খুলনা গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট আটক
# ম্যাজিস্ট্রেট সেজে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালাত চক্রটি, দিত জরিমানা আদায়ের রসিদ #
# ২৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভুয়া মোবাইল কোর্ট পরিচালনা চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে ৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকা #
স্টাফ রিপোর্টার ঃ ভূয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেজে ভ্রম্যমান আদালত পরিচালনা করা প্রতারণা চক্রের মুলহোতাকে গ্রেফতার করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুুিলশ( কেএমপি)’র গোয়েন্দা বিভাগ। তার নাম এম, সোহেল আরমান (৩৮)। সে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বাসিন্দা মো: আবুল ফজলের পুত্র। এ সময় ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট তার ব্যবহৃত সীল-প্যাট, জরিমানা আদায়ের রশিদ বই ইত্যাদিসহ জব্দ করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার কেএমপি’র ডিবি কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য তুলে ধরেন খুলনা গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ( অতিরিক্তি ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) বি.এম নূরুজ্জামান (বিপিএম)। এ সময়ে ডিবি প্রদান বলেন, নগরীতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভ্রম্যমান আদালত পরিচালনা করার সময়ে কোন ব্যক্তির ওই অভিযানে লোকজনদের বিন্দুমাত্র সন্দেহ হলে তাদেরকে কেএমপি’র ডিবি কার্যালয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদেরকে আহবান জানিয়েছেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার বি.এম নূরুজ্জামান বলেন, গত ৮ জুন খুলনা সদর থানাধীন ডাকবাংলা মোড়ে লাভলু হোটেলে খুলনা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে উক্ত হোটেল ম্যানেজারের নিকট হতে জরিমানার টাকা আদায় করেন। ভুয়া এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সাথে আনসার সদস্যরা ছিলেন। বিষয়টি হোটেল মালিক জানতে পেরে তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক খুলনা এর কার্যালয়ে যোগাযোগ করে এবং সিসি টিভি ফুটেজ দেখে জানতে পারেন যে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, খুলনা হতে গত ৮ জুন ডাক-বাংলা এলাকায় কোনো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়নি। জেলা প্রশাসক খুলনা বিষয়টি পুলিশ কমিশনার, কেএমপি, খুলনাকে অবগত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন বলে প্রেস ব্রিফিং জানান ডিবি প্রধান। মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নির্দেশক্রমে ডিসি (ডিবি) খুলনা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের একটি চৌকস টিম ভুয়া মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট সনাক্ত ও গ্রেফতারের কার্যক্রম শুরু করে। উক্ত টিম তথ্য প্রযুক্তি ও বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে ১০ জুন রাত সাড়ে ১১টায় খালিশপুর থানাধীন বৈকালী এলাকা হতে উক্ত ভূয়া মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট এম, সোহেল আরমানকে সনাক্ত পূর্বক তার ব্যবহৃত জরিমানা আদায়ের বহি, ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক কারাদন্ড বা জরিমানার জন্য কয়েদের পরোয়ানা ফরম, জব্দ তালিকা ফরম, অভিযোগ গঠন ফরম, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা সংক্রান্ত রিপোর্ট ফরম, সহকারী কমিশনার ও এক্সিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, খুলনা এবং মো. আসিফুর রহমান, পরিচিতি নম্বর- ১৬৫০৫, সিনিয়র সহকারী সচিব এক্সিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, পরিবেশ অধিদপ্তর, খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়, খুলনা নামক ২ টি সীল, ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে ব্যবহৃত মোবাইলফোন ইত্যাদি সহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে গ্রেফতারকৃত এম, সোহেল আরমান (৩৮) বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে খুলনা মহানগরীর ২৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভুয়া মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা আদায়ের নামে মোট চার লাখ সাইত্রিশ হাজার টাকা অবৈধভাবে গ্রহণ করেছে। উল্লেখ্য, গ্রেফতারকৃত এম, সোহেল আরমান (৩৮) ইতোপূর্বে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে চাকরি করতেন, বর্তমানে চাকুরিচ্যুত একজন প্রতারক। খুলনা শহরের বিভিন্ন দোকানপাটে নিজেকে খুলনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট” এবং মো. আসিফুর রহমান, পরিচিতি নম্বর-১৬৫০৫, সিনিয়র সহকারী সচিব এক্সিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, পরিবেশ অধিদপ্তর, খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়, খুলনা পরিচয় দিয়ে ভুয়া মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অর্থ আত্মসাৎ করে। ভুক্তভোগি লাভলু হোটেলের ম্যানেজারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে খুলনা সদর থানার মামলা নং-১৪, তারিখ-১০/০৬/২০২৪ ধারা-১৭০/৪০৬/৪১৯ ডিবি প্রধান আরো বলেন, এর সাথে যারা জড়িত তাদেরকে গ্রেফতার করার জন্য অভিযান চলছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে ডিবির প্রধান জানান, আনসার সদস্যরা জানতেন না তারা ভুয়া এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, তবে আনসাররা জড়িত কি না সেটা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে বলে তিনি বলেন।