স্থানীয় সংবাদ

মণিরামপুরে ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

নকলসহ ধরা পড়ায় সুইসাইড নোট লিখে আতœহত্যা

মানববন্ধন, হামলা-ভাঙচুর, অধ্যক্ষের সংবাদ সম্মেলন

মোঃ আব্বাস উদ্দীন, মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি ঃ মণিরামপুর উপজেলার গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজের সাবিনা ইয়াসমিন নামে দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ে বাড়ি ফিরে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করেছে। গত শনিবার (৩০মার্চ) দুপুরে নিজ শয়ন কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। সুইডসাইড নোটে নকল করে ধরা পড়ার পর কক্ষ পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন স্যার খাতা কেড়ে নিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেওয়ায় লজ্জায় ক্ষোভে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলে উল্লেখ করেছে। এই ঘটনার পরের দিন নিহতের স্বজন ও বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী গোপালপুর বাজারে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে। এ সময় বিক্ষুব্ধরা প্রতিষ্ঠানে হামলা চলিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে এবং অধ্যক্ষ রেজাউল করিম ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ইসরাইল হোসেন ও তাসলিমা ম্যাডামের শাস্তি দাবী করেন। এ ঘটনায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের পরিচালক ঘটনাটির তদন্তে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজারসহ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে তদন্তে পাঠান। গত বুধবার (৩ এপ্রিল) সকালে ঘটনার তদন্তের জন্য জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজে আসেন। অধ্যক্ষের কক্ষে তদন্ত কার্যক্রম শুরুর মাঝ পর্যায়ে এলাকার কিছু উছৃঙ্খল নারী-পুরুষ লাঠিসোঠা নিয়ে অধ্যক্ষ রেজাউল করিমসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের উপর হামলা চালায়। এতে ১০/১২ জন কম বেশী আহত হয়। বিক্ষুব্ধরা অধ্যক্ষ রেজাউলের পদত্যাগ দাবি করে অ¯্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। বিক্ষুব্ধদের তোপরে মুখে তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত রেখে পুলিশ প্রহরায় তদন্ত কর্মকর্তারা চলে আসেন বলে জানান অধ্যক্ষ রেজাঊল করিম। এ ঘটনার পর ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সন্ত্রাসীদের শাস্তি দাবী করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে না আসা পর্যন্ত তারা প্রতিষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন বলে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাকদের সাফ জানিয়ে দেন। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, তদন্ত কাজ শুরু করার এক পর্যায়ে উছৃঙ্খল নারী-পুরুষ অধ্যক্ষের কক্ষে হামলা চালিয়ে অবুরুদ্ধ করে রাখে । তদন্ত কাজ সম্পন্ন হয়নি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। এ দিকে বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সকালে গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম প্রেসক্লাব যশোরে এক সংবাদ সম্মেলন করে জানান, কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন গত ৩০ মার্চ নির্বাচনী পরীক্ষার ইংরেজি ২য় পত্রের পরীক্ষায় নকল করে ধরা পড়ে । তার খাতা কক্ষ পরিদর্শক আটকিয়ে রাখলে সে রাগান্বিত হয়ে বাড়ী ফিরে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করে। আমি ও আমার শিক্ষকদের নিয়ে এ ঘটনার পরের দিন নিহত ছাত্রীর বাড়ীতে উপজেলা বাগডাঙ্গা গ্রামে যেয়ে নিহতের বাবা আব্দুল জলিলের সাথে সমবেদনা জানিয়ে বিকেল থেকে সময় দেয়। তাদের বাড়িতে ইফতারী করে বুধবারের তদন্ত কাজে সহযোগিতা চেয়ে চলে আসি। সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ রেজাউল করিম দাবী করেন, এলাকার কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি তদন্ত কাজ নস্যাত করার জন্য ছাত্রী আত্মহত্যার ঘটনাকে পুজি করে এ ধরনের ন্যাক্কার জনক হামলা চালিয়েছে। আমি এঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় এবং সন্ত্রাসীদের শাস্তি দাবী করছি। সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি দাবী জানান, (১) দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচার দাবী (২) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আনা পর্যস্ত কোন শিক্ষক –কর্মচারী প্রতিষ্ঠিানে না যাওয়ার ঘোষনা (৩) শিক্ষা দপ্তরের হস্তক্ষেপ দাবী (৪) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সন্ত্রাসমুক্ত করার দাবী।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button