লিজ বাতিলসহ সকল পাটকল চালু ও শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করুন

# ইস্টার্ণ গেটের শ্রমিক জনসভায় বক্তারা #
স্টাফ রিপোর্টারঃ পাটকলসহ বন্ধ সকল রাষ্ট্রীয় কলকারখানা দুর্নীতি ও লুটপাটমুক্ত করে আধুনিকায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু, শ্রমিকদের সকল পাওনা সঠিক হিসাব অনুযায়ী প্রদান, মাথাভারি প্রশাসন ও দুর্নীতিযুক্ত বিজেএমসির সংস্কার করাসহ তৎকালীন মন্ত্রী, সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তদন্ত ও বিচার, যে সকল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল লিজ দেয়া হয়েছে সেগুলো বাতিল, ২০১০ সালের ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং এক্ট কার্যকর করা, কাঁচাপাট সরাসরি রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করা, আন্দোলনরত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মিল কর্তৃক যে সকল ফৌজদারি মামলা রয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করা এবং খুলনায় আন্দোলন চলাকালীন শ্রমিক ও নাগরিক নেতৃবৃন্দের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আলীম ইস্টার্ণ পাটকল রক্ষা শ্রমিক-কর্মচারী পরিষদের উদ্যোগে শুক্রবার বিকেল ৪টায় খুলনা জেলার ইস্টার্ণ গেইটের সামনে এক শ্রমিক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। শ্রমিক জনসভায় সভাপতিত্ব করেন ইস্টার্ণ জুটমিলস এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোজাম্মেল হক খান এবং সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ফুলতলা উপজেলার সভাপতি গাজী আফজাল হোসেন। জনসভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া। বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির খুলনা জেলা সভাপতি ডাঃ মনোজ দাস, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা আহবায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ খুলনা সদস্য সচিব কোহিনূর আক্তার কনা, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ খুলনা জেলা সম্পাদক গাজী নওশের আলী, গণসংহতি আন্দোলন ফুলতলা উপজেলা আহবায়ক ও ইস্টার্ণ জুটমিল শ্রমিকনেতা মোঃ অলিয়ার রহমান, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা কাজী দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন শেখ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ওয়াহিদুজ্জামান, খালিশপুর-দৌলতপুর কারখানা কমিটির সভাপতি মোঃ মনির হোসেন মনি, নওয়াপড়ার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসেদ আলম শমসের, যশোর খুলনা বদলী আঞ্চলিক কমিটির আহবায়ক মোঃ ইলিয়াস হোসেন, প্লাটিনাম জুটমিল শ্রমিকনেতা মোঃ নূরুল ইসলাম, প্লাটিনাম জুটমিল বদলী কমিটির সভাপতি মোঃ আবদুর রাজ্জাক তালুকদার, দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন, ডালিম কাজী, কার্পেটিং জুটমিল শ্রমিকনেতা জামাল মোল্লা, জেজেআই শ্রমিকনেতা নজরুল ইসলাম মল্লিক, সামস সারফিন সামন, ইস্টার্ণ জুটমিল শ্রমিকনেতা পিপলু সরদার, ক্রিসেন্ট জুটমিল কারখানা কমিটির নেতা আক্তার হোসেন, ক্রিসেন্ট জুটমিল কারখানা কমিটির নেতা আক্তার হোসেন, সুজন হোসেন, মোঃ আলমগীর, জাকির হোসেনসহ প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ২ জুলাই’২০ করোনা মহামারির সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একসাথে খুলনার ৯টি পাটকলসহ সারাদেশের ২৬টি পাটকল লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করেন। ফলে একদিনে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় আমরা খুলনার সচেতন নাগরিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীদের একত্র করে রাষ্ট্রীয় কলকারখানা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু রাখার দাবীতে দেশব্যাপী আন্দোলন সংগঠিত করি। বক্তারা বলেন, যেহেতু দেশে চেরম অগণতান্ত্রিক পরিবেশ ছিলো সেহেতু এ আন্দোলন করতে গিয়ে আমরা তৎকালীন ফ্যাসিবাদী সরকারের ব্যাপক দমন-পীড়নের শিকার হই। নাগরিক-রাজনীতিবিদ ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং কারাবরণ পর্যন্ত করতে হয়। এখনও এ সকল মামলা চলমান। নানাবাধা বিপত্তি হুমকি সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় কলকারখানা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালুর দাবিতে টানা ৪ বছর আন্দোলন অব্যাহত রাখি। বক্তারা আরো বলেন, পাটকল বন্ধের বিরুদ্ধে সাধারণ শ্রামকরা যাতে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে সেজন্য রাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী দিয়ে শিল্পাঞ্চল অনরুদ্ধ করে রাখা হয়, জনে-জনে এস শ্রামকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। শ্রমিকদের আটক-গ্রেফতার-হামলা-মামলার ভয় দেখানো হয়। এমনকি শ্রম আইন উপেক্ষা করে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক প্রদানের অজুহাত দেখিয়ে তাদের কলোনী ছাড়া করা হয়। কলোনী ছাড়া হবার কারণে বহু শ্রমিক অস্থায়ী নিবাস হিসেবে শিল্পাঞ্চলে আর থাকতে পারেনি। এসব শ্রমিক জীবন-জীবিকার তাগিদে নিজ-নিজ গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হয়। কিছু শ্রমিক শহরে থেকে যায়। এসব শ্রমিক অদক্ষ পেশায় যুক্ত হয়ে পড়ে। বক্তারা বলেন, সরকার তিন মাসের মধ্যে সকল শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করার কথা দিয়েছিলো। কিন্তু উৎপাদন বন্ধের চার বছর অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত সকল শ্রমিকদের ন্যায্য বকেয়া পায়নি। উল্লেখ্য ৫টি জুটমিলের (খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, জাতীয় জুট মিল, কেএফডি ও আর আর জুট মিল)শ্রমিকেরা এখন পর্যন্ত কোনো টাকা পায়নি। অন্যদিকে বিজেএমসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা স্বপদে বহাল রয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কয়েকটি মিল ইতিমধ্যে ব্যক্তি মালিকানায় লিজ দেয়া হয়েছে। কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ লুটপাট, চুরি ও অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বক্তারা অবিলম্বে বন্ধকৃত পাটকল রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু ও শ্রমিকদের সম্পূর্ণ বকেয়া পরিশোধের জোর দাবি জানান।