স্থানীয় সংবাদ

তালার কানাইদিয়া গ্রামে গৃহবধুকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

তালা প্রতিনিধি ঃ তালার কানাইদিয়া গ্রামে বৈশাখী শিকদার (২২) নামের এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। দেবর ও শশুরের পাশবিক নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় স্বামী পলাশ দাশ পিটিয়ে তার স্ত্রীকে হত্যা করে। পরে ঘটনার মোটিভ ভিন্নখাতে ঘোরাতে হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকালে তালার কানাইদিয়া গ্রামে। আশাশুনির বড়দাল খ্রিষ্টান পাড়ার বাবু শিকদার জানান, ৭/৮ বছর আগে তালার কানাইদিয়া গ্রামের দুলাল দাশ’র ছেলে পলাশ দাশ’র সাথে তার মেয়ে বৈশাখী শিকদারের বিয়ে হয়। পলাশ-বৈশাখী দম্পতীর সুমনা (৫) ও প্রিয়ন্তী (৩) নামের ২টি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে স্বামী পলাশ দাশ সহ শশুর দুলাল দাশ যৌতুকের দাবীতে বৈশাখীকে মারপিট করতো। একারনে ইট ভাটায় কাজ করে দফায় দফায় মেয়ে বৈশাখীর সুখের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছে। এই টাকা দিয়ে জামাই পলাশ দাশ তাদের বাড়ি ঘর নির্মান সহ ঘরের আসবাবপত্র ক্রয় করে। বৈশাখীর পিসি (ফুফু) সুপ্রিয়া শিকদার জানান, দফায় দফায় যৌতুকের দাবীতে নির্যাতনের পাশাপাশি শশুর দুলাল দাশ বিভিন্ন সময়ে পুত্রবধূ বৈশাখী শিকদারের উপর যৌন নিপিড়ন করে। এবিষয়ে প্রতিবাদ করলেই স্বামী পলাশ দাশ তাকে মারপিট করতো। যেকারনে বৈশাখী একাধিকবার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পিতার বাড়িতে চলে যায়। স্বামী-শশুরের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সর্বশেষ মায়ের কাছে ইটভাটায় কাজ করার জন্য চলে যায় বৈশাখী। সেখান থেকে সপ্তাহখানেক আগে ফিরিয়ে এনে আবারও নির্যাতন শুর” করে। শুক্রবার সকালে নির্যাতনের কথা মোবাইল ফোনে ঠাম্মা (দাদী) কবিতা শিকদারকে জানায়। সেসময় পলাশ জানতে পেরে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে বৈশাখীকে নির্মম ভাবে পিটাতে থাকে, যা মোবাইলের মাধ্যমে শোনা যায়। এর কিছুক্ষন পর বৈশাখী মারা গেছে বলে খবর আসে। পলাশের পিতা দুলাল দাশ একই ভাবে তার স্ত্রীকে (পলাশের মা) পান বরজের মধ্যে পিটিয়ে হত্যা করার পর মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে সেটাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে। তিনি আরও জানান, মারা যাবার পর ভ্যানে করে মৃতদেহ নিয়ে পলাশ তালা হাসপাতালে আসার সময় তালা ব্রীজ মোড়ে এসে পরিকল্পিতভাবে ভ্যান উল্টিয়ে দেয়। এতে পলাশ সহ ভ্যানের উপর থাকা বৈশাখীর মৃতদেহ সহ অন্যদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কেটে যায়। এঘটনার মধ্যদিয়ে পিটানোর আঘাতের চিহ্ন ভিন্নখাতে নেবার চেষ্টা করা হয়। এছাড়া, পিটুনিতে বৈশাখী মারা গেলে তার মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে পুরো ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে পলাশ দাশ ও তার পিতা দুলাল দাশ। এবিষয়ে গ্রামের একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে পলাশ ও তার পিতা দুলাল দাশের অনৈতিক কর্মকান্ড, তাদের পূর্বের ইতিহাস এবং বৈশাখীকে পিটিয়ে হত্যা করা হতে পারে সন্দেহ করে ঘটনার তদন্ত সহ দোষিদের শাস্তি দাবী করেছেন। তবে, পিটিয়ে হত্যা এবং পুত্রবধূকে যৌন নিপিড়নের অভিযোগ অস্বীকার করে শশুর দুলাল দাশ ও স্বামী পলাশ দাশ জানান, ঘটনার দিনে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সামান্য ঝগড়া হয়। পরে বৈশাখী বিষপান করলে তাকে তালা হাসপাতালে নেবার সময় পথিমধ্যে মারা যায়। এবিষয়ে তালা থানার ওসি মো. মোমিনুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড হয়েছে। মৃত দেহের ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার পর পরবতী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button