স্থানীয় সংবাদ

রক্ত মাখা শার্টের সূত্র ধরেই পুলিশের অভিযান : আটক ৫

সংবাদ সম্মেলনে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার

আদালতে এক সজনে চোর হত্যাকারীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

স্টাফ রিপোর্টার ঃ গাছ থেকে সজনে পাড়তে দেখে ফেলায় মৎস্য ঘের মালিক মো. আমিনুর শেখকে (৪৪) হত্যা করা হয়েছে। আর সজনে বাগানে রেখে যাওয়া রক্তমাখা শার্টের সূত্র ধরে হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান। পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মলনে হত্যাকা-ের বর্ণনা তুলে ধরা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, বটিয়াঘাটা উপজেলার ফরিদুল্লাহ ওরফে ফরিদ, শাহনি মোড়ল, নয়ন শেখ, মো. ফারুক শেখ ও আলী মুনসুর মোড়ল। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত মার্চ সকালে জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে বটিয়াঘাটা থানাধীন সুরখালী ইউনিয়নের গাওঘরা গ্রামের একটি বাগানে মো. মালেক শেখের ছেলে আমিনুর শেখের অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় বটিয়াঘাটা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান জানান, ক্লুলেস হত্যাকা-ের ঘটনায় বটিয়াঘাটা থানা পুলিশ এবং জেলা গোয়েন্দা শাখার চৌকস টিম দ্রুততম সময়ে এই ঘটনার মূলরহস্য উন্মোচন করেছে। তিনি আরও জানান, আমিনুর শেখ কৃষি কাজ ও মৎস্য ঘের করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এবং তার মাছের ঘেরের সঙ্গে একটি সজনে বাগান রয়েছে। তিনি গত ১৫ মার্চ রাতের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় ১৭ মার্চ বটিয়াঘাটা থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়েছিল। একইদিন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি চৌকস টিম ভদ্রা নদীর পাড়ে ঘেরের বেড়ার ভিতরে গোজা একটা রক্ত মাখা শার্ট উদ্ধার করে। এই রক্ত মাখা শার্টের সূত্র ধরেই পুলিশ অভিযান শুরু করে। এ ঘটনায় গত বুধবার ভোর রাতের দিকে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ফরিদুল্লাহ শেখ ওরফে ফরিদকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে রক্ত মাখা শার্টটি তার বলে জানায় এবং ঘটনা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলেন, ঘটনার দিন গত ১৫ মার্চ ফরিদ, শাহিন, নয়ন ও ফারুক রাত সাড়ে ৭টার দিকে শাহিনের বাড়ির পিছনে কঁচুবাগানে বসে গাঁজা খায়। এরপরে ফরিদ, শাহিন এবং নয়ন ৩ জন মিলে আমিনুরের ঘেরে চুরি করে সজনে পাড়তে যায়। ফরিদ সজনে পাড়তে গাছে উঠে। তখন শাহিন এবং নয়ন গাছের নিচে অবস্থান করে। তারা দু’জনে সজনে কুড়িয়ে সাদা প্লাস্টিকের বস্তায় ভরতে থাকে। হঠাৎ আমিনুর টর্চ লাইট মারে এবং তাদের দেখে ফেলে। তখন আমিনুর তাদের ধাওয়া দেয়। তারা সজনে ফেলে সেখান থেকে দৌড়ে চলে যায়। এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে তারা ৩ জনে ওতপেতে থাকে আমিনুরের অপেক্ষায়। কিছুক্ষণ পর আমিনুর ঘেরের কুড়ে ঘরে ঢুকতে গেলে প্রথমে নয়ন পিছন থেকে মাফলার দিয়ে নাকে মুখে প্যাচ দিয়ে বেঁধে ফেলে। ফরিদ এবং শাহিন হাত-পা ধরে ভদ্রা নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। শাহিনের সঙ্গে থাকা লোহার পাইপ নিয়ে ফরিদ প্রথমে মুখের চোয়ালে একটা বাড়ি দেয়। সেই বাড়ি মারার কারণে রক্ত ছিটে ফরিদের শার্টে লাগে। তখন তারা লোহার রড দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গা মারে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুষি দেয়। তাদের মারপিটের একপর্যায়ে আমিনুর মারা যায়। তখন ফরিদ ভয়ে তার রক্ত মাখা শার্টটি ঘেরের পাশে বেড়ায় ফেলে দেয়। পরে নিহত আমিনুরের মৃতদেহকে তুলে জনৈকা কৃষ্ণা প্রামাণিকের বাগান ভিটার ঝোপের ভিতর নিয়ে গিয়ে শরীরে কেমিক্যাল লাগিয়ে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ফরিদকে আদালতে হাজির করা হলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। স্বীকারোক্তি মোতাবেক বটিয়াঘাটা থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে তথ্য প্রযুক্তি ও সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ঘটনায় সম্পৃক্ত শাহিন, নয়ন এবং ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আলী মুনসুর মোড়লকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মালামাল জব্দ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার ও এসএম আল-বেরুনী।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button