স্থানীয় সংবাদ

কলাপাড়ায় উপকূলে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে দিনযাপন করছে ৩ লাখ মানুষ

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি ঃ কলাপাড়া উপকূলের ৩ লক্ষাধিক মানুষ ঘূর্ণিঝড়ের খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দীর্ঘদিন ধরে মেরামত না করা, বছরের পর বছর বৃষ্টির পানিতে বেড়িবাঁধের উচ্চতা কমতে থাকলেও মাটি দিয়ে এর উচ্চতা বৃদ্ধি না করাই এই আতঙ্কের অন্যতম কারন। কলাপাড়ার আয়তন ৪৯২.১০ বর্গ কি.মি। এখানে ১২টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় ২৪৪টি গ্রাম রয়েছে। কলাপাড়ার ২২ টি স্পটে ৯.১৯ কি. মি. বেরিবাঁধ বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও প্রতি অমাবশ্যা আর পূর্ণিমার সময় এলাকার মানুষ জ্বলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় থাকে আতঙ্কিত। কলাপাড়া ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র থেকে জানা যায়, গত এক দশকে মে মাসে আটটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। ৪৭/৪ পোল্ডারের মিঠাগঞ্জ বেড়িবাঁধ ইতিমধ্যে বাঁধের রিভার সাইডের মূল বাঁধসহ বাঁধ রক্ষায় দেয়া জিওব্যাগ ধ্বসে আন্ধারমানিক নদীতে পড়ে গেছে। ভাঙ্গন শুরু হয়েছে বাঁধের কান্ট্রি সাইডেও। সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় ফাঁটল। এ কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। ৪৬ পোল্ডারের নীলগঞ্জ ইউনিয়নে গইয়াতলা গ্রামের ভাঙা বাঁধ সংলগ্ন ছয়টি গ্রামের মানুষ রয়েছে আতঙ্কে। বাঁধসহ স্লুইজগেট ভেঙে পড়ার পর এবার বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়ার চরম উৎকন্ঠায় রয়েছে এলাকার মানুষ। সোনাতলা নদীর ঢেউয়ের তোরে গইয়াতলা বেড়িবাঁধের রিভার সাইডের বাঁধ ভেঙে পড়েছে। বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা দিয়েছে ফাটল। সম্পদ হারাণোর আর্তনাদে ক্রমশ ভারি হচ্ছে ৪৭ পোল্ডারের মহিপুর ইউনিয়নে সিডরের পর থেকে নিজামপুর পাঁচ গ্রামের মানুষ দশ বছর যাবৎ জমিতে কোন চাষ করতে পারিনি। এর পর পানি উন্নয়ন বোর্ড জনগনের দূর্ভোগ লাঘবে এখানের রিং বেরিবাঁধ করে দেয়। এখন আবার নতুন করে আতঙ্কে ভুগছে। হুমকিতে পড়ছে উপজেলা নিজামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিদিনই ভাঙ্গছে নতুন করে একেকটি পরিবারের স্বপ্ন। সাগর ও নদীর প্রতিটি জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বসত ঘর, আবাদি জমি ও মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকু। নিঃস্ব হতে হতে এই গ্রামের মানুষের শেষ সম্বল। এখন শুধুই বেঁচে থাকার আকুতি। এভাবে পাউবো’র পূর্ব গৈয়াতলা, লেমুপাড়া, চম্পাপুর, মঞ্জুপাড়া, মুন্সী পাড়া, নিজামপুর, জালালপুর, ধূলাসার, বালিয়াতলী, দেবপুর, নাচনাপাড়া, বড়কলবাড়ি, খ্রীস্টান পাড়ার বেড়িবাঁধ। এলাকাবাসীদের দাবি ত্রাণ চাইনা শুধু বাঁধ চাই। অন্য দিকে ঘূূর্ণিঝড় সিডরে নিশ্চিহ্ন আন্দারমানিক নদী তীরবর্তী এলাকার হাজারো পরিবারের দিন কেটেছে চরম উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্য দিয়ে। ভয়াবহ ভাঙন ও তীর রক্ষা বাঁধ ধসে যাওয়ায় ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কায় তাদের মধ্যে এ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বর্ষা মওসুমে পুরো বাঁধ ভেঙে গেলে অরক্ষিত হয়ে পড়বে পুরো কলাপাড়া উপকূল। শনিবার সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সময় মতো মেরামতের উদ্যোগ নিলে কম খরচ ও কম সময়ের মধ্যে মানসম্মত কাজ সম্ভব। তবে বর্ষার আগ মুহূর্তে যখন নদীতে জোয়ারের পানি বেডে বাঁধ কানায় কানায় পূর্ণ হয়, পাউবো কর্তৃপক্ষ সে সময় এসে মেরামতের উদ্যোগ নেয়। এতে একদিকে খরচ বাড়ে, অন্যদিকে তড়িঘড়িতে কাজ হয় নি¤œমানের। প্রতি বছরের মে মাস এলেই পাউবো কর্তৃপক্ষ বাঁধ মেরামতের তোড়জোড় শুরু করে। কী কারণে তা কেউ বলতে পারে না। অথচ শীত মৌসুমে কাজ করার অনেক সুবিধা। তিনি অভিযোগ করেন, বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের সুযোগ সৃষ্টির জন্য পাউবোর লোকজন অসময়ে এসে কাজ ধরেন। ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে উপকূলে ১২টি ইউনিয়নে বিভিন্ন নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে নদীর তীরবর্তী ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। বর্ষা মৌসুমের আগেই রাবনাবাঁধ, আন্দারমানিক নদীর ভাঙ্গনে দিশেহারা নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হতে শুরু করেছে বসতভিটা আবাদী জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। কিন্তু এর মধ্যে পূর্ব গৈয়াতলা, লেমুপাড়া, চম্পাপুর, মঞ্জুপাড়া, মুন্সী পাড়া, নিজামপুর, জালালপুর, ধূলাসার, বালিয়াতলী, দেবপুর, নাচনাপাড়া, বড়কলবাড়ি, খ্রীষ্টান পাড়া নিশ্চিহ্ন নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষের দিন কাটছে চরম উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্য দিয়ে। মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী ফজলু গাজী জানান, এ এলাকার বেশিরভাগ মানুষই মৎস্যজীবী। আবার কেউ কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। শুধু অমাবস্যা-পূর্ণিমাই নয়, জোয়ার ভাটাার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের। পূর্বের বেবিবাঁধ নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয সহকারী প্রকৌশলী মোঃ শাহ আলম জানান, পাউবোর পূর্ব গৈয়াতলা, লেমুপাড়া, চম্পাপুর, মঞ্জুপাড়া, মুন্সী পাড়া, নিজামপুর, জালালপুর, ধূলাসার, বালিয়াতলী, দেবপুর, নাচনাপাড়া, বড়কলবাড়ি, খ্রীষ্টান পাড়া, চরান্ডা, চরম মোন্তাজ, চালিতবুনিয়া, বড় বাইশদিযা বেরিবাঁধের ২২টি স্পটে ৯.১৯ কি. মি. বেরিবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকতাদের সাথে মিটিং হয়েছে তারা বলছে বেরিবাঁধগুলো পর্যায় ক্রমে মেরামত করা হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button