খুমেক হাসপাতালে কিডনি বিভাগে ১০ ডায়ালাইসিস মেশিনে ৫ মাসে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস ৫৭১

রোগীদের ব্যয়বহুল বায়োপসি ও ক্যাথেটার পরীক্ষা ফ্রি, বেসরকারিভাবে ক্যাথেটার ১৫ হাজার এবং বায়োপসিতে খরচ ২৫ হাজার টাকা, অসহায় ও দরিদ্র রোগীরা স্বস্তির নি:শ্বাসে
কামরুল হোসেন মনি ঃ বেসরকারিভাবে কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। এই চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হয় নি¤œ ও মধ্যবিত্ত পরিবারদের। গতকাল রোববার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি বিভাগে রোগী ভর্তি ছিলো ৩৩ জন। এছাড়া এ পর্যন্ত পুরুষ ও মহিলা মিলে ৫৭১ জনের ডায়ালাইসিস করানো হয়েছে। জনপ্রতি কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস করতে প্রয়োজন হয় সরকারিভাবে মাত্র ৪০০ টাকা। এছাড়া কিডনি রোগীর বায়োপসি ও ডায়ালাইসিস (ক্যাথেটার) ফ্রি ভাবে করানো হচ্ছে। যা বেসরকারি ভাবে বায়োপসি করতে একজন রোগীর প্রয়োজন হতো ২৫ হাজার টাকা এবং ডায়ালাইসিস খরচ হতো (ক্যাথেটার) ১৫ হাজার টাকা। এই দুটি জিনিসের পরীক্ষা ফ্রিভাবে চালু হওয়াতে অসহায় ও দরিদ্র রোগীরা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলছেন। যা দরিদ্র রোগীর পরিবারের ক্ষেত্রে খরচটা কষ্টসাধ্য।
খুমেক হাসপাতালের কিডনি বিভাগের সূত্র মতে, ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর খুমেক হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ শয্যা নিয়ে কিডনি বিভাগ যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে অনুমোদিত শয্যা সংখ্যা রয়েছে ২৩টি। গতকাল বৃহস্পতিবার ওই বিভাগে রোগী ভর্তি ছিলো ৩৩ জন। এর মধ্যে স্বেচ্ছায় চলে গেছেন দুইজন রোগী।
ডায়ালাইসিস ইউনিটের ইনচার্জ সিনিয়ার স্টাফ নার্স রোজী আক্তার বলেন, ২০২৩ সালের অক্টোবরের ১৫ তারিখ থেকে ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন নিয়ে এই ইউনিট যাত্রা শুরু করে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট পুরুষ ও মহিলা মিলে ৫৭১ জনকে ডায়ালাইসিস করানো হয়েছে। তিনি বলেন, ১০টি ডায়ালাইসিস এর মধ্যে একটি ডায়ালাইসিস মেশিন ‘বি’ ভাইরাস রোগীদের জন্য রাখা হয়েছে। প্রতিদিন দুই শিফটে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস করানো হচ্ছে। সকাল ও বিকেল মিলে।
এ ব্যাপারে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: মো: হুসাইন শাফায়াত বলেন, কিডনী বিভাগে প্রথমে আমরা ৪টি ডায়ালাইসিস মেশিন দিয়ে যাত্রা শুরু করি । এখন ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন চলমান আছে। সরকারিভাবে ৪০০ টাকায় কিডনী রোগীদের ডায়ালাইসিস করানো হচ্ছে। ভবিষ্যতে কিডনী রোগীর শয্যা ও ডায়ালাইসিস মেশিনের সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।
খুমেক হাসপাতালের কিডনি বিভাগে সহকারি রেজিস্ট্রার ডা: সিদ্ধার্থ বাওয়ালী এ প্রতিবেদককে বলেন, খুমেক হাসপাতালে কিডনি বিভাগ চালু হওয়াতে অসহায় ও দরিদ্র রোগীরা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলছেন। কারণ বেসরকারিভাবে কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। একজন কিডনি রোগীর বায়োপসি করতে হলে বেসরকারিভাবে খরচ হতো ২৫ হাজার টাকা। আমরা ওই বায়োপসি কিডনি রোগীদের বিনা খরচে করে দিচ্ছি। এছাড়া ডায়ালাইসিস (ক্যাথেটার)ও করছি ফ্রি ভাবে যা বাইরে থেকে করতে গেলে ১৫ হাজার টাকা খরচ পড়তো। তিনি বলেন, কিডনি বিভাগে তিনি ছাড়াও রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন সহকারি অধ্যাপক ( নেফ্রোলজি) ডা: পলাশ তরফদার ও রেজিষ্টার ডা: মিঠুন দেবনাথ। সহকারি রেজিস্ট্রার ডা: সিদ্ধার্থ বাওয়ালী বলেন, হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা: নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী ওই সময়ে এই কিডনি বিভাগ রোগীদের সেবার জন্য সরকরিভাবে যা যা প্রয়োজন সব কিছুতেই তার সহযোগিতা বেশি ছিলো। যার কারণে খুব দ্রুতভাবে কিডনি রোগীদের সেবার মান দিনকে দিন উন্নিত হয়েছে। তিনি বলেন, কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস করার জন্য সরকারিভাবে নামমাত্র ৪০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। যা সব সরকারি হাসপাতালে একই খরচ নেয়।
কিডনি রোগীর একাধিক আত্মীয়রা জানান, খুলনা জেলাতে কিডনি রোগীদের অসহায়ত্ব দিন দিন বাড়ছে। কারণ কিডনি রোগের চিকিৎসা খুব ব্যয়বহুল। খুলনায় মোট আক্রান্ত রোগীর খুব কম সংখ্যকই সরকারিভাবে সেবা পায়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিডনি বিভাগ চালু হওয়াতে এবং কিডনি রোগীর বায়োপসি ও ডায়ালাইসিস (ক্যাথেটার) ফ্রি ভাবে করাতে আমাদের মতো অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের জন্য বড় পাওয়া। যারা কিডনি রোগী, তার পরিবারই শুধুই জানে এই রোগে চিকিৎসা সেবা কতটা ব্যয়বহুল।