স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় ফের টার্গেট কিলিং

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

কামরুল হোসেন মনি : আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে টার্গেট কিলিং চলছে খুলনায়। অর্থের বিনিময়ে ভাড়াটিয়া খুনি ও নিজের গ্যাংয়ের হাতে এসব হত্যাকা- ঘটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জনপ্রিয় রাজনৈতিক ও একাধিক মামলার আসামিরা নিজের কোন্দলে খুন হচ্ছেন। খুলনায় তিনদিনের ব্যবধানে তিন খুনের ঘটনা ঘটেছে। একের পর এক হত্যাকান্ড, মাদকের রমারমা ব্যবসা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করে তুলেছে।
বুধবার (১০ জুলাই) রাতে খুলনার ফুলতলায় জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধে জের :ধরে মাদকাসক্ত ভাতিজার ধারালো অস্ত্রের ্আঘাতে চাচা শেখ মুজিবুর রহমান (৫৮) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হন। এ সময়ে আহত হন নিহত মজিবুরের স্ত্রী পুষ্পা বেগম (৪৫) ও তাদের ছেলে মিরাজ শেখ (২৩)। তাদের অবস্থা আংশকাজনক হওয়ায় তাদেরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহত শরিফুল ইসলামের পুত্র মো: কুতুব উদ্দিন এ হত্যাকাল্ড ঘটনা। তাকে পুলিশ এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। এর দুদিন আগে সোমবার ( ৮ জুলাই) রাতে নগরীর পুর্ববানিয়াখামার ২৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আল আমিন (৪৫) কে কুপিয়ে হত্যা করে। সে বানিয়াখামার লোহারগেট এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর শেখের ছেলে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বানিয়াখামার এলাকায় দুটি গ্রপপ রয়েছে। একটি আলামিন গ্রুপ, অন্যটি দাদো মিজান গ্রুপ। গত দুইমাস আগে আলামিন গ্রেপ্তার হওয়ার আগে দাদো মিজান গ্রুপের প্রধানের সাথে আলামিনের মনোমালিন্য হয়। এ ঘটনায় আলামিন দাদো মিজানকে হত্যা করার জন্য গুলি করে। কিন্তু সে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় ওই যাত্রায় দাদো মিজান প্রাণে বেঁচে যান। বিষয়টি মিজান এড়িয়ে গেলেও কাউন্টার ঘটনাটি ঘটে যায় ওই রাতে। অপর একটি সূত্র জানায়, স্থানীয় মাদক বিক্রির ঘটনাকে কে›ন্দ্র করে এ হত্যাকান্ড। এর পেছনে একজন প্রভাবশালীর হাত রয়েছে।
খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ মো: কামাল খান সাংবাদিককে বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। আলামিনকে হত্যা করার জন্য দু’টি দলে মোট ২০ জন ছিল। প্রথমটি ব্যর্থ হলে পরের দল তাকে আক্রমণ করে হত্যা করবে। তিনি বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য এ হত্যাকা-। রাত ৯টার দিকে দু’জন ব্যক্তি তাকে ডেকে ওই মামুনের গ্যারেজের ভেতর নিয়ে আসে। আলামিন কিছু বুঝে ওঠার আগেই সন্ত্রাসীরা তার ওপর আক্রমণ করে। এখানেই ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে গ্যারেজ মালিক মামুন, ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে খুলনা থানায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছন। মামলার তদন্ত চলছে, অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তাওে জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর হত্যাকা-ে এজাহাভুক্ত এক নম্বর আসামি মিজান শেখ। সে পুর্ববানিখামার চৌধুরী গলি বুড়ির বাগান এলাকার বাসিন্দা মিজান শেখ। সে স্থানীয় ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। সে বাগেরহাটে জেলার মোড়লগঞ্জে উপজেলায় ৯নং বলবুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৬নং ওয়ার্ডে মেম্বর পদে নির্বাচন করেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। এর আগে শনিবার রাতে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শরফপুর ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রিয়ে চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বত্তরা। অভিযোগে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা আজগর বিশ্বাসসহ ২ জনের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে ডুমুরিয়ার জোবায়েদ আলী মিলনায়তনে দলীয় কর্মীসভা শেষে মোটরসাইকেলযোগে খুলনার বাসায় ফিরছিলেন রবি। গুটুদিয়ার ব্র্যাক হ্যাচারির কাছে দুর্বৃত্তরা পিছন থেকে গুলি করলে রবির পিঠে গুলি লাগে। রবিকে উদ্ধার করে দ্রুত ডুমুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আজগর বিশ্বাস আবাসন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তিনি ‘বিশ্বাস প্রোপার্টিজ’ নামের একটি আবাসন প্রকল্পের মালিক। তিনি এবারের ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। নিহত রবিউল ইসলাম উপজেলা নির্বাচনে আজগরের প্রতিদ্বন্দ্বী এজাজ আহমেদের পক্ষে কাজ করেছিলেন। পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সদস্যদের ধারণা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রবিউল ইসলামের কাছে হেরে যাওয়া প্রার্থী, উপজেলা নির্বাচনে হেরে যাওয়া আজগর বিশ্বাসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রবিউলকে হত্যা করেছেন। হত্যার ঘটনায় রোববার রাতে রবিউলের স্ত্রী শায়লা ইরিন বাদী হয়ে ডুমুরিয়া থানায় মামলা করেন। এছাড়া মাদকের অর্থ লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্বে খুলনার দক্ষিণ টুটপাড়ায় রনি সরদার (২৪) নামে এক যুবককে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বিরোধের কারণে দীর্ঘদিন এলাকার বাইরে থাকার পর গত ২৮ মে তাকে ডেকে এনে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ওয়ান শুটারগান, দুটি পিস্তলের গুলি, ধারালো ছুরি ও বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে গ্রেফতারকৃতরা। একইভাবে ২৩ জানুয়ারি ময়লাপোতা মোড়ে সাদিকুর রহমান নামে আরেক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনিও মাদক সিন্ডিকেট ও আধিপত্য বিস্তার দ্বন্দ্বে দীর্ঘদিন বাইরে থাকার পর এলাকায় ফিরলে হত্যাকান্ডের শিকার হন। ২০২৩ সালে ৫ অক্টোবর মাদক বেচাকেনা দ্বন্দ্বে গোবরচাকা মোড়ে ইমন শেখ নামে অপর যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button