স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় ৬ জনের বিরুদ্ধে যৌতুক দাবি ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় দুই মামলা

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনায় মো. জামাল উদ্দিন শেখ নামক একজন আইনজীবীসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে যৌতুক দাবি এবং নারী নির্যাতনের ঘটনায় পৃথক ধারায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। উম্মে সালমা বাদী হয়ে খুলনার পৃথক আদালতে মামলা দুটি দায়ের করেন। এরমধ্যে খুলনার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর আমলি আদালত রূপসায় সোমবার (২৯ এপ্রিল) যৌতুক আইনে এবং খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল নং-২ আদালতে ২৫ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দুটি দায়ের করা হয়। মামলায় আইনজীবী স্বামী জামাল উদ্দিন শেখ, শশুর রেজাউল করিম, শাশুড়ি হালিমা বেগম এবং আত্মীয় সীমা খাতুন, রেজিনা খাতুন ও শাহিনা আক্তারকেও আসামি করা হয়েছে। এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর জামাল উদ্দিন শেখের সাথে ইসলামী শরীয়তের বিধান মতে ৩ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্যে তার বিবাহ হয়। বিবাহের পর বাদিনী ও ১নং আসামী একসঙ্গে ঘর-সংসার করতে থাকা অবস্থায় একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তার নাম মোঃ অসিউর রহমান, বয়স- ৬ বছর। বিবাহের সময় ১নং আসামী বার এ্যাট “ল” পড়ার কথা বলে উপঢৌকন স্বরূপ ৫ লক্ষ টাকা শ্বশুর বাড়ী থেকে গ্রহণ করে। এছাড়া বিবাহের সময় একটি মটর সাইকেল (পালসার), স্বর্ণের অলংকার ০৬ (ছয়) ভরি, টেলিভিশন, ফ্রীজ, বঙ্খাট, শো-কেস, ওয়ারড্রফ, শোফা, আলমারী এবং রান্নার সামগ্রি প্রদান করা হয়। এর মধ্যে সংসার করার ০৬ (ছয়) মাস পর থেকেই আসামী পুনরায় জমি ক্রয়ের জন্য ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে। উক্ত যৌতুকের টাকা না দেয়ায় বাদিনীকে ১নং আসামী শারিরীক ও মানষিক নির্যাতন করতে থাকে। যৌতুক স্বরূপ ৫ লক্ষ টাকা এবং বাদিনীর নামে থাকা ১ বিঘা জমি বিক্রি করে দিতেও বলে। বাদিনী লোক লজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু না বলে নিরবতা পালন করতে থাকে। একপর্যায়ে আসামীকে বাদিনী গত ৮ মার্চ সকাল অনুমান ৯ টারদিকে যৌতুকের ৫ লক্ষ টাকা অথবা জমি বিক্রির জন্য বাদিনীকে বলিলে বাদিনী টাকা ও উক্ত জমি বিক্রিতে অস্বীকৃতি জানালে বাদিনীকে ছেলেসহ এককাপড়ে আসামীর বাড়ী থেকে বের করে দেয় এবং বলে যে, যৌতুকের টাকা যোগাড় করতে পারলে সংবাদ দিও। এমতাবস্থায় বাদিনী ও তার ভাই, বোন, মাতা ও আত্মীয়স্বজন বিষয়টি মিমাংসার জন্য আসামীকে বাদিনীর পিতার বাড়ীতে আসার অনুরোধ করিলে আসামী, আসামীর পিতা-মাতা, আসামীর ২ বোন এবং একজন আত্মীয় পরিচয়কারী মহিলাকে নিয়ে বাদিনীর পিতার বাড়ী গত ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় আসে। আসামীদের বাদিনী, বাদিনীর ভাই ও মাতা আপ্যায়ন করেন। অতঃপর বিভিন্ন আলোচনার একপর্যায়ে রাত অনুমান ০৯টারদিকে ১নং আসামী বাদিনীকে বলে যে, যৌতুকের ৫ লক্ষ টাকা ও জমি বিক্রির কথা বলে। কিন্তু দিতে অস্বীকার করলে ১নং আসামী বাদিনীর চুল ধরে মাথা, পিঠ, বুক ও তলপেটে হাত ও পা দিয়ে মারতে শুরু করে। তখন ৪নং আসামী বাদিনীর গলা চেপে ধরে। বাদিনী মাটিতে লুটায়ে পড়লে তখন অন্যান্য সকল আসামীগন বাদিনীকে মাথায়, মাজায়, বুকে, পিঠে, তলপেটে কিল চর ও লাথি মারতে থাকে। বাদিনীর ডাক-চিৎকারে বাদিনীর ভাই, পাশের বাড়ীর ১০/১৫ জন হাজির হয়। তাদের দেখে আসামীগন মুহুর্তের মধ্যেই পাশে থাকা ইজিবাইকে উঠে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং যাওয়ার সময় বলে যে, যৌতুকের টাকা না পেলে অন্যত্র আরো বিবাহ করিয়া যৌতুক নিবে এবং বাদিনীকে তালাক প্রদান করিবে। ১নং আসামী আরো বলে যায় যে, আমি উকিল আমার কিছু করতে পারবি না, আর বেশী বাড়াবাড়ি বা কেস করলে পরে এসে জীবনে শেষ করে ফেলবো এবং তোকে (বাদিনী) সহ পরিবারের অন্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিব দেখি কি করতে পারিস।
বাদিনী অসুস্থ্য হয়ে পড়লে স্থানীয় ডাক্তার এর নিকট থেকে ঔষধ খাওয়ানো হয়। পরবর্তীতে গত ২৩ এপ্রিল সকালে বাদিনী বেশী অসুস্থ হলে অনুমান সকাল ১১টারদিকে সময় খুলনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসে এবং চিকিৎসা গ্রহণ করে। বাদিনী ও তার ভাই, বোন, মাতা সহ আত্মীয়স্বজন বিষয়টি মিমাংসা করার চেষ্টা করিয়া ব্যর্থ হয়ে থানায় মামলা করিতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ বাদিনীকে বিজ্ঞ আদালতে মামলা করিতে পরামর্শ প্রদান করের। আসামীদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত-২০০৩) এর ১১(গ)/৩০ ধারার অপরাধ আমলে নিয়া আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যুর আবেদন জানানো হয়।
মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে বাদী পক্ষের আইনজীবী মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল ২ এ দায়েরকৃত মামলার তদন্ত বাদিনের বাড়ি রুপসা উপজেলার শ্রীফলতলা ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে দায়েরকৃত মামলার আদেশ হাতে পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button