খুমেক হাসপাতালে ওষুধ চুরি করে পাচারের সময় স্বামী-স্ত্রী আটক : থানায় মামলা

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল থেকে ওষুধ চুরি করে পাচারের সময় হাসপাতালের ফ্রি সার্ভিস সালেহা বেগম ও তাঁর স্বামী আব্দুর রাজ্জাককে আটক করা হয়েছে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ওষুধ জব্দ করা হয়। পরে তাঁদের সোনাডাঙ্গা থানায় সোপর্দ করে মামলা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল রোববার দুপুরে ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন) থেকে ওষুধ চুরি করে পাচারের সময় হাসপাতালে নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাদেরকে আটক করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তাদেরকে সোপর্দ করা হয়। হাসপাতাল কতর্ৃৃপক্ষ সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে। পরে পুলিশ এসে তাদেরকে ওষুধসহ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় হাসপাতালে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: ইখতিয়ার উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: মো: হুসাইন সাফায়াত বলেন, সরকারি ও বেসরকারি ওষুধ চুরি করে পাচারের সময়ে হাসপাতালে নিরাপত্তা নিয়োজিত আনসার সদস্যরা দুইজনকে আটক করেছেন। পরে তারা আমার কাছে নিয়ে আসেন। আমি সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশকে অবহিত করার পর পুলিশ তাদেককে আটক করেছেন। আটক সালেহা বেগম এক সময়ে আউটসোসির্ং হিসেবে কর্মরত ছিলো বলে আমি জানতে পেরেছি। এখন সে ফ্রি সার্ভিস হিসেবে কাজ করছিলো। আটক দুইজনকে থানায় সোপর্দ করে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের তদন্তে এর সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাঁরাও আইনের আওতায় আসবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে হাসপাতালের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
সোনাডাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হাই বলেন, ওষুধ চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই নারী ও তাঁর স্বামীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। পরে হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ইখতিয়ার উদ্দিন বাদী হয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, আমি থানায় আছি। ওষুধসহ আটকের বিরুদ্ধে হাসপাতালের পক্ষ থেকে আমি বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করছি। আটককৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ওষুধের মধ্যে ছিলো সরকারি ও বেসরকারি ওষুধের মধ্যে কেনোলা/এনজি টিউব ৬ পিস, ওমিপ্রাজল ইনজেকশন ৫ পিস, জেসোকিন জেলি ৬পিস , ডিসটিল ওয়াটার ৭ পিস, নেবুলাইজার মাক্স-২ পিস, জি,টি,এন, স্প্রে একটি ও মাল্টিভিটামিন এক বক্স।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনসার সদস্য কমান্ডার ইনচার্জ ( পিসিআর) মো: মাহাবুল ইসলাম বলেন, গতকাল রোববার দুপুরে হাসপাতালে নিয়োজিত আনসার সদস্য জরুরি বিভাগের সামনে দায়িত্ব পালন করছিলো। এ সময়ে সালেহা ও তার স্বামী আব্দুর রাজ্জাক কে তার হাতে ব্যাগ দেখে চলাফেরায় সন্দেহ হলে তল্লাশি চালায়। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে সরকারি ওষুধসহ আটক করা হয়। পরবর্তীতে তাদেরকে আটক করে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। জানা গেছে, সালেহা ২০২২ সাল পর্যন্ত ওই হাসপাতালে আউটসোর্সিং আয়া হিসেবে ওই ওয়ার্ডে কাজ করতেন। বর্তমানে ফ্রি সার্ভিস কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
৫ ও ৬ নম্বর ওয়াডের্র (মেডিসিন) ইনচার্জ তপতি ঢালী বলেন, সালেহা আগে আয়া হিসেবে কর্মরত ছিলো। সে কয়েকদিন ধরে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলো। ওই সব জব্দ করা ওষুধের মধ্যে বেসরকারি ওষুধই বেশি। সরকারি ওষুধ কম পাওয়া গেছে। আমি এ বিষয়ে আর কিছুই জানি না। ওষুধগুলো আমার এখান থেকে চুরি করা বা ওর ওষুধ কি না আমি তা বলতে পারবো না। একটি সুত্র জানায়, ওই সালেহার মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে ওই ওয়ার্ড থেকে ওষুধ পাচারের কাজ করা হতো। বিষয়টি তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে এর সাথে আর কে বা কারা জড়িত আছেন। তবে ওই সালেহার একার পক্ষে হাসপাতাল থেকে ওষুধ চুরি করে পাচার করা সম্ভব নয়। এর সাথে হাসপাতালে স্টাফ, নার্সসহ আরও অনেকেই জড়িত রয়েছেন বলে ওই সূত্রটি দাবি করেছেন। অপর একটি সূত্র দাবি করে, উল্লিখিত ওষুধ আটক এর চেয়ে বেশি ; লোকজন আসার আগেই ওই সব ওষুধ সরিয়ে ফেলা দেওয়া হয়েছে।
খুমেক হাসপাতাল সূত্র মতে, গত ১ মার্চ প্রসুতি বিভাগের অপারেশন টেবিলের নিচ থেকে বিপুল পরিমান সরকারি ওষুধ জব্দ করা হয়। ওই ঘটনার পর ওষুধ চুরি ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আজ ৫-৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ওষুধ চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁদের হাতেনাতে আটক করেন কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের নভেম্বর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি অপারেশন থিয়েটারে মজুদ করা বিপুল পরিমাণ ওষুধ ও মালামালসহ আউট সোর্সিং কর্মচারী মনিরা বেগমকে আটক করেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির নিয়োজিত আনসার সদস্যরা। তাঁর দেওয়া তথ্য মতে, ১৪টি ড্রয়ার থেকে ৪২ ধরনের বিপুল পরিমাণ রোগীদের ওষুধ জব্দ করা হয়। এরপর গঠিত তদন্ত কমিটি তাঁদের প্রতিবেদনে অভিযুক্ত আউট সোর্সিং কর্মচারীকে বরখাস্ত ছাড়াও অন্য দু’জন আউট সোর্সিং কর্মচারী জাহিদ ও মুকুলকে চাকুরিচ্যুত করার সুপারিশ করেন। তবে ওটি ইনচার্জ নার্সকে শুধু কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওষুধ চুরির সঙ্গে জড়িতদের বড় কোনো শাস্তি না হওয়ায় বারবার একই অপরাধ ঘটছে।