খুমেক হাসপাতাল বার্ন অ্যান্ড প্লাষ্টিক সার্জারি বিভাগে ধারন ক্ষমতার তিনগুন রোগী : গজসহ নানা সংকটে
খুমেক হাসপাতালে অনিয়ম-অবহেলা চরমে, দেখার কেউ নেই (পর্ব-৭)

৫০ দিনে মৃত্যু-৭ জন, ভর্তি ১৯২ জন
কামরুল হোসেন মনি ঃ শীতকালীন সময়ে আগুনে পোড়া রোগীরা বেশি আসে। এ সময়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে বার্ন অ্যান্ড প্লাষ্টিক সার্জারি বিভাগে ধারণক্ষমতার তিনগুন রোগী বেশি নিয়ে চলছে। আছে গজ সহ নানা ওষুধের সংকটও। ফলে সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী রোগীদের। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে মোট রোগী ভর্তি ছিলো ১২৫ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয় ৩ জন মহিলার এবং ফেব্রুয়ারি ১৯ তারিখ সকাল ১১টা পর্যন্ত ভর্তি ছিলো ৬৭ জন এবং এ সময়ের মধ্যে মৃত্যু হয় ৪ জন মহিলার।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে অনুমোদিত শয্যা সংখ্যা রয়েছে ২০টি। এছাড়া অতিরিক্তি শয্যা রয়েছে আরো ১৭টি। এ নিয়ে মোট বর্তমানে শয্যা ৩৭টি। কিন্তু রোগী ভর্তি থাকে তিনগুনের মতো। খুমেক হাসপাতালের লেলিন স্টোর কিপার মো: বদরুজ্জামান বলেন, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রেন্ডারের পর গজ, ব্যান্ডেজ ও তুলা সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে গজ ৫ হাজার থান, ব্যান্ডেজ ৫ হ্জাার থান এবং তুলা সরবরাহ করা হয় ৩ হাজার ১৫৬ রোল। চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্টকে মাল ছিলো গজ ২৮৮ থান, ব্যান্ডেজ ৬৩০ থান এবং তুলা ৫৫৪ রোল। তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে গজ ৩০০ থান, ব্যান্ডেজ ৩০০ থান এব্ং তুলার চাহিদা ছিলো ১৫০ রোল। মাস খানেক ধরে এখন ওই সব চাহিদার তুলনায় মালামাল অল্প রয়েছে। এর মধ্যে গজের সংকট রয়েছে বেশি। তবে চাহিদা মতো আমরা সবকিছু সরবরাহ করতে পারছি না। নতুন করে টেন্ডার হলে আবার পর্যাপ্ত সব কিছু পাওয়া যাবে।
খুমেক হাসপাতাল বার্ন অ্যান্ড প্লাষ্টিক সার্জারি ইউনিটের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স নাজমা খাতুন বলেন, চলতি বছরে জানুয়ারি মাসে মোট রোগী ভর্তি ছিলো ১২৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভর্তি ছিলো ৬৬ জন। বাকিরা মহিলা ও শিশু। এ মাসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ৩ জন মহিলা। ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ পর্যন্ত ভর্তি ছিলো ৬৭ জন। এ সময়ের মধ্যে মৃত্যু ৪ জন মহিলার। তিনি বলেন, চাহিদা তুলনায় গজ, হ্যান্ডগ্লাপস সহ নানা সংকট রয়েছে। এ রকম প্রায় এক মাস ধরে সংকটে আছি। এই বিভাগে অনুমোদিত শয্যা সংথ্যা ২০টি। এছাড়া অতিরিক্ত আরও শয্যা রয়েছে ১৭টি। বতর্মানে শয্যা সংখ্যার চেয়ে বেশির ভাগ রোগী তিনগুন বেশি থাকে। প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ জন রোগী ভর্তি থাকে।
রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, গজ, ব্যান্ডেজ ও তুলা সংকট রয়েছে। প্রতিদিন সবাই প্রয়োজনের তুলনায় গজ, ব্যান্ডেজ ও তুলা পাচ্ছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। এছাড়া অপর্যাপ্ত জনবলের পাশাপাশি যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতাও রয়েছে।
খুমেক হাসপাতালের সূত্র মতে, এই হাসপাতালের ষষ্ঠ তলায় ২০১৪ সালে ২০টি বেড নিয়ে চালু হয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। সহকারী অধ্যাপক ডা: মো. তরিকুল ইসলামের প্রচেষ্টায় তা ৩৬ বেডে উন্নীত হয়। বেডের বাইরে বারান্দায়, লিফটের সামনে মানুষের হাঁটার রাস্তায়ও রোগীতে পূর্ণ থাকে। এ অবস্থায় নিয়মিত রাউন্ড দেওয়ার কাজেও একজন চিকিৎসককে বেগ পেতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রোগী বলেন, ১০ দিন আগে রান্না ঘরে চুলার থেকে শাড়িতে আগুন ধরে যায়। আগুনে তার শরীরের নিচের অংশ ঝলসে যায়। এখানে চিকিৎসার জন্য আসেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। ওষুধ সরবরাহ না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। ড্রেসিংও ঠিকমতো করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে রোগীদের ড্রেসিংয়ের জন্য অতি প্রয়োজনীয় গজ, বেয়োনেট চাহিদার তুলনায় সংকট রয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: মো: হুসাইন শাফায়াত বলেন, বর্তমানে গজ, ব্যান্ডেজ, তুলাসহ কিছু ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। এটা হয়ে গেলেই আশাকরি ওইসব সংকট আর থাকবে না।