পুলিশের অভিযানে ৩ টি আগ্নেয়াস্ত্র ৬ রাউন্ড গুলি এবং ২ টি এম্পটি কার্তুজসহ আটক ২
কেএমপি কমিশনারের প্রেসবিফ্রিং
সাবেক ইউপি মেম্বর আরিফ হত্যাকাণ্ড
স্টাফ রিপোর্টার ঃ নগরীর আড়ংঘাটা থানা পুলিশের অভিযানে ৩ টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৬ রাউন্ড গুলি এবং ২ টি এম্পটি কার্তুজসহ সাবেক মেম্বর আরিফ হত্যার ঘটনায় জড়িত ২ জনকে গ্রেফতার করেছেন। গ্রেফতারের বিষয়ে কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা প্রেসবিফ্রিং করেছেন। গতকাল সোমবার খুলনা মেট্রোপলটিন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে দুপুর সোয়া ৩টায় এ প্রেসিব্রিফ্রিং অনুষ্ঠিত হয়। আড়ংঘাটা থানা পুলিশের অভিযানের বিষয়ে কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা মিডিয়া বিফ্রিংয়ে বলেন, “খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং নগরবাসীর সেবায় সর্বদা তৎপর। আমরা বিগত কয়েক মাস থেকেই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী, কিশোর গ্যাং, স্বর্ণ চোরাচালানকারী, মাদক ব্যবসায়ী, জঙ্গি, অস্ত্র-গোলাবারুদ ব্যবসায়ী, চোরাই মোটরসাইকেল, জুয়াড়ি, বিকাশ এবং অনলাইন প্রতারণায় জড়িত প্রতারক, সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানাভুক্ত, হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী ও ভূমিদস্যুসহ সমাজে যারা প্রভাব বিস্তার করে, নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে তাদের গ্রেফতারের জন্য সাঁড়াশী অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি। ২০২৩ সালের গত আগস্ট থেকে ইতোমধ্যেই আমরা ২৯ টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৭২ রাউন্ড গুলি, চোরাই মোটরসাইকেল ও চোরাই যানবাহন, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও মাদক এবং স্বল্প সময়ে ক্লু-লেস মমলার মূল রহস্য উদঘাটনসহ আসামী গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। উল্লেখ্য যে, গত ২৪ জুন রাত সোয়া ১১টায় লোডশেডিংয়ের সময় সাবেক মেম্বর আরিফ বাড়ির বাইরে গেটে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা মোটর সাইকেলযোগে এসে তাকে গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনায় আরিফের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে এজাহার দায়ের করলে আড়ংঘাটা থানার মামলা নং-১০, তারিখ-২৫/০৬/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়। উক্ত ঘটনায় হত্যার কারণ অনুসন্ধান এবং হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষে থানা এবং গোয়েন্দা পুলিশের সমন্বয়ে একটি চৌকস তদন্ত টিম গঠন করা হয়। হত্যাকান্ডের ২৪ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িত ১ জন আসামীকে বিদেশী পিস্তলসহ গ্রেফতার করে। উক্ত মামলায় পরবর্তীতে আরো ২ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয় এবং গ্রেফতাকৃত আসামীরা হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। তাদের স্বীকারোক্তিতে প্রদত্ত তথ্য মোতাবেক আড়ংঘাটা থানা পুলিশ আড়ংঘাটা থানাধীন ল্যাবরেটরী মোড়ের বাসিন্দা মিল্ট সানার পুত্র মোঃ রিয়াদ সানা(১৯)কে গ্রেফতার করে। রিয়াদ সানাকে গ্রেফতারের পর নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেও আরিফ মেম্বর হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং আরো জানায়, তার বন্ধু মোঃ বোরহান উদ্দিনও উক্ত হত্যাকান্ডে ঘটনায় জড়িত এবং তার হেফাজতে কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুলি আছে। রিয়াদ সানার প্রদত্ত তথ্য মোতাবেক আড়ংঘাটা থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম নগরীর দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা গোলকধাম মোড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গত ২৮ জুলাই দিবাগত রাতে আসামী বোরহান উদ্দিন (১৯) কে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃত বোরহান উদ্দিন দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা গোলকধাম মোড় এলাকার বাসিন্দা মো: শামিম মোড়লের পুত্র। গ্রেফতারকৃত আসামীকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তার হেফাজতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি আছে মর্মে স্বীকার করে এবং তার বাসার ২য় তলার একটি ট্রাংকের মধ্যে কাপড়ের তৈরি ব্যাগের ভিতর থেকে ১ টি কাটা বন্দুক, ১ টি ম্যাগজিনসহ পিস্তল, ১ টি ওয়ান শ্যুটার গান, ৬ রাউন্ড গুলি এবং ২ টি এম্পটি কার্তুজ আসামীর নিজ হাতে বের করে দিলে উপস্থিত নিরপেক্ষ সাক্ষীদের সম্মুখে অস্ত্র-গুলি এবং আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার পাশাপাশি দৌলতপুর থানায় অস্ত্র আইনেও মামলা রুজু করা হয়েছে (দৌলতপুর থানার মামলা নং-২৪, ২৯/০৭/২০২৪ খ্রি:, ধারা-১৮৭৮ সালের দি আর্মস এ্যাক্ট এর ১৯ অ । গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে পুলিশ রিমান্ডে এনে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতঃ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের উৎস, উদ্ধারকৃত অস্ত্র অন্য কোথাও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহৃত হয়েছে কিনা, কোথাও ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিলো কিনা, আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে কারা জড়িত তার মূল রহস্য উদঘাটনপূর্বক জড়িত অন্যান্য আসামীদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। মামলাটি তদন্তাধীন। উল্লিখিত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আড়ংঘাটা থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ মিনহাজুল ইসলাম।
প্রেসবিফ্রিংয়ে পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, আড়ংঘাটা থানার সাবেক মেম্বর আরিফ হত্যার ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের জন্য জোর পুলিশ অভিযান অব্যাহত আছে। প্রাথমিক তদন্ত এবং আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা সংঘটিত হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী রিয়াদ সানা খানজাহান আলী আদর্শ কলেজের ছাত্র এবং তার বাবা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। অপর আসামী বোরহান উদ্দিন হাজী মহসীন কলেজের ছাত্র এবং তার বাবা ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। আসামী রিয়াদ সানা ছাত্র হলেও মূলত সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছে। সিডিএমএস পর্যালোচনা করে জানা যায় যে, তার বিরুদ্ধে কেএমপি’র দৌলতপুর থানা এবং আড়ংঘাটা থানায় দুটি মারামারির মামলা রয়েছে।
এ সময় মিডিয়া বিফ্রিংয়ে কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এ্যাডমিন এন্ড ফিন্যান্স) সরদার রকিবুল ইসলাম, বিপিএম-সেবা; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক এন্ড প্রটোকল, অতিঃ দায়িত্বে ক্রাইম এন্ড অপারেশন্স) মোছাঃ তাসলিমা খাতুন; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (উত্তর) অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন; অতিঃ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন্ হাছান, পিপিএম-সেবা; অতিঃ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (উত্তর) সোনালী সেন, পিপিএম-সেবা; অতিঃ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড সিপি) মোহাঃ আহসান হাবীব, পিপিএম ; সহকারী পুলিশ কমিশনার (স্টাফ অফিসার টু পিসি) মোঃ ইমদাদুল হক ; সহকারী পুলিশ কমিশনার (খালিশপুর জোন) মোঃ নাসিম এ-গুলশান ; আড়ংঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী কামাল হোসেন এবং উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মিনহাজুল ইসলাম-সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।