প্রচারণায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন

খুলনায় তামাক কোম্পানির বিজ্ঞাপন
খবর বিজ্ঞপ্তি ঃ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অসংক্রামক রোগের চাপে বিপর্যন্ত। হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার এই তিন অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ তামাক ব্যবহার। দেশের তিন কোটির বেশি মানুষ তামাক ব্যবহার করে। আর এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে তামাক ত্যাগ করাতে সরকার নানা উদ্যোগে ব্যস্ত। অপরদিকে কোম্পানিগুলো আইন ভঙ্গ করে নতুন ধূমপায়ী তৈরি এবং দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করতে নানা অপকৌশল অবলম্বন করছে। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর বাংলাদেশে ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায় এবং ১৫ লক্ষাধিক মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত নানা জটিল রোগে ভুগছে। প্রতি বছর ৬১ হাজারের অধিক শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এইসব অকাল মৃত্যু এবং জটিল রোগ ভুক্তভোগী পরিবারকে সম্পূর্ণ এলামেলো করে দেয়। দেশের অর্থনীতিতেও তা ভয়ংকর নেতিবাচক প্রভাব রাখে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি কর্তৃক পরিচালিত গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, তামাক ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় এবং কর্মক্ষমতা হ্রাসের কারণে সরকারের বাৎসরিক ব্যয় হয় ৩০ হাজার কোটি টাকা। বিগত ৫ বছরে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ব্যয় যে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ২০০৫ সালে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ প্রণয়ন এবং ২০০৬ সালে সংশ্লিষ্ট বিধি জারি করা হয়। ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়। এই আইনের অন্যতম লক্ষ্য দেশে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা এবং নতুনদের তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারা-৫ এ তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা ও পৃষ্ঠপোষকতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু খুলনায় তামাক কোম্পানিগুলো আইন ভঙ্গ করে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিক্রেতাদের উৎসাহিত করছে। অতি সম্প্রতি খুলনার ২০টি এলাকায় (রুপসা, টুটপাড়া, পিটিআই, রয়্যাল, সাতরাস্তা, ময়লাপোতা, শিববাড়ী, ফেরিঘাট, রেল স্টেশন, সাত নম্বর ঘাট, নিউমার্কেট, সোনাডাঙা, গল্লামারী, জিরো পয়েন্ট, নিরালা, শান্তিধান, খালিশপুর, দৌলতপুর, বয়রা, বিএল কলেজ মোড়) পৃথক এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে নানাভাবে তামাক কোম্পানিগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে, বাজার, বাস স্টেশন ও জনবহুল এলাকায় তামাকের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার হার বেশি। বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে তামাক কোম্পানির মদদে কালার ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে, রঙ্গীন ড্যাংলার, সিগারেটের ফাকা প্যাকেট, লাইটিং বোর্ড, বিভিন্ন অফার সম্বলিত লিফলেট, বিনামূল্যে সিগারেট বিতরন, উপহার সামগ্রী বিতরন, ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস এর মাধ্যমে বিভিন্ন অফার সম্বলিত ভিডিও প্রদর্শনসহ নানা অভিনব ও আকর্ষণীয় উপায়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যা আইন অনুসারে সম্পূর্ন নিষিদ্ধ ও আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এছাড়াও ক্রেতা ও বিক্রেতাকে বিভিন্ন সামগ্রী উপহার হিসেবে দেওয়া। পাশাপাশি প্রচারণা ও বিপণন কাজে তরুণদের ব্যবহার করে কিশোর ও তরুণদের ধূমপানে উদ্বুদ্ধ করতে তাদের মধ্যে বিনামূল্যে সিগারেট বিতরণ করছে। আইনে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের কাছে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বিক্রেতারা শিশু-কিশোরদের কাছে অবাধে সিগারেট বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। আইন বহির্ভূত এ সকল কার্যক্রমের মূলে রয়েছে দুটি বিদেশী সিগারেট কোম্পানি- ‘বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি (বিএটি) ও ‘জাপান টোব্যাকো কোম্পানি (জেটিআই)। তামাক কোম্পানির আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের মূল লক্ষ্য হলো কিশোর ও তরুণেরা যারা এখনো ধূমপান করতে শুরু করেনি, তাদেরকে ধূমপানও তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণে উৎসাহিত করা। জনগণের সুরক্ষার জন্যই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে তামাকের বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এজন্য তামাক কোম্পানির সব ধরণের অপতৎপরতা বন্ধ করা জরুরী। ২০২৩ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণে জাতীয়ভাবে খুলনা জেলা টাস্কফোর্স কমিটি পুরস্কার গ্রহণ করলেও পরবর্তী সময় থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারেনি। এমতাবস্থায় জেলা প্রশাসনের সক্রিয় উদ্যোগ তামাক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারে।