হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও এখনও পুরুষের অর্ধেক মজুরী পান কয়রার মুন্ডা নারীরা

আজ মহান মে দিবস
রিয়াছাদ আলী, কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি ঃ এখন অন্যর ঘেরে ঘাস বাছাই ও বোরো মৌসুমের ধান কাটার কাজে ব্যস্ত মুন্ডা নারী শ্রমিকরা। এ কাজের জন্য প্রতিদিন পুরুষের অর্ধেক টাকা মজুরি পান। তারপরেও অভাব অনটনের জন্য বৈষম্যের শিকার হয়েও হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে পুরুষের অর্ধেক মজুরি পেয়েও সংসার চালানোর কাজ করে যাচ্ছেন কয়রার আদিবাসী নারী সদস্যরা। কাকডাকা ভোরে শুরু হয় বাসন্তী মুন্ডার (৩২) দিন। সকালে রান্না করে খেয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অন্য নারীদের সঙ্গে অন্যর মৎস্য ঘেরে ঘাঁশ বাছাই করার কাজের পাশাপাশি ধান কাটতে বিলে যান। দুপুরে এসে পরিবারের সদস্যদের জন্য রান্না করেন। এরপর খেয়ে বিলে কাজে ছোটেন আবার। কোন না কোন সময় মাটির কাজও করে থাকেন। এভাবে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন বাসন্তী মুন্ডাসহ খুলনার কয়রা উপজেলা সদরের ৬নং কয়রা গ্রামের মুন্ডা সম্প্রদায়ের নারী দিনমজুররা। মাঠে পুরুষের সমান কাজ করেও মজুরি পান কম। নারীরা যে কাজে দিনমজুরি পান ৩০০ টাকা, সেই একই কাজ করে পুরুষ শ্রমিকেরা পান ৬০০ টাকা করে। সুন্দরবন আদিবাসী মুন্ডা নারী সংস্থার সভানেত্রী সাধনা মুন্ডা বলেন, বর্তমানে কয়রায় মুন্ডা নারী শ্রমিক আছেন ২৫০ জন। তারা যেমন পরিশ্রমী, তেমনি সময়নিষ্ঠ। সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরা থেকে শুরু করে মাঠে শস্যবীজ রোপণ, ধান লাগানো, ধানকাটা, ক্ষেতের বিভিন্ন তরিতরকারী লাগানো কাজে পুরুষের চেয়ে এসব নারী বেশি শ্রম দেন। এরপরও মজুরি পান পুরুষের অর্ধেক। কয়রা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘নারীরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করলেও পুরুষের সমান মজুরি পাচ্ছেন না, এটা খুবই দুঃখজনক। আমি মনে করি, নারী শ্রমিকদেরও সমান মজুরি দেয়া উচিত।’ নলপাড়া গ্রামের অয়ন্তিকা মুন্ডার এক ছেলে ও এক মেয়ে। সংসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তার স্বামী। এ জন্য তিনিও কাজে নামেন। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এই নারী বলেন, সারাদিন অন্যের জমিতে কাজ করেন। এজন্য একবেলা খাবার ও ২৫০ টাকা মজুরি দেন গৃহস্থ। মাঠে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করেও সমান মজুরি পান না। দীর্ঘদিন ধরে জমিতে ধান রোপণ, পাকা ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করে আসছেন। উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাটকাটা গ্রামের মুন্ডাপাড়ার নারী শ্রমিক পুতুল মুন্ডা। তিনি বলেন, ঝড়, বৃষ্টি, শীত উপেক্ষা করে অনেক কষ্ট করে জমিতে কাজ করেন। সে তুলনায় মজুরি পান কম। বর্তমানে অন্যের মৎস্যঘেরে প্রচন্ড রোদ উপেক্ষা করে শ্রমিকের কাজ করলেও মজুরি পান পুরুষের তুলনায় অনেক কম। খুলনা জেলা জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিরাপদ মুন্ডা বলেন,কয়রার আদিবাসী নারী সদস্যরা এ সময়ে বোরো-আমন মৌসুমে চারা রোপণ, ধান কাটাসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফসলের পরিচর্যা, মাটিকাটা, চাতাল, ইটভাটার কাজ এবং রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন তারা। এদের মজুরী বৃদ্ধির ব্যবস্থা গহনের দাবি জানিয়েছেন তিনি। ময়না মুন্ডা, অঞ্জলী মুন্ডা সহ আরও অনেক নারী শ্রমিকরা বলেন, কেবল অভাবের তাড়নায় কম মজুরি পেয়েও মাঠেঘাটে পুরুষ শ্রমিকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করেন তারা। বৈষম্য থেকে পরিত্রাণের দাবি জানিয়েছে এই মুন্ডা নারীরা। কয়রা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাসিমা আলম বলেন, অনেক আগে থেকেই কয়রায় নারী ও পুরুষ শ্রমিকের মধ্যে শ্রমের মজুরি বৈষম্য চলছে। নারীরা যে শ্রম দেন, টাকার অঙ্কে হিসাব করলে সেটা পুরুষের চেয়ে বেশি হওয়ার কথা। আসলে এ অঞ্চলে নারী শ্রমিকদের সব সময় উপেক্ষিত রাখা হয়েছে। সামাজিক সচেতনতাই এই বৈষম্য দূর করতে পারে।