স্থানীয় সংবাদ

খুমেক হাসপাতালের প্রসুতি বিভাগ থেকে বিপুল পরিমাণ ওষুধ উদ্ধার

বিভাগের শ্রেণী কক্ষ থেকে ওষুধ উদ্ধার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, আজ তদন্ত কমিটি গঠন

কামরুল হোসেন মনি ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল থেকে ওষুধ পাচারের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। প্রসুতি গাইনী বিভাগের লেবার ইউনিট-৪ এর ক্লাশ রুম থেকে বিপুল পরিমান তিন প্রকার ইনজেকশন (ওষুধ) জব্দ করে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। ওষুধগুলো হচ্ছে ইনজেকশন সেফট্রিয়াক্সো দুই গ্রাম ১০০ পিস, ইনজেকশন ওমেপ্লাজল (১০০ মি:) ১১০ পিস এবং ইনজেকশন ন্যালেকসিন ১২০ পিস। হাসপাতাল কর্তৃৃপক্ষ ওষুধগুলো জব্দ করে ওই রুমে তালা মেরে দেন। স্টোর রুমে ওষুধগুলো না রেখে ক্লাশ রুমে কিভাবে আসল এ বিষয়ে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। তবে স্টোর রুম থেকে ওই ওষুধ পাচারের উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে। গত রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ওষুধগুলো উদ্ধার করেন। এ ব্যাপারে খুমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: মো: হুসাইন শাফায়াত বলেন, আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমি ছুটিতে ঢাকায় অবস্থান করছি। অফিসের এসেই এ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। আজ ( মঙ্গলবার) আমি অফিসে এসে এ বিষয়ে তদন্ত কমটি গঠন করব। এর সাথে যেই দোষী সাব্যস্ত হবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি পরিচালক নিয়াজ মোস্তাফি চৌধুরি বলেন, হাসপাতালের নার্সদের সুপারিন্টেডেন্টের নিকট হতে বিষয়টি আমি অবহিত হই, যে ক্লাশ রুম থেকে তিন প্রকার ওষুধ জব্দ করা হয়। তবে ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। গত রোববার প্রসুতি বিভাগের ক্লাশ রুমের একটি খাটের ওপর ঢাকা অবস্থায় ইনজেকশন সেফট্রিয়াক্সোন দুই গ্রাম ১০০ পিস, ইনজেকশন ওমেপ্লাজল (১০০ মি:) ১১০ পিস এবং ইনজেকশন ন্যালেকসিন ১২০ পিস লুকানো অবস্থায় ছিলো। হাসপাতালের স্টোর রুমে সংরক্ষন না করে, ক্লাশ রুমে ওষুধ রাখায় পাচারের বিষয়টি সামনে চলে আসে। খুমেক হাসপাতালের প্রসুতি বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ডা: ডালিয়া পারভিন বলেন, বিষয়টি আমাকে হাসপাতাল থেকে অবহিত করার পর, আমি ডিডি স্যারকে বিষয়টি বলার জন্য নির্দেশ দেই। ওই দিন আমি খুব ব্যস্ত ছিলাম। পরে এ বিষয় নিয়ে কি উদ্যোগ নেওয়া হইেেছ বিষয়টি আমি অবগত নই। খুমেক হাসপাতালের সুপারিন্টেডেন্ট রোকেয়া খাতুন বলেন, ওখানে ওষুধ যাওয়ার কথা না, কারণ ওইটা ইন্টার্নী চিকিৎসকদের ক্লাশ রুম। বিষয়টি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা পান। জানা যায়. গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রসুতি বিভাগে লেবার ইউনিট-৪ জন্য সংশ্লিষ্ট ইনচার্জ রোগীদের জন্য ওষুধের চাহিদাপত্র দেন। ওই চাহিদা পত্রে ন্যালেকসিন ১৫০ পিস, ইনজেকশন সেফট্রিয়াক্সো দুই গ্রাম ৩০০ পিস। চাহিদাপত্র অনুযায়ী এ সব ওষুধ স্টোর থেকে দেওয়া হয়। এর আগের সপ্তাহে চাহিদাপত্র ছিলো ইনজেকশন ন্যালেকসিন ১৫০ পিস, ইনজেকশন সেফট্রিয়াক্সো দুই গ্রাম ২০০ পিস, ইনজেকশন ওমেপ্লাজল (১০০ মি:)। এগুলো হাসপাতালের ওষুধ স্টোর খেকে সরবরাহ করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে প্রতিদিন গড়ে ১২-৭৬ জন গর্ভবতী মহিলা ওই লেবার ইউনিটে ভর্তি থাকেন। যেদিন ওই লেবার ইউনিট-৪ এর ক্লাশ রুম থেকে তিন প্রকার ইনজেকশন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জব্দ করেন। ওই দিন ওই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি ছিলো ৫১ জন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ফার্মেসী দোকানীরা জানান, ইনজেকশন সেফট্রিয়াক্সো এক পিস ইনজেকশনের দাম (এমআরপি ) ৩৩০-৪৮০ টাকা। সে হিসেবে ১০০ পিস বাজারমূল্য হতে পারে ৪৮ হাজার টাকা, ন্যালেকসিন ইনজেকশন এক পিস এর দাম (এমআরপি ) ৭০ টাকা। সে হিসেবে ১২০ পিসের দাম পড়ে ৮ হাজার ৪০০ টাকা এবং ইনজেকশন ওমেপ্লাজল (১০০ মি:) এক পিস ৭০-১২০ টাকা। সে হিসেবে ১১০ পিস মুল্য পড়ে ১৪ হাজার ৪০০ টাকা। সেই হিসেবে ওই তিন প্রকার ইনজেকশন বাজার মূল্য দাড়ায় ৭০ হাজার ৮০ টাকা পড়ে। অনেক সময় গর্ভবতীর খিচুনির উঠলে ন্যালেকসিন ইনজেকশন রোগীর স্বজনরা বাইরে ফার্মেসী থেকে কিনতে গেলে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়। তখন রোগীরা বাধ্য হয়ে ওই দামে কিনতে বাধ্য হয়। জানা যায়, সরকারি স্টাফ ক্লিনার আনোয়ারার মাধ্যমে এরসাথে যোগসাজোস রয়েছে। কারন এদের মাধ্যমেই হাসপাতালে ওষুধগুলো পাচার করা হয়। তবে আনোয়ারা এ বিষয়টি সাথে জড়িত নয় বলে তিনি দাবি করেন। এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ইমার্জেন্সী ওটি (অপারেশন থিয়েটার)তে মজুদ করা বিপুল পরিমান ওষুধ ও মালামালসহ আউট সোর্সিং কর্মচারি মোসাম্মাৎ মনিরা বেগমকে আটক হওয়া ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে ওষুধ চুরি প্রমানিত হওয়ায় আটক আউট সোর্সিং কর্মচারি মোসাম্মাৎ মনিরা বেগমকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওটি ইনচার্জে ক্লিনার পদে অপর দুই আউটসোর্সিং কর্মচারি জাহিদ ও মুকুলী বেগমকেও চাকরিচ্যুত করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। একই সাথে দায়িত্ব অবহেলা করার কারণে ওটি ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স সেলিমা ইয়াসমিন দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। ওই সূত্র মতে, ওটি থেকে ওষুধ চুরি করা আউটসোর্সিং মনিরা বেগম একার পক্ষে সম্ভব না। যেহেতু সে হাতেনাতে ওষুধসহ আটক হয়েছে বলেই বিষয়টি ধরা পড়ে। এর আগে ওটি থেকে বছরের পর বছর গরীব রোগীদের ওষুধ ও সরকারি ওষুধ বাইরে পাচার হয়ে আসছিলো।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button