স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় হিমায়িত চিংড়ি শিল্প এখন ঝুঁকিতে

২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৬ মাসে আমাদের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে ৯ হাজার ৭১ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য এক হাজার ২১ কোটি টাকা। আমাদের ঘাটতি পড়েছে ৫৬৫ কোটি টাকা, ইউরোপ আমেরিকার বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ার মূল কারণ হিসেবে মাছের উৎপাদন ঘাটতিকেই দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান : করোনা পরবর্তী সময়ে ধাক্কা না কাটতেই রাশিয়া ইউক্রেনের দীর্ঘ যুদ্ধে তৈরি হয় বৈশিক মন্দা। যার প্রভাব পড়েছে সাদা সোনা খ্যাত দেশের হিমায়িত চিংড়ির রপ্তানি খাতে। ফলে বিগত কয়েক বছর ধরে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিতে ভাটা পড়েছে। এতে রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি দেশ হারাচ্ছে রপ্তানি বাজার। এদিকে, ক্রয় আদেশ কম পাওয়ায় এরই মধ্যে লোকসানে পড়েছে রপ্তানিকারকরা। পাশাপাশি ব্যহত হচ্ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও। এক সময় দারুন সম্ভাবনা জাগানো এ শিল্প এখন অনেকটা ঝুঁকিতে। ইউরোপ আমেরিকার বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ার মূল কারণ হিসেবে মাছের উৎপাদন ঘাটতিকেই দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সেক্টরের সঙ্গে জড়িতদের সূত্র জানান, গেল অর্থ বছরে এই খাত থেকে আয় হয়েছিলো ৩ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে এ খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য মাত্রাছিলো ১ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। কিন্তু চিংড়ি রপ্তানির অন্যতম বড় বাজার ইউরোপ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে প্রথম ৬ মাসে রপ্তানি হয়েছে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ২০ দশমিক ৩৭ ভাগ কম। আর চলতি অর্থ বছরে এ আয়ের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। রপ্তানিকারকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক অনেক বাজারে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে রপ্তানি করছে পারছে না। এ অবস্থা নিরসনে সমনন্বয়হীনতাকে দায়ি করছেন তারা। তাদের ভাষায়- এখান থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো এবং এসব ক্ষেত্রে আমাদের নতুন নতুন যায়গায় ব্যবসা তৈরি করতে হবে। নতুন বায়ার খুঁজতে হবে। আমাদের এখানে সী ফুডস ফেয়ার করতে হবে। যাতে বিদেশ থেকে বায়াররা এসে দেখতে পারে আমরা কি ধরণের প্রডাকশন তৈরি করছি এবং রপ্তানি করতে আমরা ইচ্ছুক।
এদিকে, রপ্তানি আয় বাড়াতে ও প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হিমায়িত চিংড়ি ব্যবসায়ীদের নতুন নতুন বাজার খোজার তাগিদ দিচ্ছেন মৎস্য বিভাগ। সী ফুড বায়িং এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর মহাসচিব সুজন আহমেদ জানান, এবার ১শ’ কনটেইনারের নিচে আমরা বড়দিন এবং হ্যাপি নিউ ইয়ার উপলক্ষে বিক্রি করতে পেরেছি। সেখানে আমাদের অটোমেটিক রাজস্ব কমে গেছে। এছাড়া প্রায় ২শ’ কোটি টাকার শিপমেন্ট থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি। খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৬ মাসে আমাদের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে ৯ হাজার ৭১ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য এক হাজার ২১ কোটি টাকা। আমাদের ঘাটতি পড়েছে ৫৬৫ কোটি টাকা। খুলনা জেলা মৎস্য অফিসার জয়দেব পাল জানান, চিংড়িকে ভ্যালুয়েডেট প্রোডাক্ট হিসেবে বিশ্ব বাজারে উপস্থিত করলে পারলে রপ্তানি আরো বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া বাগদা চিংড়ির ব্রান্ডিং যদি আমরা করতে পারি তাহলে বহির্বিশ্বে হোয়াইট গোল্ড’র সুনাম ও চাহিদা দু’টোই বৃদ্ধি পাবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button