ঢাকার মিরনজিল্লা হরিজন কলোনী উচ্ছেদের প্রতিবাদে ও ক্ষতিগ্রস্থদের পূনর্বাসনের দাবিতে মানববন্ধন
খবর বিজ্ঞপ্তি ঃ বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) আয়োজনে ঢাকার মিরনজিল্লা হরিজন কলোনী উচ্ছেদের প্রতিবাদে ও ক্ষতিগ্রস্থদের পূনর্বাসনের দাবিতে বুধবার সকাল ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বিডিইআরএম এর খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি সুব্রত কুমার মিস্ত্রী সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানব বন্ধনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির উপদেষ্টা শেখ আব্দুল হালিম (বীর মুক্তিযোদ্ধা), সভাপতি জাতীয় মানবাধিকার ইউনিট খুলনা মহানগর শাখা, নিশীথ রঞ্জন মিস্ত্রী, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিডিইআরএম কেন্দ্রীয় কমিটি, লিপিকা বৈরাগী, নারী বিষয়ক সম্পাদিকা, বিডিইআরএম, সলিসিটর প্রসেনজিৎ দত্ত, সভাপতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, খুলনা জেলা শাখা। উক্ত মানববন্ধনে বক্তারা বলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্গত মিরনজিল্লা হরিজন কলোনীতে প্রায় চার’শ বছর যাবত দলিত-হরিজন জনগোষ্ঠীর বসবাস। বর্তমানে এখানে প্রায় আট’শ দলিত-হরিজন পরিবার বসবাস করছে। যারা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ নগরীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে। বংশপরম্পরায় এই জনগোষ্ঠী ঢাকা নগরীকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও বর্জ্য অপসারণের মধ্য দিয়ে নগরীকে সুন্দর ও বাসযোগ্য রাখার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করার কারণে ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর মিরনজিল্লার দশজন হরিজনকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। বর্তমানে এই কলোনীতে উক্ত ১০ জন শহীদের স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। কলোনীবাসীসহ হরিজন জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বহুবার দাবি উত্থাপন করা সত্ত্বেও মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী এই ১০ জনকে শহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আজ সেই মহান শহীদদের উত্তরসূরী ও জনগোষ্ঠীর মানুষ তাদের ১০ ফুট বাই ১২ ফুট আয়তনের ঘরে একাধিক প্রজন্ম নিয়ে বসবাস করা বসত ঘরটি হারানোর আশংকায় আতংকিত জীবনযাপন করছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কাঁচা বাজার করার জন্য গত ১১ জুন ২০২৪ তারিখে মিরনজিল্লা হরিজন কলোনীতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। কলোনীর পার্শবর্তী ওয়াল ও ৭টি ঘর বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে ফেললে হরিজন কলোনীর বাসিন্দাদের ও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিবাদের মুখে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। এই অভিযানের ফলে হরিজন কলোনীর ওয়াল, ৭টি বসতঘর সম্পুর্ণ ও ২২টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বসতভিটা হারিয়ে অসহায় মানুষগুলো তাদের ঘর-বাড়ির অবশিষ্ট ধ্বংসস্তুপে খোলা আকাশের নিচে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। উচ্ছেদের চরম আতঙ্ক ও উৎকন্ঠার মুখে কলোনীবাসিদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। এরপর এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার ওপর ৩০ দিনের স্থিতিবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের কাছে বিনীত প্রাথর্না সরকারের পুনরবাসন ছাড়া স্থিতিবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন বহাল রাখবেন। বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম)-এর পক্ষ থেকে দলিত-হরিজন বান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন-এর মাননীয় মেয়র ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি এই উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধের ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর উপযুক্ত ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসন করার দাবি জানাচ্ছি। উক্ত মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, সমাপ্তি বাড়ই, সভাপতি খুলনা মহানগর, জয়দেব দাস, সভাপতি বটিয়াঘাটা, মেঘলা দাস, সাধারণ সম্পাদক, রুপসা, হরিচাঁদ দাস, ধীমান মন্ডল, রতœা দাস, দূর্গা দাস, পবিত্র মন্ডল, ভবানী মন্ডল, রাজেন রবিদাস, শিবপদ দাস।
দাবিসমূহ হচ্ছে, মিরনজিল্লা হরিজন কলোনী উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে, উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্ত সকল পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপুরণসহ পুনর্বাসন করতে হবে, দলিত-হরিজন জনগোষ্ঠীর আবাসন নিশ্চিত করতে হবে, সমগ্র বাংলাদেশে বসবাসরত দলিত-হরিজনদের ভূমির মালিকানা প্রদান করতে হবে; সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় কর্মরত সকল পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের চাকুরী স্থায়ী করতে হবে।