সংবাদ প্রকাশের পরও থেমে নেই ডুমুরিয়ার এ লতিফ ফিলিং স্টেশনের অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডার রিফিল

বসুন্ধরা গ্রুপের জিডি
স্টাফ রিপোর্টার ঃ পানিসহ যানবাহনের গ্যাস সিলিন্ডারে ভরে বিক্রির অভিযোগে সংশ্লিষ্ট ফিলিং স্টেশনের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। ডুমুরিয়া থানায় গত ২৮ মার্চ ভুক্তভোগী কোম্পানি বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেডের মোংলা প্লান্টের ডেপুটি ম্যানেজার জামিল আহমেদ বাদী হয়ে জিডিটি করেন। এ বিষয়ে গত ১৮ এপ্রিল দৈনিক প্রবাহে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এদিকে, প্রতিবেদন ও জিডির পরও সংশ্লিষ্ট ফিলিং স্টেশনটি তাদের এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করেনি। বরং বহাল তবিয়তে ক্রস ফিলিং চালিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, খুলনার বেশির ভাগ গ্যাস ফিলিং স্টেশনে গ্যাস চেম্বার থাকে উন্মুক্ত। কিন্তু ডুমুরিয়ার এ লতিফ ফিলিং স্টেশনের গ্যাস চেম্বার ইটের গাঁথুনি দিয়ে ঢাকা। এই ফিলিং স্টেশনের মালিক মো. আব্দুল লতিফ জমাদ্দারের মেয়ে শারমিন পারভিন ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। প্রশাসনের কেউ অভিযোগ আনলে এই মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সকলকে সামাল দেন বলে অভিযোগ করেন বিস্ফোরক পরিদপ্তর খুলনা কার্যালয়ের পরিদর্শক ড. মো. আসাদুল ইসলাম।
পরিদর্শন করে ক্রস ফিলিংয়ের প্রমাণ পেয়েছেন এবং ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছেন জানিয়ে আসাদুল ইসলাম জানান, তারা কোন পদক্ষেপ নিতে গেলে ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শারমিন পারভিন যোগাযোগ করেন। এমনকি তাদের হুমকিও দেন। ফলে তারা অনেকটা অসহায় অবস্থায় আছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি মাত্র কয়েকদিন হলো যোগদান করেছেন। তাই এ ব্যাপারে কিছু জানি না। তবে অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক মোহাম্মদ সেলিম জানান, তারা তদন্ত করেছেন। অচিরেই ব্যবস্থা নেবেন। বসুন্ধরা এলপিজির মোংলা পোর্ট এরিয়ার ডেপুটি ম্যানেজার জামিল আহমেদ জানান, বিষয়টি লিখিতভাবে বিস্ফোরক পরিদপ্তর, জেলা প্রশাসক ও শ্রম অধিদপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন। তারা এই অবৈধ রিফিল বন্ধের চেষ্টা চালাচ্ছেন। কারণ এতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা জানান, জিডি গ্রহণ করে তদন্তের জন্য এসআই বিশ্বজিৎ পালকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিয়ম অনুযায়ী আদালতকে অবহিত করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বিশ্বজিৎ পালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তদন্ত করার জন্য বিধান মোতাবেক আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের অনুমতির পর তদন্ত শুরু করা হবে। খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফিলিং স্টেশনের মালিকের মেয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ায় প্রশাসন অসহায় কিনা জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক জোর দিয়ে বলেন, ‘প্রশাসন অসহায় নয়।’ এসময় জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিকভাবে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন করে ব্যবস্থা নিতে বলেন। সূত্র মতে, ভৌগলিক কারণে ডুমুরিয়ার এই ফিলিং স্টেশন হতে খুলনা-সাতক্ষীরা-যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় গ্যাস সরবরাহ হয়ে থাকে। এমনকি ঢাকায় যাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। বসুন্ধরার এলপিজি গ্যাস সরবরাহ করলে ডিলাদের মুনাফা হয় সিলিন্ডার প্রতি ৫০-৬০ টাকা আর এই ক্রস ফিলিং করলে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতি সিলিন্ডারের মুনাফা করেন ৫০০-৬০০ টাকা। যানবাহনের গ্যাসের লিটার ৬৮ টাকা আর রান্নার গ্যাসের লিটার পড়ে ১০৭ টাকার ওপরে। তবে এসব ক্রস রিফিল গ্যাস সিলিন্ডারের পানিসহ এক হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। বসুন্ধরা, ওমেরা, লাফার্জ সব ব্রান্ডের সিলিন্ডারে এখানে ক্রস ফিলিং হয়। আট-নয়শ থেকে এক হাজার টাকার গ্যাস সরবরাহ করা হয়। অথচ বসুন্ধরার ডিলার মূল্য ১৫৫০ টাকা আর গ্রাহকের কাছে বিক্রি মূল্য ১৬০০ টাকা।
এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বলেন, প্রশাসন ম্যানেজ করেন ডুমুরিয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শারমিন পারভিন। তাই আইন তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না।