নগরীতে কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ছে স্কুল শিক্ষার্থীরা
হামলায় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র উদ্ধার
ভয়ঙ্কর রূপে বিস্তার লাভ করছে এক একটি গ্রুপ, স্কুলছাত্র হত্যা চেষ্টায় ১০ কিশোর গ্যাং সদস্যরা গ্রেপ্তার, দু’জনের স্বীকারোক্তি, পেটের দু’স্থানে ছুরিকাঘাত করে ভুড়ি বের করে ফেলে, কিশোর গ্যাংয়ে হামলায় গুরুত্বর আহত ছাত্রকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ
কামরুল হোসেন মনি ঃ নগরীতে কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ছে স্কুল শিক্ষার্থীরা। ভয়ঙ্কর রূপে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর অপরাধীরা। গত ২৫ মার্চ ( সোমবার) খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) দৌলতপুর থানাধীন রাত সোয়া ৮টার দিকে দশম শ্রেণীর ছাত্র হুজাইফা খান (১৭) কে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে রিপন ও শাহনসহ ১২-১৪ জন মিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে হুজাইফা খানকে বন্ধুরা উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে উন্নতি চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করেন। ্আহত হুজাইফা খান ফুলবাগীগেট আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়।
এদিকে ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রধান আসামীসহ ১০ কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে প্রধান আসামী মো: রিপন হাওলাদার (১৭), মো: বাবুল মোল্লার পুত্র মো: নাইম মোল্লা (১৫), শুকুর আলীর পুত্র মো: রাতুল (১৫), জসিম উদ্দিনের পুত্র মো: তানভির হাসান অভি (১৭), শফিকুল ইসলামের পুত্র মো: রফিকুল ইসলাম ওরফে রাফি (১৭), মো: জাহিদ হোসেনের পুত্র মো: রায়হান রহমান রিয়ন (১৭), মো: মিন্টু শেখের পুত্র মো: জবির শেখ (১৭), ডালিম হাওলাদারের পুত্র মো: সাগর (১৮), মো: শাহবুদ্দিন এর পুত্র কাজী নাহিদ হাসান (২২) এবং মৃত মাকসুদুর রহমানের পুত্র সরদার মিনহাজুর রহমান। গ্রেফতারকৃতরা দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানাধীন এলাকার বাসিন্দা। এর মধ্যে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয় স্বীকার করায় কিশোর অপরাধী রিপন হাওলাদার ও তানভীর হাসান অভি আদালতে নিজেদেরকে জড়িত করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে।
অপরদিকে কেএমপি’র দৌলতপুর থানার পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দৌলতপুর থানায় কিশোর গ্যাং কর্তৃক সংঘটিত চাপাতি দ্বারা গুরুতর জখমের ঘটনায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রধান আসামীসহ ১০ জন কিশোর গ্যাং সদস্য গ্রেফতার ও বিজ্ঞ আদালতে দুইজনের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছেন। পুলিশ জানায়, গত ২৫ মার্চ রাত পৌনে ১০টার দিকে কেএমপি’র দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বেরপাশা দিঘীর পশ্চিম পাড়স্থ “জাতীয় তরুণ সংঘ” মাঠে কতিপয় কিশোর গ্যাং এর সসদ্যদের মধ্যে সংঘবদ্ধভাবে প্রকাশ্যে এলাকায় সিনিয়র ও জুনিয়রের ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারামারির সুত্রপাত হয়। এই মারামারির ঘটনায় হুজাইফা খান (১৭) নামক একজন কিশোর চাপাতির আঘাতে রক্তাক্ত গুরুতর জখম হয়। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম মহোদয় প্রত্যক্ষ এর নির্দেশনায় এবং ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (উত্তর) অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন এর নিবিড় তত্ত্বাবধানে একাধিক চৌকস টিম সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করে আড়ংঘাটা থানা এলাকা থেকে অত্র মামলার মূলহোতা ও এজাহারনামীয় কিশোর অপরাধী মোঃ রিপন হাওলাদার (১৭) কে ২৬ মার্চ ( মঙ্গলবার) গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে ঘটনার মূলহোতার দেখানো মতে ঘটনায় ব্যবহৃত চাপাতি দৌলতপুর থানাধীন পশ্চিম বণিকপাডায়, মহেশ্বরপাশায় অবস্থিত “ইডাস” বিল্ডিং এর ২য় তলার ছাদে অবস্থিত কবুতরের খুপড়ি ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ সকালে খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে এজাহারনামীয় ও সন্দিঘœ কিশোর অপরাধী মোঃ নাইম মোল্যাসহ মোট ১০ জন কিশোর গ্যাং এর সদস্যকে আটক করা হয়। উক্ত হামলার ঘটনা সাথে জড়িত থাকার বিষয় স্বীকার করে কিশোর অপরাধী রিপন হাওলাদার ও তানভীর হাসান অভি ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে প্রত্যেকে ঘটনার সাথে নিজেদেরকে জড়িত করে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। উল্লেখ্য যে, এ সংক্রান্তে দৌলতপুর থানার মামলা নং-৩০, তারিখ-২৬/৩/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-১৪৩/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়েছে। অত্র মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম এবং অপর আগামীদের গ্রেফতারের লক্ষে অভিযান অব্যহত আছে।
খুমেক হাসপাতালে ঘটনার প্রত্যেক্ষদর্শী হুজাইফা খান এর এক বন্ধু এ প্রতিবেদককে বলেন, ২৫ মার্চ ঘটনার দিন রাত সোয়া ৮টার দিকে হুজাইফার ফোনে কল আসে। একটি ঘটনার বিষয়টি মিমাংসার কথা বলে, তারা আমাদেরকে দিঘির পশ্চিম পাড় খোকন কমিশনারের মাঠ এলাকায় আসতে বলে। সেখানে আমরা উপস্থিত হলে, প্রথমে হুজাইফাকে একটা চড় মারে। এরপর দেখলাম ২০-২৫ জন চারপাশ দিয়ে আমাদেরকে ঘিরে ফেলে। তখন ধারালো অস্ত্র দিয়ে হুজাইফাকে উপর্যুরিভাবে কোপাতে থাকে। হামলা ঠেকাতে গেলে আমার কানেও আঘাত লাগে। দেখেন আমার কান থেকে রক্ত ঝরছে। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলা তারা পালিয়ে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুরুতর জখম হুজাইফা খান ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নাড়ি-ভুড়ি বের হয়ে গেছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তার অবস্থা আশংকাজনক। তাকে উন্নতি চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার সকালে হুজাইফার মা মুঠে ফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, ছেলেকে নিয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছে। এখন আগের চেয়ে একটু ভালো। তবে এখনো সে বিপদমুক্ত নয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানান। এ ঘটনার পর নগরীতে কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ছে স্কুল শিক্ষার্থীরা বিষয়টি সামনে আসে। অভিভাবকদের অজান্তেই শিশু-কিশোররা কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ছে। এমন আশংকা প্রকাশ করেছেন খুলনা জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির এক সভায়। ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীনের সভাপতিত্বে তাঁর সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) সুশান্ত সরকার জানিয়েছিলেন, পিতামাতা ও অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখার বিষয়ে যতœশীল হওয়া উচিত। সন্তানরা কোথায় যায়, কাদের সাথে মেশে এ বিষয়টি নিয়মিত নজরদারি করা প্রয়োজন। অভিভাবকদের অজান্তেই শিশু-কিশোররা অনেক সময় কিশোর গ্যাং এর সাথে জড়িয়ে পড়ে। চুরির ঘটনা তদন্ত করতে গেলে দেখা যায়, চুরির পেছনে অনেক সময় মাদক ও জুয়ায় অর্থেও যোগানের বিষয়টি জড়িত থাকে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গ্রুপ করে খুন, মাদক চোরাচালান, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, ইভটিজিং, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও আধিপত্য বিস্তারে জড়িয়ে পড়ছে তারা। খুলনা মহানগরী ও তার আশপাশের উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ‘কিশোর গ্যাং’ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অনেক পাড়া মহল্লায় উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। কিশোর গ্যাংয়ের দলবদ্ধ বেপরোয়া আচরণ ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সমাজে। এরা বিভিন্ন নামে নানা ধরনের গ্রুপে বিভক্ত হয়ে জড়িয়ে পড়ছে ভয়ংকর সব অপরাধে। সন্তান বখাটে হয়ে যাওয়ায় অসংখ্য পরিবারে অশান্তি বিরাজ করছে। ২০২১ সালে র্যাব-৬ একটি অভিযানে কিশোর গ্যাং এর বেপেরোয়া ১০ সদস্য আটক করেছিলো। ওই সময়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা কিশোর গ্যাংয়ের ইন্ধনদাতাদের ধরতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-৬ এর বিশেষ টিম। অভিযানে খুলনা মহানগরীর একটি বেপরোয়া কিশোর গ্যাংয়ের ১০ জন সদস্যকে আটক করেন। এই কিশোরেরা “কিং অব রূপসা” নামে পরিচিত। আটককৃত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের নিকট হতে নেইল কাটার, চিমটা, চাকু, মোবাইলফোন, সিগারেট, মানিব্যাগ, টর্চ লাইট, ব্রেসলাইট, লাইটার, গাড়ির চাবি, মোটরসাইকেল-৩টি এবং নগদ টাকা উদ্ধার করে। র্যাব ৬- ওই সময়ে নগরীর রূপসা ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের এ সদস্যদের আটক করে। পরে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই কিশোরেরা “কিং অব রূপসা” নামে পরিচিত। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানায় তাদের “কিং অব রূপসা” নামের গ্রুপে ২০-২৫ জন সদস্য আছে। এরা সবাই মধ্যবিত্ত পরিবারের বখে যাওয়া সন্তান। তারা পেশাগতভাবে কেউ কেউ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র, কেউ কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ড্রপ আউট, আবার কেউ কেউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মী। কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের কিশোর অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। তার মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সেবনসহ ছোট অস্ত্র ব্যবহার করে ছিনতাই, ভয়ভীতি প্রদর্শন, এলাকায় প্রভাব বিস্তার ও বিভিন্ন সমগোত্রীয় গ্রুপের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক কর্তৃত্ব স্থাপন করা। শুধু তাই না এরা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তাদের নিজেদের বাবা-মাকেও হেনস্থা করতে পিছপা হয় না। এলাকায় স্থানীয় মুরব্বী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্মান প্রদর্শন তো করেই না, বরঞ্চ ক্ষেত্রমতে তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অপমান করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। একই বছরের ৭ নভেম্বর নগরীর পুরাতন স্টেশন রোড, ৭নং ঘাট ও নিরালা এলাকা থেকে ১২ জন কিশোর ও একজন কিশোরীকে আটক করে র্যাব-৬। তারা মাদকাসক্ত হয়ে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকা-ের সাথে সম্পৃক্ত হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য ও ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়। ৩০ অক্টোবর রাতে নগরীর রূপসায় সপ্তম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনায় চয়ন ব্যাপারী নামের এক কিশোর গ্যাংয়ের হোতাকে গ্রেফতার করে র্যাব। ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত চয়ন ব্যাপারীর নিয়ন্ত্রণে রূপসা স্ট্যান্ড রোড থেকে বান্ধাবাজার, চানমারী, রূপসা সেতু পর্যন্ত কয়েকটি কিশোর গ্যাং রয়েছে। তাদের ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। মহানগরীর চানমারী বাজার এলাকায় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিপক্ষ কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় মো: আল ফায়েদ (১৭) নামের নবম শ্রেণির স্কুলছাত্র নিহত হয়। একই সময় ছুরিকাঘাতে আহত হয় শুভ (১৮) নামের আরেক স্কুলছাত্র। এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে বিবাদে দফায় দফায় সংঘর্ষে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর নগরীর সোনাডাঙ্গায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শহিদুল ইসলাম রাসেল (১৮) নামে এক যুবক নিহত হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর রূপসা বাগমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের গুপ্তির আঘাতে (দুই দিকে ধারালো ছুরি) সারজিল ইসলাম সংগ্রাম (২৬) নিহত ও ২৩ সেপ্টেম্বর নগরীর সোনাডাঙ্গা মজিদ সরণি এলাকায় সুজুকি মোটরসাইকেল শোরুমের সামনে মহিদুল ইসলাম নামে আরেক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে কিশোর অপরাধীরা। এর আগে ২০১৮ সালে ২০ জানুয়ারি রাত সোয়া ৯টায় খুলনা পাবলিক কলেজ ক্যাম্পাসে কনসার্ট চলাকালে ছুরিকাঘাতে ফাহমিদ তানভীর রাজিন নিহত হয়। সে খুলনা পাবলিক কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিলো। ওই সময়ে এ ঘটনায় রাজিনের বাবা শেখ জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে খালিশপুর থানায় ৬ জনের নাম ও অজ্ঞাত ৮-১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ওই সময়ে পুলিশ নগরীর মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ও সেনা সদস্য আলমগীর হোসেনের ছেলে আসিফ প্রান্ত আলিফ (১৬), নগরীর বড় বয়রা আফজালের মোড় এলাকার জাকির হোসেন খানের ছেলে মো. জিসান খান ওরফে জিসান পারভেজ (১৬), বড় বয়রা এলাকার মো. আহাদ হোসেনের ছেলে তারিন হাসান ওরফে রিজভী (১৩), রায়েরমহল মুন্সিবাড়ির চিনির ভাড়াটিয়া সাইদ ইসলামের ছেলে মো. সানি ইসলাম ওরফে আপন (১৩), বড় বয়রা সবুরের মোড় এলাকার লিয়াকত হোসেনের ছেলে রয়েলকে (১৪) ও বয়রার শ্মশান ঘাটস্থ জালাল হাওলাদারের ছেলে সাব্বিরকে গ্রেফতার করেছিলেন।
অনুসন্ধানীতে জানা গেছে, নগরীর সাত রাস্তার মোড়, লবণচরা, শিপইয়ার্ড এলাকা, বান্দাবাজার, খুলনা পাবলিক কলেজ এলাকা, মডেল স্কুল এলাকা, শ্মশানঘাট, পিএমজি স্কুল এলাকা, আফজালের মোড়, খুলনা রেলস্টেশন এলাকা, ৭ নম্বর ঘাট, রূপসা স্ট্যান্ড রোড, নিরালা আবাসিক, চানমারী বাজার, মোক্তার হোসেন সড়ক, পালপাড়া, বয়রা বাজার ও পূর্ব রূপসা বাগমারাসহ বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ কিশোর গ্যাংয়ের অস্তিত্ব রয়েছে। প্রভাব বিস্তার ও মাদক বেচাকেনায় এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাং তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক অনুশাসন কমে যাওয়া, বর্তমানের শিশু-কিশোররা ইউটিউব, ভায়োলেন্ট গেমস, পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার, কিশোরদের রাজনৈতিক ব্যবহারের কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের গ্যাং কালচার গড়ে উঠছে। পুলিশের কঠোর নজরদারি এবং পরিবারের নজরদারি ও মূল্যবোধ দিয়ে কিশোর অপরাধ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।