রিয়াজুলসহ অধিকাংশ আসামি মাদক ব্যবসায়ী : নেপথ্যে প্রভাবশালীর হাত
নগরীতে যুবলীগ নেতা আল-আমিন হত্যার
ঘটনায় ১৯ জনের নামে মামলা : আটক ৩
স্টাফ রিপোর্টার : খুলনা নগরীর ২৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আল আমিন (৪৫) কে হত্যার ঘটনায় খুলনা সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের পিতা শেখ মোঃ জাহাঙ্গীর ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৪-৫ জনকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে মামলার এজাহারনামীয় ৩ আসামি গ্যারেজ মালিক মামুন, ইব্রাহিম শিকদার ও ইসমাইল শিকদারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে, মাদক বিক্রির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকা- ঘটেছে- উল্লেখ করে স্থানীয় সূত্র এর পেছনে একজন প্রভাবশালীর হাত রয়েছে বলে ওই সূত্রটির দাবি।
মামলার আসামিরা হচ্ছে- খুলনা মহানগরীর পূর্ব বানিয়াখামার এলাকার সন্ত্রাসী মিজান শেখ ওরফে দাদো মিজান (৪৫), মিস্ত্রিপাড়া টাওয়ার গলি এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী রিয়াজুল ইসলাম (৩৫), মো. মিরাজ শেখ (৩৮), বাগমারা এলাকার নাঈম (২৫), শাওন (২৬), মনি (২৩), বাগমারা এলাকার চান্দু (৪৫), পূর্ব বানিয়া খামার এলাকার অপু (৩২), মো. হেলাল (২৭), সোহাগ পাটোয়ারী (৪০), তরিক (৪৫), ইব্রাহিম শিকদার (৩০), ইসমাইল শিকদার (২৫), আতা (২৬), আবু সাঈদ (২৫), হৃদয় গাজী (২৫), মো. মামুন (৪৫), শাহ আলম (৪৫), মো. মোস্ত (২৪), সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বানিয়াখামার এলাকায় ২টি সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে। তার মধ্যে একটি দাদো মিজান গ্রুপ, অন্যটি আলামিন গ্রুপ। ২ মাস পূর্বে আলামিন গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে ওই গ্রুপের প্রধানের সাথে তার মনোমালিন্য হয়। এ ঘটনায় আলামিন দাদো মিজানকে হত্যা করার জন্য গুলি করে। কিন্তু সে গুলি বিস্ফোরিত না হওয়ায় ওই যাত্রায় দাদো মিজান প্রাণে বেঁচে যায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আল আমিনের সাথে উল্লেখিত আসামীদের গত কয়েকদিন যাবত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। ইতিপূর্বে ১নং আসামী আলামিনকে হত্যার করার জন্য বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধামকি প্রদান করে। তারই ধারাবাহিকতায় ৮ জুলাই রাত অনুমান ৮ টা ৪৫ মিনিটের দিকে ১০ ও ১১নং আসামীর সাথে খুলনা সদর থানাধীন পূর্ব বানিয়াখামার বড় মসজিদের সন্নিকটে দেখা হলে তারা আলামিনকে লোহার গেট সংলগ্ন ১৭নং আসামী মামুনের গ্যারেজের ভিতরে রাত ৮ টা ৫০ মিনিটের দিকে ডেকে নিয়ে যায়। ১৭নং আসামীর গ্যারেজের ভিতর গিয়ে বসামাত্র বাকী আসামীরা ১নং আসামীর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গ্যারেজের ভিতর প্রবেশ করে আলামিনকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ধারালো চাইনিজ কুড়াল দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপুর্যপুরি কোপাতে থাকে। আঘাতে সে পড়ে গেলে ধারালো চাপাতি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপুর্যপুরি কোপানো হয়। উক্ত কোপ সে নিজে তার বাম হাত দিয়ে ঠেকালে তার বাম হাতের চারটি আঙ্গুল কেটে পড়ে যায়। এ সময় ধারালো চাপাতি দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তার দুই পায়ে হাঁটুতে উপুর্যপুরি কুপিয়ে আলামিনকে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য চর্তুরদিকে ঘিরে ধরে পা দিয়ে পাড়াতে থাকে। এক পর্যায়ে আসামীরা তাকে উপুর্যপুরি কুপিয়ে মুমুর্ষু অবস্থায় গ্যারেজের ভিতর ফেলে রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আলামিনকে কোপানোর দৃশ্য দেখতে পেয়ে আশপাশের অন্যান্য লোকজন দ্রুত আলামিনকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাত ৯ টা ৪৫ মিনিটের দিকে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আলামিনের বিরুদ্ধে খুলনা সদর থানায় হত্যা মাদকসহ ১০ টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে আসামি রিয়াজুল ও মিজানসহ এ মামলার অধিকাংশ আসামী খুলনা মহানগরীর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রোহান হত্যা মামলার আসামী ছিলো। এমনকি সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী রিয়াজুল নিজে এবং সরাসরি তার সহযোগীদের মোটরসাইকেল দিয়ে রোহান হত্যাকান্ডের কিলিং মিশনে জড়িত ছিলো বলে ওই সময় অভিযোগ উঠেছিলো। তবে মামলা থেকে তারা খালাস পায়।
খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল খান বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকা-। আলামিনকে হত্যা করার জন্য দু’টি দলে মোট ২০ জন ছিল। প্রথমটি ব্যর্থ হলে পরের দল তাকে আক্রমণ করে হত্যা করে।
তিনি আরও বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য এ হত্যাকা- ঘটে। রাত ৯টার দিকে দু’জন ব্যক্তি তাকে ডেকে ওই মামুনের গ্যারেজের ভেতর নিয়ে আসে। আলামিন কিছু বুঝে ওঠার আগে সন্ত্রাসীরা তার ওপর আক্রমণ করে এবং ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর পরই ওই দু’ব্যক্তি আবার আলামিনকে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে গ্যারেজ মালিক মামুন, ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে খুলনা থানায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছন। মামলার তদন্ত চলছে, অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
আরও অভিযোগ রয়েছে : এই রিয়াজুলসহ আরও কয়েকজন আসামী দীর্ঘদিন ধরে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবা ও ফেনসিডিল বিক্রি করে আসছে। এই বহুরূপী মাদক ব্যবসায়ী রিয়াজুলের প্রকাশ্যে কোন বৈধ ব্যবসা না থাকলেও কখনো বিউটি পার্লার, কখনো কসমেটিকস এর দোকান, কখনো বাগদা-গলদা চিংড়ি মাছের ব্যবসা, আবার কখনো ইটের ব্যবসার নাম ব্যবহার করে অতি গোপনে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে মাদক বিক্রি করে আসছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এই মাদক বিক্রেতা যেখানে বসবাস করে সেখান থেকে ৬ মাস অথবা ১ বছরের মধ্যে বাসা পরিবর্তন করে আবার নতুন ভাড়া বাড়িতেও শুরু করে এ মাদক ব্যবসা। বর্তমানে এই রিয়াজুলের প্রকাশ্যে কোন চলমান ব্যবসা না থাকলেও মাদকের ব্যবসা রয়েছে বহাল তবিয়তে। রিয়াজুলসহ আরও কয়েকজন আসামী কার ছত্রছায়ায় মাদক বিকিকিনি করছে এটা সাধারণ মানুষের প্রশ্ন ?
এই ধুরন্ধর টাউট রিয়াজুল প্রতিদিন দুপুর হলেই অর্থাৎ ১ টা থেকে ২ টার মধ্যে টেপ দিয়ে পেছানো ফেনসিডিল এবং ইয়াবা নিয়ে তার মাদক ব্যবসায় নিয়োগ করা লোকদের হাতে পৌছে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। মাদক বিক্রেতা রিয়াজুল কক্সবাজার ভ্রমণের নাম করে ইয়াবা বহন করে খুলনায় আসছে- এমন অভিযোগও রয়েছে।
একাধিক মামলার আসামি রিয়াজুল বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থেকে একসময় খালি হাতে খুলনায় এসে রংমিস্ত্রির কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করতো। আর এখন খুলনার মিস্ত্রি পাড়া এলাকায় ফ্লাট ভাড়া করে মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সামান্য রংমিস্ত্রি থেকে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে রিয়াজুল রাতারাতি কাঁচা টাকার মালিক বনে গেছে। মাদক বিক্রেতা রিয়াজুলের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।