স্থানীয় সংবাদ

সিটি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের সেমাই

শ্রমিকদের মাথায় হেড ক্যাপ, শরীরে এ্যাফরন, হাতে হ্যান্ড গ্লোব ছাড়া করছে কাজ

স্টাফ রিপোর্টার : শিরোমনি এলাকায় খুলনা সিটি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ এ অস্বাস্থ্যকর, নোংরা ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের সেমাই। ঈদকে সামনে রেখে কোম্পানিটি বিভিন্ন মোড়কে নিজ কোম্পানি ছাড়াও অন্য কোম্পানির নকল বাহারি মোড়কে তৈরি করছে অনিরাপদ ও অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে খোলা এবং প্যাকেট জাত সেমাই । চলছে রমরমা ব্যবসা। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খান জাহান আলী থানাধীন শিরোমণি বিআরটিসি সড়কে (বিআরটিসি অফিসের পূর্ব পাশে) অবস্থিত খুলনা সিটি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজে চিটাগাং মোড়কে ও বনফুল মোড়ক সহ আরো চার-পাঁচটি বাহারি মোড়কে প্যাকেট করছে সেমাই। শ্রমিকদের মাথায় ক্যাপ নেই, হাতে হ্যান্ড গ্লোব ও মুখে মাক্স ছাড়াই হাত দিয়ে ঘাম বেয়ে পড়ছে সেই ঘাম সহ সেমাই হাত দিয়ে ধরে প্যাকেটে করছে। সেমাইয়ের কারখানায় গিয়ে দেখা যায় একই অবস্থা নোংরা স্যাঁতস্যাঁতে ফ্লোরে ও পাশে একটি প্রসাবখানার পানির ট্যাপ থেকে পানি নিয়ে সেমাই এর ময়দা মিক্স করা হচ্ছে ও মাছি উড়ছে । যে বাসের লাঠি গুলোয় সেমাই শুকানো হয় সেই লাঠিগুলো নোংরা এবং ধরতে ধরতে কালো ময়লা হয়ে গিয়েছে। সেমাই গুলো নেড়ে দেয়া হচ্ছে খোলা আকাশের ছাদের উপরে যেখানে সমস্ত ধুলা-বালি ও মাছি উড়ে গিয়ে পড়ছে এবং পাশে পাখিদের আশ্রয়স্থল। বিভিন্ন সময়ে পাখিরা ও তার উপরে পায়খানা করছে। ভিতরে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র ,ভাজা সেমাইয়ের নামে পুড়ে যাওয়া ও ফাঙ্গাস পড়া, নষ্ট সেমাই গুলো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। সেমাই তৈরীতে যে সকল শ্রমিক কাজ করে তাদের কারোই কোন সিভিল সার্জনের স্বাস্থ্য সনদ নেই। যেখানে খাদ্য নিরাপত্তার কোন বালাই নাই। এ বিষয়ে কথা হয় এলাকার দুজন প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে আব্দুস সোবাহান মল্লিক ও আবু সাঈদ তারা বলেন, সেমাই শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়সের মানুষের পছন্দের একটি খাবার। এই কারখানার মধ্যে যে সেমাই গুলো তৈরি হয় সেগুলো খোলা আকাশে ছাদের উপরে সবসময়ই আমরা শুকাতে দিতে দেখি। ধুলাবালি, মাছি ও পাখিরা উপর উড়ে গিয়ে পায়খানা করে। এ অবস্থা দেখে আমরা এই কোম্পানির সেমাই খেতে ভক্তি হয় না। এ সেমাই শিশুসহ সকলের পেটে নানা সমস্যা হয়। বিষয়টি দেখার জন্য সরকারের ভোক্তাধিকার, নিরাপদ খাদ্য সংস্থা ও বিএসটিআই এর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব রয়েছে। তারা বিষয়গুলো সুদৃষ্টি দিবেন বলে আমরা মনে করি। এই কোম্পানির ম্যানেজার বজ্র লাল সাহা ‘র সাথে কথা হয়, তিনি জানান খুলনার বড়বাজার থেকে শুরু করে পদ্মার এপারে সব জায়গায় পাওয়া যায় আমাদের সেমাই। আমরা আমাদের কোম্পানির মাল সঠিকভাবে তৈরি করি। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খুলনা জেলা অফিসার মোঃ মোখলেছুর রহমান বলেন, সেমাই তৈরীর কারখানা গুলো তারা রোদ্রে যেখানে সেমাই শুকাবে সেখানে প্রথমে এরিয়াটুকু ভালো করে চিকননেট দিয়ে ঢেকে নিতে হবে । যাতে করে মাছি ও বাহিরে ধুলাবালি সেমাইর উপরে পড়তে না পারে। এরপরে যে শ্রমিকগুলো কাজ করবে তাদের মাথায় হেড ক্যাপ , শরীরে এ্যাফরন থাকবে, হাতে হ্যান্ড গ্লোব, শরীরে কোন সংক্রমণ রোগ আছে কিনা সেগুলো পরীক্ষা করে নিতে হবে। পায়ে আলাদা জুতা থাকবে। বাহিরে ব্যবহৃত জুতা ভিতরে ব্যবহার করা যাবে না। সিভিল সার্জন এর নিকট থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ নিতে হবে। নোংরা পরিবেশে কোন কাজ করা যাবে না। নগরীতে ৪০টি কারখানার মধ্যে সবার অবস্থায় একই। এর অধিকাংশ কারখানা নগরীর দোলখোলা, খালিশপুর এবং খানজাহান আলী থানার শিরোমনি এলাকায় অবস্থিত। নিচতলা, দু’তলা বা তিনতলা বাড়িতে ছোট একটি মেশিন বসিয়ে সেমাই তৈরি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ছোট ছোট ঘুপচি ঘরকেই সেমাই তৈরির কারখানা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব কারখানায় নেই কোনো সাইনবোর্ড। তৈরিকৃত সেমাই শুকানো হয় খোলা ছাদে। কোনো কোনো ছাদে রয়েছে কবুতরের খামার কিংবা পোল্ট্রি ফার্ম। খোলা ছাদে সেমাই শুকানোর কাজ হওয়ায় পাখি, কবুতর ও পোল্ট্রি মুরগীর বিষ্টার সঙ্গে মিশে হচ্ছে একাকার। সেই সেমাই আবার ঝুড়ি ভরে চলে যাচ্ছে বাজারের দোকানগুলোতে। অভিযোগ রয়েছে- ঈদ উপলক্ষে প্রতিবছরই নগরীর বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠে অসংখ্য মৌসুমি সেমাই কারখানা। যার অধিকাংশেরই বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এর অনুমোদন নেই। কারখানার শ্রমিকরা জানান, তারা দু’ধরনের সেমাই উৎপাদন হয়ে থাকেন। এর একটি লাচ্ছা সেমাই অন্যটি সাদা সেমাই। লাচ্ছা সেমাই যেকোনো আবহাওয়াতে শুকানো সম্ভব। অন্যদিকে সাদা সেমাই তৈরির পর তা রোদে শুকাতে হয়। বর্তমানে বৈরী আবহাওয়ায় সেমাই শুকাতে ঝামেলা হচ্ছে বলে জানান তারা। যে কারণে ছাদে বা খোলা আকাশের নিচে শুকাতে বাধ্য হচ্ছেন। জানা যায়, খুলনার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হওয়া এসব সেমাই ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অর্ধেক সেমাই চলে গেছে নগর ও গ্রামগঞ্জের দোকানগুলোতে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button