শিক্ষার্থী নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নে জেলখাটা শিক্ষক কিরীটী ৫টি বিভাগীয় মামলা খেয়েও বেপরোয়া
নারী শিক্ষকদের শরীরের স্পর্শকাতর অংশের অসংখ্য ছবি তুলে ফাঁসানোর চেষ্টা, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকসহ শিক্ষকদের অভিযোগ তুঙ্গে
স্টাফ রিপোর্টার ঃ ১৭ বছরের চাকুরী জীবনে ৬ বার স্কুল পরিবর্তন করেছেন, গুরুতর অপরাধে দুইবার শাস্তিযোগ্য বদলী হয়েছেন, বিভিন্ন অপরাধে শিক্ষা অফিসের তদন্তে ৫টি বিভাগীয় মামলা খেয়েছেন, শিক্ষার্থী নির্যাতন ও ইভটিজিং এ একাধিকবার সংবাদ শিরোনামে এসেছেন, বিনা অনুমতিতে একজন সহকারী শিক্ষীকার সাথে একাধিকবার ভারত ভ্রমণ করেছেন, নারী শিক্ষকদের শরীরের স্পর্শকাতর অংশের অসংখ্য ছবি তুলে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন, সর্বশেষ ছাত্রীদের যৌন পীড়নের কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন মামলায় জেল খেটেছেন। তিনি হচ্ছেন নগরীর তালতলা উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বরখাস্তকৃত সহকারী শিক্ষক কিরীটী রায়। সম্প্রতি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন এবং স্কুলে যোগদানের জন্য শিক্ষা অফিসে ব্যাপক তদবির চালাচ্ছেন, কিন্ত সুবিধা পাচ্ছেন না। বরং তদন্তের কাজে উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করলেই অভিভাবকদের আক্রশের শিকার হচ্ছেন। সে যাতে এই স্কুলে প্রবেশ না করে সেজন্য এলকাবাসী প্রায় ২শত জন তার বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত আবেদন করেছেন। এখন তাকে নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা। এই প্রতিবেদনে থাকছে শিষ্টাচার বিহীন ঔদ্ধত্ব্যপূর্ণ আচরণকরী একজন বেপরোয়া শিক্ষকের গল্প। কিরীটী রায় ২০০৬ সালে বড় বাজারের সত্যনারায়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের মাধ্যমে চাকুরী জীবন শুরু করেন। ঐ বছর পিটিআইতে যোগদান করে অশোভন আচরণের জন্য তার বেতন কর্তন হয়। ২০০৭ সালে যোগীপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ২০০৮ সালে রায়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২০০৯ সালে প্রথমবার উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তিনি উদয়নের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র জয় কুমার শীলকে অমানবিক প্রহার করে অভিযুক্ত হন। ২০১২ সালে তাকে বিভাগীয় মামলায় শাস্তি দিয়ে কার্ত্তিককুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী করা হয় এবং বেতন স্কেল সর্বনি¤œ রেখে লঘু দন্ড প্রদান করা হয়। ২০১২ সালের ৭ মে তার বিরুদ্ধে একাধিক দৈনিক পত্রিকায় শিক্ষার্থী নির্যাতন ও ইভটিজিং এর খবর প্রকাশিত হয়। কার্ত্তিককুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলীর পর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজিয়া সুলতানার অনুমোদন ছাড়াই তিনি ছুটি ভোগ করতেন এবং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে তদন্তের কাজে সহযোগিতা না করার অভিযোগ ওঠে। ঐ সময় স্কুলের শিক্ষকদের সাথে তিনি নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে আরও একটি বিভাগীয় মামলা হয় এবং শাস্তি দিয়ে দাকোপের কালাবগী সালেহা হাফেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানেও নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে ২০১৬ সালে দ্বিতীয় দফায় উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করে মামলা, হামলা, জেলখাটাসহ সীমাহীন বির্তকে জড়িয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে বরখাস্ত হয়েছেন। ঐ দিন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাকে স্কুলে অবরুদ্ধ করে সাংবাদিকদের খবর দেয়। তার মোবাইলে একাধিক বিতর্কিত ছবি পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে শরীরের স্পর্শকাতর অংশের অসংখ্য ছবি তোলার জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ ৪ জন সহকারী শিক্ষকের লিখিত অভিযোগ আছে। সেই অভিযোগের অনুলিপি মেয়র, জেলা প্রশাসক, প্রেসক্লাব ও শিক্ষার সকল দপ্তরে জমা পড়ে। তারপর তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিরীটী রায়ের বিরুদ্ধে বিনা অনুমতিতে ভারত ভ্রমণের অভিযোগ করেছেন একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক মুক্তি বিশ^াস। গত ১২ নভেম্বর ২০২৩ খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, আমি কিরীটী রায়ের প্ররোচনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দুইবার তার সাথে বিনা অনুমতিতে ভারত ভ্রমণ করেছি। সেই তদন্ত এখনো চলমান আছে। সূত্র মতে, কিরীটী রায়ের কীর্তিকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা। কোন সহকর্মীরা স্কুলে তাকে নিতে চায় না। তার নামে এত অভিযোগ ও মামলা চলমান আছে যে শিক্ষা কর্মকর্তারা তাকে কোন স্কুলে পাঠাতে পারছেন না। এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ অহিদুল আলম বলেন, এই শিক্ষক সম্পর্কে আপনারা সবই জানেন, আমরা এখন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো এবং তার বিরুদ্ধে যে সকল বিভাগীয় মামলা আছে তার সুষ্ঠ তদন্ত হবে।