স্থানীয় সংবাদ

গ্রীষ্মের অগ্নিদহনে পুড়ছে গোটা খুলনাঞ্চল

খুলনা বিভাগের সর্ব্বোচ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪০.২ খুলনায় ৩৭.৮, ঘন ঘন লোডশেডিংএ ঘর্মাক্ত নারী-শিশুরা বাসায় টিকতে পারছে না, আইপিএস’র চার্জ থাকছে না, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরাও আছে ঝামেলায়

মো.আশিকুর রহমান ঃ একে তো গ্রীষ্মকাল, তারপর ঘন ঘন লোডশেডিং, রমজানের শেষ দশকে এসে যেন আর রেহাই মিলছে না, তীব্র গরমের দাবানলে পুড়ছে নগরবাসী। গ্রীষ্মের প্রখর তাপদাহ আর কাঠফাটা উত্তপ্ত অস্থির গরমে অতিষ্ট হয়ে ওঠেছে নগরবাসী। দিনে মাথার উপর তপ্ত সূর্য, আর রাতের বেলায় ঘরের ভেতর গরম বাতাসের ভ্যাপসা অনুভূতি, স্বস্তি নেই রাতে বা দিনে কোথাও, স্বস্তি নেই ঘরে বা বাইরে। সূর্যের আলোয় যে এতেই উত্তাপ, ঘর বাইরে দু’পাশেই শরীরে আগুন জ¦ালিয়ে দিচ্ছে। গরমের নাভিশ্বাসে কাহিল হয়ে পড়ে সল্প আর নি¤œ আয়ের মানুষ। ঈদকে সামনে রেখে তীব্র গরমকে উপেক্ষা করে দরদর করে শরীরের ঘাম ঝরিয়ে গেলেও বিরতিহীন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেনকরে চলছে দিনমুজুর, সাধারণ শ্রমিক সহ রাস্তায় খেটে খাওয়া মানুষ। ঘরে থাকা নারী, শিশুরাও বিদ্যুৎ না থাকায় ঘর্মাক্ত অবস্থায় খিটখিটে মেজাজে থাকছে সারাক্ষণ। অস্বস্তিকর এই গরমে যেন শ্বাস তুলতে পারছেনা, এক কথায় মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। যাদের বাসা-বাড়িতে চার্জার ফ্যান বা আইপিএস আছে সেগুলোও চার্জ পাচ্ছে না ঘন ঘন লোডশেডিং এর কারণে।
খুলনা আবহাওয়া অফিস বলছে- বৃষ্টিপাত কম থাকার কারনেই এই গরমের অনুভূত হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের পরিমান কম থাকার কারনে এবং সম্ভবনা কম থাকার দরুন এই গরমের অনুভূতি। যার ফলে তাপমাত্রা বেড়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারনে গরম অনুভূত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত হলে গরমের মাত্রা কমবে। শনিবার (৬ এপ্রিল) নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অসহ্য গরমে নাজেহাল হয়ে পড়েছে জীব-বৈচিত্র অস্থির হয়ে ওঠে। রোদের উত্তাপে বাইরে বের হলেই যেন চোখ যেন পুড়ে যাচ্ছে। ছুটে চলা কর্মব্যস্ত নগরবাসী, পথচারী, বিভিন্ন গাড়ীর চালকেরা, পেশাজীবি-দিনমজুর, নি¤œআয়ের, স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। অনেক পোষ্য প্রানী গরম সইতে না পেরে আশপাশের ড্রেন বা জলাশয়ে নেমে পড়েছে। স্থানীয় এলাকার ছোট ছোট বাচ্চারা পানিতে ঝাপ দিচ্ছে শরীরকে শীতল করতে। তীব্র গরমের কারণে নগরীর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত বাসা-বাড়ীতে বিরতিহীন ভাবে চলছে এসি, এয়ারকুলার, ফ্যান । সারা দিন রোদের উত্তাপে পড়ে রোজাদারসহ পথচারীরা দেহের তৃষ্ণা মেটাতে ইফতারির পূর্ব মুহুর্তে কেনছেন ঠান্ডা আখের রস, লেবু, বেলের শরবত, ডাবসহ ঠান্ডা পানীয়। সোনাডাঙ্গা আবাসিক ২য় ফেজের বাসিন্দা তানিসা খান বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিং আর প্রচন্ড গরমে আমার ৪ বছরের ছেলে অস্থির করছে সারাদিন। চার্জার ফ্যানেও চার্জ থাকছে না। বিদ্যুৎ ঠিকমত থাকলেতো চার্জ দেবো। আলিশান মোড়ের বাসিন্দা কামরুল হোসেন মনি বলেন, আমি ও আমার শিশু সন্তানে রাতে দু’বার গোসল করছি তারপরও শুতে গিয়ে কিছুক্ষণ পর ঘামে বিছানা ভিজে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ী হামিম জানান, গরমে কোথাও শান্তি মিলছে না। বেজায় গরমে বাইরে বের হওয়া দায় হয়ে পড়েছে। কি আর করার ব্যবসার কাজে তো বাইরে যেতেই হবে। তবে বাইরে গেলে রোদে মনে হচ্ছে গায়ে কে যেন আগুন লাগিয়ে দিয়েছে কেউ , এমই গরম। সিএনজি চালক মিজান জানান, গরমে গাড়ী চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। খুব গরম, শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে। শরীরে দরদর করে ঘাম ছেড়ে দিচ্ছে। কিন্তু উপায় নেই কি করবো গাড়ি তো চালাতেই তবে। কারণ প্রতিদিনের সংসার খরচ, আর আসন্ন ঈদকে ঘিরে পরিবারের জন্য কেনাকাটার জন্য গরম আর গায়ে গরম মনে হচ্ছে না। আখের রস বিক্রেতা সুমন জানান, প্রায় সব সময়ই আখের শরবত বিক্রি করি। তবে বর্তমানে যে অসহনীয় গরম পড়ছে তাতে আখের রসের চাহিদা বাড়েছে। তাছাড়া ইফতারির পূর্ব মুহুর্তে দারুন ক্রেতা সাড়া মিলছে।
খুলনা আঞ্চলিক আওহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ এ জানান, যেহেতু গরম কাল বা মৌসুম চলছে, তাই ধীরে ধীরে আদ্রর্তা বা তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া সাধারনত এপ্রিল মে মাসে গরমের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তবে বৃষ্টিপাত হলে গরমের অনুভূত কিছুটা কমবে। বৃষ্টিপাত কম থাকার কারনেই এমন গরম অনুভুত হচ্ছে। গতকাল খুলনা বিভাগের খুলনায় তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং খুলনা বিভাগের সর্ব্বোচ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গা বিভাগে ৪০.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button