খুলনা জনতা ব্যাংকে অরুণ বিশ্বাসের ঋণ প্রদানে সাড়ে তিনশত কোটি টাকার দুর্নীতি

# শাস্তির বদলে পদোন্নতি দিয়ে রাজশাহী জোনের জিএম করা হয় অরুন বিশ্বাসকে
# অরুন বিশ্বাসের দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেই গ্রাহকের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা
স্টাফ রিপোর্টারঃ উর্ধতন কর্তৃপক্ষ অনুমতি ছাড়াই সাড়ে তিনশত কোটি টাকা অবৈধ ভাবে ঋন সুবিধা দেবার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেই তদন্তে ব্যাংক কর্মকর্তাকে কৈফিয়াত তলব করেছিল। কেন শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তার চুড়ান্ত নোটিশ দিয়ে ছিল। কিন্তু অভিযেুক্ত কর্মকর্তা ডিজিএম অরুন প্রকাশ বিশ্বাস ইসকনের [ আর্ন্তজাতিক কৃষ্ণ ভাব্পান্ন ] সদস্য হওয়াই তাদের সুপারিশে সমস্ত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। শুধু অব্যাহতি নয় ইসকনের সুপারিশে কর্পেূারেট শাখা ডিজিএম হতে বিধি বর্হিভূত ভাবে সেই জোনের জেনারেল ম্যানেজারে পদোন্নতি দেয়া হয়। বটিয়াঘাটায় বাড়ি হওয়ায় তিনি ব্যাংকে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন। তুঘলগি এই ঘটনা ঘটেছে খুলনার জনতা ব্যাংকের কর্পোরেট শাখায় । সর্বশেষ তাকে রাজশাহী জোনের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে বদলি করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংকের অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে । তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই অনিয়মের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে গ্রাহকের বিরুদ্ধে আদালতে তিনটি মামলা দায়ের করেছেন। মুসলিম অফিসারদের তিনি খুবই চাপের মুখে রাখতেন ও মানুষিক নির্যাতন করতেন বলে কর্মকর্তারা জানান। জনতা ব্যাংকের ডিসিপ্লিনারী ডিপার্টমেন্ট ব্যবস্থাপনা পরিচালক এন্ড সিও মো: আব্দুস ছালাম আজদ স্বাক্ষরে সূত্র :ডিডি/আক/খুলনা কর্পো/কৈফিয়তনামা/ ডিজিএম-৬০৪/২১/৯৬৭ তাং ২৩/০৮/২০২১ জনতা ব্যাংক লিমিটিড চাকুরী প্রবিধানমাল ২০২০ এর ৬২ প্রবিধি মোতাবেক জবান অরুন প্রকাশ বিশ্বাস উপমহাব্যবস্থাপক জনতা ব্যাংক কর্পোরেট শাখা, এবং তার স্থায়ী ঠিকানায় পত্র দেয়া হয়। খুলনায় সংঘটিত অনিয়মের বিষয় রুজুকৃত শৃংখলা মোকদ্দমা বিষয়: কৈফিয়তনামা। সরাসরি দশটি অভিযোগ আনা হয় তার অন্যতম হলো:ব্যাংকে দেয়া জমি মটগেজ মুল্য অস্বাভাবিক দেখিয়ে ঋন নেয়া হয়: খোজঁ নিয়ে জানা গেছে তিন শত ৩৮ কোটি টাকা বিভিন্ন ঋনের বিপরীতে তিনটি প্রতিষ্টান খুলনা রুপসায় আট দশমিক ১৪ একর, বটিয়াঘাটা থানার জিরোপয়েন্ট নয় দশমিক ২৮ একর জলাভূমি এবং বাগেরহাটের ফকির হাটে তিন দশমিক ৩৩ একর জমি মটগেজ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ভূমি অফিস এবং সাব রেজিষ্টার অফিস সরকারী দর অনুযাীয় এই জমির মুল্য সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকার অধিক হবে না। অথাৎ ৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি মটগেজ দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন শত কোটি টাকার ঋন নিয়েছে। শুধু তাই নয় প্রধান কার্ষালয় হতে দেয়া ঋন মঞ্জুরীর অতিরিক্ত টাকা এই প্রতিষ্টানকে দেয়া হয় ,বলে ইতি পূর্বে প্রধান কার্ষালয়ের এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই তদন্ত কমিটিপ গত ২৩/০৮/২০২১ তারিখেকে তৎকালিন ডিজিএম, অরুন প্রকাশ বিশ্বাসকে জনতা ব্যাংক খুলনা কর্পোরেট শাখাকে ১১টি বিষয় অভিযুক্ত করে কারন দর্শানো নোটিশ জারী করেন। এই নোটিশে বলা হয় জনতা ব্যাংক খুলনা কর্পোরেট শাখার ডিজিএম মঞ্জুরীর অতিরিক্ত প্রায় ৫২ কোটি টাকা জামানত ছাড়াই অনিয়ম ঋন সুবিধা দেবার জন্য কেন শাস্তি মূলক ব্যবস্থ্ ানেয়া হবে না, তা জনতে শো-কস এবং বিভাগীয় মামলা দায়ের করেছে। ব্যাংকের কেন্দ্রীয় ডিসিপ্লিনারী ডিপার্টমেন্ট এই একই ভাবে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের শোকজ : জনতা ব্যাংকের ব্যবস্পাপনা পরিচালক মো: আব্দুস ছালাম আজাদের পক্ষে উপমহাব্যবস্থাপক একেএম ফজলুর রহমান স্বাক্ষরিত সূত্রডিডি/আক/খুলনা কর্পো/কৈফিয়তনামা ডিজিএম -৬০৮/২১২/৯৬৭ তাং ২১ আগষ্ট এই কৈফিয়াতনামা জনতা ব্যাংক খুলনা কর্পোরেট শাখার ডিজিএম অরুন প্রকাশ বিশ্বস, এজিএম কাজী জাফর হায়দার এবং সিনিয়র অফিসার মো: আব্দুল হাইকে প্রদান করে জবাব দানের জন্য দশ দিনের সময় বেধে দেয়া হয়। মোট দশটি অভিযোগের প্রথমেই বলা হয় প্রধান কার্ষালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেখে মোসার্স মুনষ্টার পলিমার এক্সপোর্ট লি: অতিরিক্ত ২৮ কোট ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকার ঋন সুবিধা প্রদান করেছেন। একই ভাবে এই ঋুন প্রদানকালে প্রথম বছরে কমিশন অগ্রিম আদায়ের শর্ত পালন করা হয়নি। ৬ নং অভিযোগে বলা হয়েছে মের্সাস ইষ্টান পলিমার লি: মঞ্জুরীকৃত ৬০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ২১ কোটি ৫২ লাখ ওভারডিউ সুবিধা প্রদান করেছেন। একই ভাবে ঋন প্রদানের নানাবিধ শর্তবলী মানা হয়নি । ৭ নং অভিযোগে বলা হয়েছে ইষ্টান পলিমার লি: ঋনসীমার বিপরীতে প্রতিমাসে এক কোটি টাকার এফডিআর গঠন করে লিয়েন রাখার শর্ত পালন করা হয়নি। এবং বিবিধ অনিয়ম করা হয়েছে। পত্রে আরো বলা হয়েছে জনতা ব্যাংক লি: চাকুরী প্রবিধানমালা -২০২০ এর ৬২ [খ] ১ উপপ্রবিধি মোতাবেক কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থ্ ানেয়্ াহবে না , তা পত্র প্রাপ্তির দশ দিনের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এই শো-কস লেটার পাবার পর তিনি নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাব না দিয়ে ছুটিতে যান ডিজিএম অরুন প্রকাশ বিশ্বাস । পরবর্তীতে প্রধান কার্ষালয় হতে ২২ নভেম্বর ২০২১ তারিখে আবারও শো-কস করা হয়। ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে প্রথম শো-কস লেটার পাবার পর ছুটিতে যান অরুন প্রকাশ বিশ্বাস এবয় এই সময় ইসকন নেতৃত্বদের দিয়ে সুপারশি করান। এবং নিজে নিদিষ্ট সময়ের পর নাম ওয়াস্তে একটা জবাব দিয়ে জানান, খুলনা বিভাগের সবোচ্চ মুনাফা প্রদান কারী শাখা হলো খুলন কর্পোরেট শাখা সময় সময় উর্ধতন কতৃপক্ষর সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে গ্রাহকের ব্যবসায় নিয়মিত রাখার স্বার্থে, শাখার মুনাফা রক্ষার্থে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছিল। স্বীকার করেন গৃহীত পদক্ষেপের মধ্যে অনিচ্ছাকৃত ক্রটি ছিল। শাখার স্বার্থে সৃষ্ট ক্রটি সমুহ মার্জনীয়। জবাব সমুহ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে সুবিবেচনা করত: খুলনা কর্পোরেট শাখার প্রয়োজনে সৃষ্ট পদ্ধতিগত ক্রুটি ব্ষিয় রুজুকৃত বিভাগীয় শৃংখলা মামলাটি হতে অব্যাহতি দানে অনুরোধ জানাচ্ছি । কিন্তু মূলত ইসকনের সুপালিশে তার অভিযোগ পত্র প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। একই সাথে ইসকন তার পদোন্নতির সুপারিশও করেন। এই অবেদন রহস্য জনকভাবে বিবেচনা করে ২০২২ সালের জুলাই মাসে জনতা ব্যাংক খুলনা কর্পোরেট শাখার ডিজিএম অরুন প্রকাশ বিশ্বাসকে পদোন্নতি দিয়ে খুলনা জোনের জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। যা সাধারনত হয় বিধি বর্হিভূত। যেখানে প্রধান কার্ষালয়ের তদন্ত কমিটির অনিয়ম শনাক্ত করে , পরে সেখানেই তাকে পদোন্নতি দিয়ে আঞ্চলিক প্রধান করা হয়।অরুন প্রকাশ বিশ্বাস জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্ব নিয়েই তার সময়কার জনতা ব্যাংক কর্পোরেট শাখা তার সময়কার অনিয়ম ধাপা চাপা দেবার জন্য অর্থ ঋন আদালতে মামলা করে ঋন খেলাপির । কিন্তু ৫০ কোটি টাকা সম্পদ বিপরীতে নেয়া এই সাড়ে তিনশত কোটি টাকা আদায় অনিশ্চিত। এই সম্পত্তির বিক্রির জন্য দুই দফা নীলাম বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও কেউ আগ্রহী হয়নি। এ ব্যাপারে জনতা ব্যাংক জেনারেল ম্যানেজার অরুন প্রকাশ বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন এই জমি ছাড়ায় ফ্যাক্টরী যন্ত্রাংশ, উৎপাদিত পন্যর প্লেজ ঋন, এলসি মার্জিন ঋন সহ নানাবিধ ঋন রয়েছে। যা সুদে আসলে এত টাকা হয়েছে। তিনি জানান, জমির মুল্য আগামীতে বৃদ্ধি পেতে পারে। তিনি জানান এই ঋন তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। একই ভাবে এল সি মার্জিনের টাকা ১৮০ দিনের মধ্যে দেবার কথা থাকলেও তারা কোন টাকা দেয়নি। তিনি বলেন ব্যাংক ঋনের বিধি অনুযায়ী তারা এই মামলা দায়ের। এক প্রশ্নের জবাবে অরুন প্রকাশ বিশ্বাস জানান তিনি ইসকনের সদস্য বহু পূর্ব হতে, তবে তার জন্য ইসকন সুপারিশ করেছে কিনা জানেন না। করেছেন।তিনি নিজে কনতা ব্যাংক কর্পোরেট শাখার ডিজিএম থাকা কালে তার বিরুদ্ধেও শোকস করা হয়েছিল। কিন্তু তারা জবাব ব্যাংক কতৃপক্ষ গ্রহন করেছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জনতা ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা স্বার্থে জানান, অরুন প্রকাশ বিশ্বাস জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্ব নিয়ে তার পছন্দের কর্মকর্তাদের সুবিধাজন স্থানে বদলী করে নিয়ে আসেন। এবং প্রায প্রতি শুক্রবারের ব্যাংকে ইসকন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করতেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে অতি সম্প্রতি অরুন প্রকাশ বিশ্বাসকে খুলনা জোন থেকে রাজশাহীতে বদলী করা হয়েছে। খুলনা জোনের জেনারেল ম্যানেজার মোঃ আঃ রাজ্জাক বলেন, এ ঘটনায় ব্যাংক গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এর বেশী কিছু তিনি বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন। তবে জনতা ব্যাংক খুলনা কর্পোরেট শাখার ইনচার্জ মেহেদী হাসান বলেন, বিষয়টি অনেক আগের। অনাদায়ী হওয়ায় এ ঘটনায় খুলনা অর্থঋণ আদালতে গত ৩০ নভেম্বর’২২ তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সাবেক ইনচার্জ আঃ হাই সিদ্দিকী বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। যার নং-২৬১/২২, ২৬২/২২ ও ২৬৩/২২। মামলায় ৩৩৮ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গ্রাহক সুদ মওকুপের জন্য আবেদন করেছে। ১০ কোটির বেশী টাকা জমা দিয়েছে। সে জন্য মামলার প্রক্রিয়া স্থগিত করার প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান। ব্যাংকের আইনজীবী এড. রেজাউল করিম জানান, মামলার শুনানী চলছে। গ্রাহক তার অনাদায়ী টাকা দেয়া শুরু করেছে। তবে মরগেজ রাখা সম্পত্তি বিক্র করতে পারলে ব্যাংক সহজেই তার টাকা উসুল করতে পারবে বলে তিনি জানান।