স্থানীয় সংবাদ

খুমেক হাসপাতালের তদন্ত কমিটির কার্যক্রমে ধীরগতি : ধামা চাপার চেষ্টা

৪৯৫ পিস ডিষ্টিল ওয়াটার চুরির হোতারা দিল উল্টো অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ঃ গত ২৩ মার্চ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসুতি বিভাগের ময়লার ভাগাড়ে পাওয়া গিয়েছিল ৪৯৫ টি ডিষ্টিল ওয়াটার। আনসার সদস্যরা হাসপাতালে প্রসুতি বিভাগের একটি পরিত্যক্ত রুমের ময়লার স্তুপ থেকে জব্দ করেন। যা ছিলো বালিশ দিয়ে চাপা দেওয়া। বিষয়টি ধামা চাপা দেওয়ার জন্য উল্টো ওই ওয়ার্ডের আউটসোসির্ং ও সরকারি স্টাফরা ঘটনার কয়েকদিন পর আনসার সদস্য’র বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত ৩১ মার্চ তিন সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এছাড়া আলাদা ভাবে খুলনা জেলা কমাড্যান্ট এর কার্যালয় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। তাদের তদন্ত কমিটি কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে, প্রতিবেদন যে কোন মুর্হুতে তাদের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেবেন। কিন্তু গত ১৮ দিনেও হাসপাতালে তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত কার্যক্রম প্রক্রিয়া এখনো শুরু করতে পারেননি। ফলে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে একটি মহলের দাবি।
খুমেক হাসপাতাল সূত্র জানা যায়, ডিউটি কালীন সময়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লেবার ওয়ার্ডেও সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখা আনসার সদস্যগণের নির্ধারিত পোশাক (ইউনিফর্ম) পরিধান ব্যতিত লেবার ওয়ার্ডে ঘোরাঘুরি গল্প গুজব করা সহ আড্ডা দেওয়া ও মহিলা কর্মীদের ড্রেসরুমে উকিঝুকি মারা, সরকারি ডিস্ট্রিল ওয়াটার নিয়ে যাওয়ার সময় কর্মরত আউটসোর্সিং মহিলা কর্মচারীদ্বয়ের কর্তৃক বাধা দেওয়ায় আনসার সদস্যগণ গালিগালাজ করেন মর্মে অভিযোগ দাখিল করেন। এরপ্রেক্ষিতে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: মো: হুসাইন সাফায়াত এর নির্দেশে গত ৩১ মার্চ হাসপাতালের গাইনী এন্ড অবস বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা: ইসরাত জাহান ইলাকে তদন্ত কমিটির সভাপতি করে তিন সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এছাড়া সদস্য সচিব হিসেবে আরএমও ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার এবং লেবার ওয়ার্ডে সহকারি রেজিস্ট্রার ডা: সুরাইয়া বিনতে আজম সদস্য করা হয়। জানা গেছে জানা গেছে, আউটসোর্সিং রূমানা, পাপিয়া, রাজিয়া, ফ্রি সার্ভিস মমতাজ, সরকারি ক্লিনার মল্লিকা ও মালাদী মিলে ওই আনাসর সদস্যর বিরুদ্ধে ইভটিজিং এরমত স্পর্শকতার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। তাদের এই অভিযোগে স্বাক্ষর করেন ওই ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স সাবিনা ইয়াসমিন যে আনসার সদস্যরা ওষুধ জব্দ করলো, উল্টো তার বির”দ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়ায় বিষয়টি অন্যদিকে মোড় ঘুরানোর জন্য এ অভিযোগ বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: মো: হুসাইন সাফায়াত বলেন, তিন সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তারা খুব দ্রুত তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। তিনি বলেন, আগামী ২৭ এপ্রিল তদন্ত কমিটি অভিযোগকারীদের ও আনসার সদস্যদের উপস্থিত থাকতে বলেছেন বলে আমি জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির সভাপতি হাসপাতালের গাইনী এন্ড অবস বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা: ইসরাত জাহান ইলাকে বুধবার সন্ধ্যায় তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে আরএমও ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, গত ২৭ এপ্রিল তদন্ত কার্যক্রম শুরু হওয়ার জন্য একটি চিঠি দিয়েছিলো। কিন্তু ওই দিন হাসপাতালের ইনডেন্ট রয়েছে। যার কারণে ৩০ এপ্রিল তদন্ত কার্যক্রম শুরুর জন্য তদন্ত কমিটির সভাপতিকে অবহিত করেছি। এদিকে এ ব্যাপারে আনসারের সহকারি জেলা কমান্ডার মোহাম্মাদ মিরাজুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে। যেকোন মুহুর্তে তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হবে। তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে ওই দিনের ফুটেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের কাছে চেয়েছি। কিন্তু তারা বলেছেন ৭ দিনের বেশি ব্যাকআপ নেই। তাই ফৃুটেজ তারা দিতে পারেনি। খুলনা জেলা কমাড্যান্ট এর কার্যালয় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, লেবার ওয়ার্ডে যারা আনসারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করেছিলো, তদন্তে কমিটি সদস্যরা ওই অভিযোগের কোন সত্যতা পায়নি। ্উল্লেখ্য, গত ২৩ মার্চ বিকালে খুমেক হাসপাতালের আবাসিক অফিসার ডাঃ সুমন রায়ের নেতৃত্বে আনসার সদস্যরা প্রসুতি বিভাগের একটি পরিত্যক্ত রুমের ময়লার স্তুপ থেকে ৪৯৫ টি ডিস্টিল ওয়াটার জব্দ করেন। যা ছিলো বালিশ দিয়ে চাপা দেওয়া। জব্দের সময়ে কন্ট্রাক্ট ক্লিনিং সার্ভিসিং’র আউটসোর্সিং কর্মচারি রুমানা ও পাপিয়া তেড়ে আসে আনসার সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মিদের দিকে। কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ওয়ার্ডের সাব ইনচার্জ রঞ্জু মোহান্তি গণ-মাধ্যম কর্মিদের সাথে অসদাচরন করেন। এর কয়েকদিন পর যে যাদের বিরুদ্ধে ডিস্টিল ওয়াটার চুরির অভিযোগের তীর, তারাই উল্টো আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে স্পর্শকাতর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যাতে ওই ওষুধ চুরির মুল ঘটনানাটি আড়াল করা যায়। এই ঘটনার কয়েকদিন আগে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল থেকে ওষুধ চুরি করে পাচারের সময় হাসপাতালের ফ্রি সার্ভিস সালেহা বেগম ও তাঁর স্বামী আব্দুর রাজ্জাককে আটক করেছিলেন হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ওষুধ জব্দ করা হয়। পরে তাঁদের সোনাডাঙ্গা থানায় সোপর্দ করে মামলা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন) থেকে ওষুধ চুরি করে পাচারের সময় হাসপাতালে নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাদেরকে আটক করেন। হাসপাতাল কতর্ৃৃপক্ষ সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে। পরে পুলিশ এসে তাদেরকে ওষুধসহ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: ইখতিয়ার উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button