৫০-৬০ হাজার টাকায় বিক্রি সম্ভব। প্রতিদিন ৫-৬ কেজি দুধ দোহন করা সম্ভব। একটা মহিষ জবাই করলে প্রায় ৬মন গোস্ত মিলে এসবের পরও মহিষের খাবার, ঔষধ ও পানির সংকটে অনেক কৃষক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এ মহিষ পালনে। কলাপাড়া পশু চিকিৎসক আবু সাইদ জানায়, নীলগঞ্জসহ কলাপাড়ার কয়েকটি ইউনিয়নে হাতে গোনা ৩/৪টা পরিবারকে এখনো মহিষ পালন করতে দেখা যায়। তবে খাদ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজলভ্য হলে মহিষ পালনে আগ্রহ বাড়তে পারে এ এলাকার কৃষকদের। পটুয়াখালী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ফজলুল হক সরদার বলেন, মহিষ পালন একেবারে কমে যাচ্ছে ধারনা ভুল। কলাপাড়ায় দুটি উৎপাদন গ্রুপ আছে। প্রত্যেক গ্রুপে ৪০ জন সদস্য আছে। যেখানে প্রায় ১৩হাজার মহিষ আছে যা পারিবারিক খামাড়ে বেড়ে উঠছে। তবে বর্তমানে খাদ্য সংকট আছে এটা বাস্তবতা। আমরা এলাকার বিভিন্ন মুজিব কিল্লা ও পরিত্যক্ত জঙ্গলে ঘাস উৎপাদন করা যায় কিনা এ ব্যপারে পদক্ষেপ গ্রহন করবো।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button