স্থানীয় সংবাদ

তীব্র গরমে খুলনাবাসী হিটস্ট্রোকের দ্বারপ্রান্তে !

খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোর ও চুয়াডাঙ্গা ৪০ দশমিক ৪

হাসপাতালে বাড়ছে রোগী, খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ, হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভবনা বেশি : সিভিল সার্জন

কামরুল হোসেন মনি ঃ সারা দেশে এপ্রিলের শুরু থেকেই তাপমাত্রা প্রচন্ড আকার ধারন করেছে। খুলনা বিভাগে গত কয়েকদিন ধরে ৩৯ ডিগ্রি থেকে ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠানামা করছে। এমন তাপপ্রবাহে জনজীবনে হা্সঁফাসঁ অবস্থা। তীব্র গরমে ঘরের বাইরে স্বস্তি মিলছে না। খুলনার মানুষ হিটস্ট্রোকের দ্বারপ্রান্তে। অতিরিক্ত গরমে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী ও বয়স্করা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এমন উত্তপ্ত আাবহাওয়ার মধ্যে খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ খুলনা সিভিল সার্জনের।
এদিকে খুলনা আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এপ্রিল মাসে খুলনা বিভাগে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৭ ড্রিগ্রি সেলসিয়াস গিয়ে ঠেকেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টার পর খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো যশোর ও চুয়াডাঙ্গা ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গা ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের বিভিন্ন জেলায় স্বস্তির বৃষ্টির দেখা মিললেও খুলনায় এখনও রয়েছে ব্যতিক্রম। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
খুলনা সিভিল সার্জন ( ভারপ্রাপ্ত) ডা: শেখ মো: কামাল হোসেন বলেন, গরমে শরীরে সোডিয়াম ও পানি কমে যাওয়ায় ‘হিট স্ট্রোক’-এর ঝুঁকি বেড়ে যায়। হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই সিভিল সার্জন। তিনি বলেন, হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে বাড়ির বাইরে গেলে ছাতা ব্যবহার করতে হবে, পানি সঙ্গে নিয়ে নিতে হবে, শরীরে সোডিয়ামের ব্যাল্যান্স করতে পানিতে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে খেতে হবে। তবে রাস্তার পাশের বিক্রিত জুস বা ঠান্ডা পানি পান করা যাবে না। কারণ ওসব বরফমিশ্রিত পানি সমস্যা বাড়াতে পারে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, খুলনা জেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওর স্যালাইনের কোন সংকট নেই। তবে উপজেলা কয়েকটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিছুটা কলেরা স্যালাইনের সংকট আছে, তবে তারা সংকট দুর করার জন্য চাহিদাপত্র দিয়েছেন। খুবশিগগিরই তা আর সংকট থাকবে না।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র মতে, খুলনার ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কলেরা স্যালাইন আছে ৩৩৩ ( ১০০০ এমএল) এবং ১১৩৩ ( ৫০০ এমএল) পিস এবং ওর স্যালাইন ( খাওয়ার স্যালাইন) আছে ২০ হাজার পিস, কয়রায় কলেরা স্যালাইন নেই, ওর স্যালাইন আছে ১২ হাজার পিস, দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কলেরা স্যালাইন ১০০ পিস (১০০০ এমল) এবং ৩০০ ( ২০০ (এমএল), ওর স্যালাইন আছে ৪০ হাজার পিস, ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কলেরা স্যালাইন ২০০ পিস (৫০০ এমএল), তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫০ ( ১০০০ এমএল) এবং ৪০০ ( ৫০০ এমএল) পিস এবং ওর স্যালাইন আছে ৩৫ হাজার পিস, রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কলেরা স্যালাইন নেই। ২৭ হাজার পিস ওর স্যালাইন রয়েছে। পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কলেরা স্যালাই মওজুদ আছে ৪০০ (৫০০ এমএল) পিস এবং ওর স্যালাইন আছে ৫০ হাজার পিস। খুলনা বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মিজানুর রহমান বলেন, তার হাসপাতালে ওর স্যালাইন এবং কলেরা স্যালাইনের সংকট নেই। এছাড়া দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: সুদিপ বালা বলেন, আপাতত তার হাসপাতালে ওর স্যালাইন ও কলেরা স্যালাইনের কোন সংকট নেই। তবে ওই দুই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ওই সব স্যালাইনের কতটুকু মওজুদ আছে তা খাতাপত্র না দেখে বলতে পারবো না।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরএমও ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, ঈদের পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ করে রোগী বাড়ছে। গরমের কারণে শিশু ও বয়স্করা বিভিন্ন কারণে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। তার দেওয়া তথ্য মতে, বৃুধবার সকাল ৭টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত খুমেক হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলো মোট ১৩০৫ জন। এর মধ্যে সাধারণ রোগী পুরুষ ভর্তি ছিলো ৫৫৩ জন, মহিলা ছিলো ৫৩০ জন। এছাড়া শিশু রোগী ভর্তি ছিলো ১০৩ জন।
খুলনা আবওয়াবিদ মো: আমিরুল আজাদ গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ প্রতিবেদককে জানান, এ দিন দুপুর তিন টার পর খুলনা বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোর ও চুয়াডাঙ্গায়। এই দুই জেলাতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিলো ২৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগেদিন বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং খুলনায় ছিলো ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ১৬ এপ্রিলে বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং খুলনায় তাপমাত্রা ছিলো ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি বলেন, এই মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঝড়-বৃষ্টি হলেও খুলনায় এখন পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি। তবে আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে খুলনায় বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, ঋতু পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে শিশুদের জ্বর, চিকেন পক্স, মামসসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি হচ্ছে। গরমকালে ধুলাবালি বেড়ে যাওয়া শিশুদের অ্যাজমা ও কাশির প্রকোপ বেড়ে যায়। অনেকের ঘামাচি ও পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তবে আতঙ্কিত না হয়ে শিশুদের স্বাভাবিক পানি পান করাতে হবে।
নগরীতে ইজিবাইক চালক মো: নুরুজ্জামান বলেন, প্রচন্ড গরমে মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। যার কারণে রাস্তায় কয়েকদিন ধরে যাত্রী সংখ্যা কম পাচ্ছেন। কিন্তু আমরাও তো ঘরে বসে থাকতে পারি না। ইজিবাইক না চালালে সংসারের খরচ জোটাবো কি ভাবে। তাই যতই গরম পড়–ক আমাদের ঘর থেকে বের হতে হয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button