খুলনায় কাঁচা পণ্যের বাজার চড়া : লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মরিচ-পেয়াজ ও আলুর দাম
মো: মুশফিকুর রহমান মেহেদী ঃ রাজধানীতে যেকোনো পণ্যের দাম বাড়লেই রাতে রাতি বেড়ে যায় খুলনাতেও। স্থানীয়ভাবে কিছু পণ্যের বাজারজাতকরন সহজলভ্য হলেও, কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না খুলনার বাজার। ক্রেতারা বলছেন সিন্ডিকেটের কারণেই হঠাৎ বাড়ছে কাঁচা পণ্যসহ সকল নিত্য পণ্যের দাম। কুরবানী ঈদের আগে থেকেই খুলনার বাজারগুলোতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মরিচ, পেঁয়াজ, আলুসহ কাঁচা পণ্যের দাম। নানা অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা এ সকল পণ্যের দাম রাতারাতি বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন ক্রেতারা। মঙ্গলবার ২৫ জুন খুলনার বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতোই উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে শাক-সবজি, চিনি, চাল, আটা, ডাল ও মাছ। কুরবানীর পর থেকে মুরগীর দাম কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় আছে।
ঈদের আগে থেকেই প্রতিদিনই বাড়ছে কাঁচামরিচের দাম। খুলনার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ৩০০ টাকায়। তবে খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানে কেজিপ্রতি ৫০০ টাকা পর্যন্ত মরিচ বিক্রির রেকর্ড রয়েছে।
এছাড়া ঈদের আগে পাইকারি ৬৫ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। কিন্তু আজ পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮৫ টাকা। এছাড়া খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৯০ -১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যেখানে গত সপ্তাহেও ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে । বিভিন্ন জাতের এবং আমদানি করা রসুন ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০টাকায়।
খুলনার নিউ মার্কেট,চিত্রালি বাজার, রুপসা কাচা বাজার, ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজার, দৌলতপুর কাচা বাজার সহ কয়েকটি বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় এই চিত্র। এদিকে, আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়, যা গত এক-দুই সপ্তাহ আগে অনেক জায়গায় ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। স্থানভেদে পাকা টমেটোর কেজি ১০০-১২০ টাকা, পেঁপে ৫০-৬০ টাকা, জাত ও মানভেদে বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০-৬০ টাকা, বরবটি ৭০-৮০ টাকা ও পটল ৪০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া চিচিঙ্গা ৬০-৭০ টাকা, ঝিঙা ৬০-৭০ টাকা, কচুর লতি ৭০-৮০ টাকা, কচুর মুখী মানভেদে ৮০-১০০ টাকা, গাজর ৮০-১০০ টাকা, শসা ১০০-১১০ টাকা ও কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খুলনা ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারের মাছের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, পাঙ্গাস বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৭০ টাকা কেজি। আকার ও মানভেদে অনেকটা একই দামে বিক্রি হচ্ছে তেলাপিয়া। চাষের কই ২৮০-৩০০ টাকার নিচে মিলছে না। আকার ও মানভেদে রুই-কাতলার দাম হাঁকানো হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি। আকারভেদে শিং মাছ ও বাইলা মাছ প্রতি কেজি প্রকারভেদে ৬০০-৯০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০, পাবদা মাছ ৩৫০ থেকে ৫০০, মলা ৫০০, কাচকি মাছ ৬০০, বাতাসি টেংরা ৯০০, অন্য জাতের টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৭০০, পাঁচ মিশালি মাছ ৪০০-৫০০, বাইম মাছ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি স্থানভেদে ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সোনালি ও লেয়ার জাতের মুরগির কেজি স্থানভেদে ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস আগের মতোই ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্যের এ উর্ধ্বগতি হয়েছে বলে জানান নিউমার্কেটে কাঁচা পণ্য কিনতে আসা এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন খুলনা সহ খুলনার আশেপাশে যে সকল কাঁচা পণ্য উৎপন্ন হয়, হিসেবে সেগুলোর দাম কম হওয়া উচিত। কিন্তু ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটরা রাতারাতি দাম বাড়িয়ে দেয়।
ময়লাপোতা সন্ধ্যাবাজারে মাছ কিনতে আসা রানু বেগম বলেন, একটা সময় চাহিদা মত বাজার করতে পারতাম। বর্তমানে মাছ সহ কাঁচা পণ্যের দাম এত পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে,যেটা নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে।
তবে, সিন্ডিকেট নয়, মালামাল সংকটের কারণে অন্য দ্রব্যের এই দাম বৃদ্ধি হয়েছে বলে জানান পাইকারি ব্যবসায়ীরা। সোনাডাঙ্গা ট্রাক স্ট্যান্ড পাইকারি বাজারের খাইরুল ইসলাম নামক একজন ব্যবসায়ী বলেন, কাঁচা পণ্য বেশিদিন গুদামজাত করে রাখা যায় না। পচনশীল হওয়ায় মালামালের সংকট দেখা দিয়েছে।
তবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত দামের বাইরে পণ্য বিক্রি করলে সাজা ও জরিমানার বিধান রয়েছে বলে জানান সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান। তিনি বলেন সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাইরে যে কোন ব্যবসায়ী যদি পন্য বিক্রি করে তাহলে কৃষি বিপণন আইনে সাজা ও জরিমানার বিধান রয়েছে।