চারি দিকে পানি থাকলেও কয়রায় মিলছেনা সুপেয় খাবার পানি
আজ বিশ্ব পানি দিবস
রিয়াছাদ আলী, কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি ঃ উপকুলীয় জনপদ কয়রায় চারিদিকে শুধু পানি আর পানি তবুও মিলছেনা খাবার পানি। পানি থাকলেও তা লবনাক্তায় ভরপুর। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিনিয়ত আঘাত হানছে এ জনপদে। পরিবেশের বৈরী প্রভাব এখানকার জনসাধারন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। পানি দিবসে সুপেয় পানি পাওয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছে তারা। খুলনার কয়রা উপজেলায় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার প্রত্যন্ত এ জনপদগুলোয় গ্রামের পর গ্রাম মিলছে না খাবার উপযোগী পানি। এবার কয়রায় শুকনা মওসুমের শুরুতেই অধিকাংশ এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানীয় জলের অভাব দেখা দেয়ায় অবস্থা তীব্র আকার ধারণ করেছে। আর যে জন্য সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কটে ছিন্নমূল মানুষগুলো অনেক দূর থেকে পানি এনে জীবন ধারণ করছে। খোজ নিয়ে জানা যায়, কয়রা সদর, উত্তর বেদকাশী, মহেশ্বরীপুর ও মহারাজপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে সুপেয় পানির সঙ্কট। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এলাকার পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ওই সমস্ত এলাকায় নলকূপ থাকলেও তাতে মিলছে না কোন পানি। যে জন্য নলকূপ থেকে পানি উঠানো কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে এসব গ্রামাঞ্চলের খাবার পানির উৎস হলো পুকুর। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত কারণে এই পুকুরগুলোর পানি পান করা সম্ভব না হওয়ায় এই দুর্ভোগের কবলে পড়তে হচ্ছে এসব হতদরিদ্র মানুষকে। আর সুপেয় পানি না থাকায় দূষিত পানি পান করে সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন পানিবাহিত জটিল ও কঠিন রোগে। কয়রা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৪০ হাজার ৫০০ পরিবার রয়েছে। লোকসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষাধিকের কাছাকাছি। এর মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ সুপেয় পানি পান করা থেকে বঞ্চিত। উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী উপজেলায় নলকূপের সংখ্যা ১ হাজার ৬৩২টি ও পিএসএফের সংখ্যা ১৬৫টি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী কয়রা উপজেলা পানি শুধু খাবার নয় ব্যবহারেরও অনুপযোগী। কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, উপজেলা অধিকাংশ জমিতে খাল, বিল, পুকুর সর্বত্রই লোনাপানি উত্তোলন করে অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। এতে সমগ্র এলাকার পানি ও মাটি দূষিত হয়ে যাচ্ছে। ফলে কয়রার মানুষ মাইলের পর মাইল পেরিয়ে সুপেয় পানি সংগ্রহ করছে। সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামগুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। নদীর কুমির আর সুন্দরবনের বাঘ এবং প্রকৃতির সঙ্গে নিরলস লড়াই করে হাড্ডিসার মানুষগুলো কোন রকম বেঁচে আছে। না দেখলে বোঝা যায় না এদের জীবনযাত্রা কত নিম্নমানের। এই খেটে খাওয়া মানুষগুলো ১০/১৫ কি.মি. দূর থেকে পানি এনে তা পান করে আসছে। ৬ নং কয়রা গ্রামের বাসন্তী মুন্ডা বলেন, তারা বাড়ি থেকে ৩ কিঃ মিঃ দুরে বিলের মধ্য একটি পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করে তা পান করে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইস্তিয়াক আহমেদ বলেন, কয়রা উপজেলায় খাবার পানি সংরক্ষণে ৪ হাজার ৫ শ ট্যাংকি বিতরন করা হয়েছে। তথ্যানুযায়ী অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে উত্তর বেদকাশী, কয়রা ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হয় না। নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত এসব এলাকার পানির স্তর দ্রুত নিচে নামতে থাকে। ফলে অধিকাংশ নলকূপ দিয়ে পানি ওঠে না। আর এই কারণে প্রায় সব মানুষ পান করতে বাধ্য হয় দূষিত পানি। এসব এলাকায় পানিতে স্বাভাবিক লবণাক্ততার পরিমাণ ১ থেকে ২ হাজার মিলি সেন্টিমিটার। ১নং কয়রা গ্রামের আক্তারুল ইসলাম বলেন, সেচ মৌসুম শুরু হওয়ায় পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ার কারনে নলকুপে পানি উঠছেনা। তার কারনে পানির সংকটও রয়েছে। কয়রার তীব্র খাবার পানিসঙ্কট দেখা দেয়া গ্রামগুলো হচ্ছে- সদর ইউনিয়নের ৬নং কয়রা, ৫নং কয়রা, ৪নং কয়রা, ঝিলিয়াঘাটা, গোবরা, হরিণখোলা, ঘাটাখালী, মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ী, সুতিরকোনা, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের-তেঁতুলতলা, সাতআনিয়া, গিলাবাড়ী, কালিবাড়ী শেখের টেক, বানিয়াখালী, হড্ডা, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের বড়বাড়ী, কাঠকাটা, পাথরখালী, আমাদী ও বাগালী ইউনিয়নের অনেক অংশ। কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়রায় খাবার পানির সমস্যা দির্ঘদিনের। খাবার পানির সমস্যা দুর করনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে পানির প্লান্ট স্থাপন, পিএফএস নির্মান, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে ট্যাংকির ব্যবস্থা গ্রহন করার পাশাপাশি খাবার পানির পুকুরগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।