স্থানীয় সংবাদ

খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির ১৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ

সাইফুল-তারা’র সদস্যপদ স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার : খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির তিনটি ব্যাংক সব থেকে হিসাব থেকে প্রায় ১৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক তারিক মাহমুদ তারা’র স্বাক্ষরে উল্লিখিত অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। সদস্যদের বিপুল এ অর্থের গরমিলের অভিযোগে সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সম্পাদক তারিক মাহমুদ তারা’র সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। একইসাথে সমিতির বাকি দুটি হিসাব যাচাইয়ে ৫ সদস্যের অডিট কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে অর্থ আত্মসাৎ এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটি সূত্র জানায়, আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলামসহ সমিতির নেতৃবৃন্দ আত্মগোপন করে। পরে সমিতির সাধারণ সদস্যের দাবির মুখে আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন এডহক কমিটির আহবায়ক আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু। তিনি বলেন, আইনজীবীদের বিশেষ কল্যাণ তহবিলের একটি হিসাবে গড়মিল ধরা পড়লে সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযাযী সদস্যপদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সমিতির সদস্য সচিব শেখ নুরুল হাসান রুবা বলেন, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির বিভিন্ন তহবিলের বিপরীতে তিনটি ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে এর মধ্যে বিগত চার বছরের স্বল্পকালীন কল্যাণ তহবিলের হিসাব যাচাই করে প্রায় ৭৯ লাখ টাকার গরমিল ধরা পড়ে। উল্লিখিত টাকা সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক তারিক মাহমুদ তারা’ র স্বাক্ষরে সাইফুলের ম্যানেজার ইশতিয়াক উত্তোলন করেছে। এছাড়া গত সাত মাসে জেনারেল ফান্ড থেকে বিল ভাউচারের মাধ্যমে ৭০ লাখ ৭৩ হাজার টাকাসহ ভুয়া বিল দেখিয়ে মোট সাড়ে চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর বাইরে সদস্য কল্যাণ তহবিল থেকেও প্রায় ৭/৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তবে জেনারেল ফান্ড এবং সদস্য কল্যাণ তহবিলের কাগজপত্র খুঁজে না পাওয়ায় সঠিক হিসাব মিলানো যায়নি। এ কারণে অডিট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া শুধু গত সাত মাসে আইনজীবী সমিতির কল্যাণ তহবিলে ৪ কোটি ১৮ লাখ ৮১৯ টাকা আয় হয়েছে। কিন্তু সেখানে ব্যাংকে জমা আছে মাত্র ১৯ হাজার ৯০০ টাকা। এছাড়া গত দুই বছর রেজুলেশন খাতায় আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব লেখা হয়নি। তাছাড়া ব্যাংকে থাকা সাড়ে ৭ কোটি টাকার এফটিআর ভাঙ্গানো হয়েছে কোনো হিসাব ছাড়াই। অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
সভা পরিচালনা করেন সদস্য সচিব শেখ নুরুল হাসান রুবা। বক্তৃৃতা করেন চৌধুরী তৌহিদুর রহমান তুষার, মাহফুজুর রহমান মফিজ, তৌহিদুজ্জামান, মোঃ ইউনুস।
প্রসঙ্গত, এর আগে ৬ আগস্ট স্বেচ্ছাচারি ও দুর্নীতির অভিযোগে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির কমিটি বিলুপ্ত করে ৫সদস্যের এডহক কমিটি গঠন করা হয়। ওইদিন সমিতির ১নং হলরুমে সর্বদলীয় আইনজীবী ঐক্যপরিষদ ও সমিতির সকল সাধারণ আইনজীবীদের সমন্বয়ে এক তলবি সভায় এ কমিটি ঘোষনা করা হয়। সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু সভাপতিত্বে ও এড. তৌহিদুর রহমান তুষারের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত তলবি সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমান ও অনির্বাচিত কার্য্যনির্বাহী কমিটি বিলুপ্ত করে ৫ সদস্যের এডহক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির আহবায়ক করা হয় সমিতির সাবেক সভাপতি এড. আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু, সদস্য সচিব হয়েছেন সমিতির সাবেক সভাপতি এড. নুরুল হাসান রুবা, সদস্য তিনজন হলেন যথাক্রমে সাবেক সভাপতি এড. মাসুদ হোসেন রনি, সাবেক সহ সভাপতি এড. আওসাফুর রহমান ও সাবেক সহ সভাপতি এড. হালিমা আক্তার খানম।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button