স্থানীয় সংবাদ

মোংলা বন্দরের কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

# তদন্ত শুরু করছে কর্তৃপক্ষ #

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি ঃ মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্পত্তি শাখার উচ্চমান সহকারী মোঃ আবু তাহেরের বিরুদ্ধে বিধি বর্হিভূত পদোন্নতি নেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বন্দর কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে দেয়া বিভিন্ন অভিযোগে জানা গেছে, মোঃ আবু তাহের চাকরির প্রথম অবস্থায় বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগে যোগদান করেন। এ বিভাগে চাকরীকালীন সময়ে তিনি লোহার পাইপ চুরি সংক্রান্ত ঘটনায় জড়িত থাকায় দোষী সাব্যস্থ হয়ে ২০১৬ সালের ১১আগষ্ট বিভাগীয় শাস্তিপ্রাপ্ত হন। পরবর্তিতে তিনি তথ্য গোপন রেখে উর্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিরাপত্তা থেকে জুনিয়র আউটডোর পদে রহস্যজনকভাবে পদোন্নতি নেন। এরপর আবু তাহের ২০২২সালের দিকে প্রভাব বিস্তার করে কৌশলে কতিপয় সিবিত্র নেতা ও উর্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে জুনিয়র আউটডোর পদ থেকে উচ্চমান সহকারী পদে পুনরায় পদোন্নতি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সম্পত্তি শাখায় যোগদান করেন।
এদিকে আবু তাহেরের এ পদোন্নতিকে ঘিরে নানা অভিযোগ ও প্রশ্ন উঠেছে। সরকারী চাকরি বিধির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর উপর বিভাগীয় কোন দন্ড আরোপ করা হলে তিনি তার দন্ড ভোগের মেয়াদ শেষে লঘু দন্ডের ক্ষেত্রে ১বছর ও গুরু দন্ডের ক্ষেত্রে ২বছর পদোন্নতির জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না। এক্ষেত্রে আবু তাহেরের দন্ড ভোগের মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের ১১আগষ্ট থেকে ২০১৯সালের ১০ আগষ্ট। রহস্যের বিষয় হচ্ছে দন্ড ভোগের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আবু তাহেরকে নিরাপত্তা প্রহরী হতে জুনিয়র আউটডোর পদে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারী পদোন্নতি দেয়া হয়। যে পদোন্নতি নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন ও রহস্য দেখা দিয়েছে। অপরদিকে অভিযুক্ত মোঃ আবু তাহের কর্তৃপক্ষের সম্পত্তি শাখায় উচ্চমান সহকারী হিসেবে যোগদান করেই উর্ধতন কর্মকর্তা ও সিবিএ নেতাদের দোহাই দিয়ে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িয়ে পড়েছেন। অভিযোগে জানা গেছে, তিনি দাপ্তরিক অনুমতি ছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষের জমি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর, বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকান ও বসবাসের ঘর বাবদ নিয়মিত মাসিক মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে থাকেন। বন্দর ভবনের পূর্ব পাশের রেল লাইন সংলগ্ন অবৈধ স্থাপনা এর আগে উচ্ছেদ করা হলেও তিনি সম্পত্তি শাখার লোক পরিচয় দিয়ে পুনরায় সেখানে অবৈধ স্থাপনা তৈরীর সুযোগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বন্দরের সাইফ পোর্ট এর বিপরীত স্থানে কর্তৃপক্ষের আম বাগান থেকে চলতি মৌসুমে বিপুল পরিমান আমসহ কাঠাল ও ডাব তিনি কালো বাজারে অহরহ বিক্রি করে অবৈধভাবে আর্থিক লাভবান হয়েছেন। বন্দরের বিদ্যুতের লাইন সংলগ্ন গাছের ছোট ডালপালা কাটার নামে তিনি তার লোকদের দিয়ে বড় বড় ডাল কাটিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বন্দরের ৭টি ডাইক থেকে লোক দিয়ে বিপুল পরিমান বালু তিনি নিলেও কর্তৃপক্ষের তহবিলে জমা দিয়েছে সামান্য পরিমান বালুর টাকা। এ বালু বাণিজ্য করে তিনি লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। এছাড়া আবু তাহের বন্দর ভবনের আশপাশ, ফরেষ্ট অফিস সংলগ্ন এলাকা, পাওয়ার হাউজ এলাকা, পিকনিক কর্ণারসহ বিভিন্ন এলাকায় জায়গা, স্থাপনা, পুকুর বরাদ্দ দিবে বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করে চলেছে। ইতিপূর্বে আবু তাহেরের এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে বন্দর কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন জন অভিযোগ দিলেও রহস্যজনক কারণে এসবের কোন প্রতিকার হয়নি বলে বন্দর চেয়ারম্যান বরাবর দাখিল করা বিভিন্ন অভিযোগে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আবু তাহেরের বক্তব্য জানার জন্য তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব অফিসিয়াল বিষয়, এ কারণে কোন মন্তব্য করবো না। অপরদিকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ নুরুজ্জামান সম্পত্তি শাখার উচ্চমান সহকারী মোঃ আবু তাহেরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গঠিত কমিটির তদন্ত শেষে প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে আবু তাহেরের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button