স্থানীয় সংবাদ

দৈনিক প্রবাহে সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে সেই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা

ভূমিহীনদের কান্নায় মন গলতে শুরু করেছে প্রশাসনের

আনিছুর রহমান কবির : গত বুধবার ৩ এপ্রিল দৈনিক প্রবাহে ‘ভান্ডার কোর্ট ইউপি চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতা চরমে’ শিরোনামে প্রথম পাতায় একটি নিউজ প্রচারের পর অবশেষে মামলা নিতে সম্মত হয়েছে বটিয়াঘাটা থানা পুলিশ। এর আগে অনেকবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দ্বারস্থ হওয়া সত্বেও ভূমিহীনদের কোন মামলা নিতে রাজি হয়নি বটিয়াঘাটা থানা পুলিশ। খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার ভান্ডারকোর্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ওবায়দুল্লাহ’র বিরুদ্ধে অবশেষে মামলা রুজু করেছে থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বটিয়াঘাটা থানায় মামলা রুজু হয়েছে (নং-০৫)। দন্ডবিধির ১৪৩, ৪৪৭, ৪৪৮, ৩২৩, ৩৭৯, ৩৮০, ৪২৭, ৫০৬ ও ১০৯ ধারার অপরাধে চেয়ারম্যানসহ ৬জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫/৬জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটির বাদি হয়েছেন ভূমিহীন পরিবার গুলোর সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুধাংশু শেখর ঢালী। তবে এখনও পর্যন্ত মামলার আসামিদের মধ্যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ভূমিহীনদের প্রায় তিনশ’ বিঘা ফসলি জমিতে জোর পূর্বক নোনা পানি ঢুকিয়ে দুইবছর যাবৎ মৎস্য ঘের করে আসছিলো চেয়ারম্যান শেখ ওবায়দুল্লাহ। এবিষয়ে অসহায় ভূমিহীন পরিবারগুলো প্রতিবাদ করলেই তাদের উপরে নেমে আসতো অমানুষিক নির্যাতন। ভয়ে তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহসটুকুও হারিয়ে ফেলেছিলো অসহায় মানুষগুলো। এবিষয়ে ভূমিহীন সমিতির পক্ষ থেকে স্থানীয় সাংসদ ননী গোপাল মন্ডলের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। ওই অভিযোগের সূত্র ধরে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মিরা গত ২৯ মার্চ ভূমিহীনদের সেই অবৈধ দখল হওয়া জমিতে গিয়ে সরেজমিন প্রতিবেদন করেন। সেখানে ভূমিহীন পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং তাদের ওপরে চেয়ারম্যানের নির্যাতনের বর্ননা দেন। জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা গুলোতে সেই সংবাদটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নজরে আসে। বটিয়াঘাটা থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে চেয়াম্যানের দখলদারিত্ব এবং ভূমিহীনদের নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতা পান। এরপর সেই রাতেই চেয়াম্যান ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে মামলা নেন থানা পুলিশ।
ভূমিহীন পরিবারগুলোর অভিযোগ ও থানায় দায়ের হওয়া মামলার সুত্রে জানা গেছে, খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার ভান্ডারকোট ইউনিয়নের চরহালিয়া গ্রামে ভূমিহীনদের নামের বরাদ্দ হওয়া জমিতে জোর পূর্বক নোনা পানি ঢুকিয়ে দুইবছর যাবৎ মৎস্য ঘের করে আসছিলো ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ ওবায়দুল্লাহ। আদালত থেকে ভূমিহীনদের ওই জমিতে অন্য কারও দখলদারীত্বের বিষয়ে নিশেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও চেয়ারম্যান জমিটি দখল করে ঘের করতেন। এবিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে ভূমিহীনদের প্রতি নির্যাতন ও হামলা-মামলার ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখতেন তিনি। অবশেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে থানায় মামলা দায়ের হয়।
এবিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো: বাবুল ইসলাম জানান, মামলার এজাহারভূক্ত ও অজ্ঞাত পরিচয়ের আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যহত রয়েছে। এবিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ননী গোপাল মন্ডল বলেন, আমি ভুমিহীনদের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে বটিয়াঘাটা থানার ওসিকে তদন্ত পূর্বক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলাম। প্রকৃত মালিকদের জমি জবর দখলের সাথে যারা জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button