শ্রম পরিচালকের বিচারের দাবিতে ঘেরাও কর্মসূচি পালন

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খালিশপুর জুটমিল, দৌলতপুর জুটমিলসহ পাঁচটি পাটকলের শ্রমিকদের ২০১৫ সালের মজুরী কমিশনের এরিয়ারের টাকা, রাষ্ট্রীয় পাটকল রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু, করোনাকালীন সময়ে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সুবিধাদি প্রদান, ২০২০ সালের নতুন দুটি উৎসব বোনাসের সকল পাওনা প্রদান এবং খুলনা বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমানের বিচার, শাস্তি ও অপসারণের দাবিতে খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কারখানা কমিটির উদ্যোগে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রূপসাস্ত শ্রম অধিদপ্তরেরর সামনে ঘেরাও ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহবায়ক ও সিবিএ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মনির হোসেন মনি এবং সঞ্চালনা করেন খালিশপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির। বক্তব্য রাখেন, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা আহবায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সভাপিত নূর মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ কেন্দ্রীয় সদস্য মো. মোজাম্মেল হক খান, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা জেলা সভাপতি কাজী দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন শেখ, খুলনা-যশোর আঞ্চলিক বদলী কমিটির আহবায়ক মোঃ ইলিয়াস হোসেন, ক্রিসেন্ট জুটমিল কারখানা কমিটির সভাপতি শামছুজ্জোহা ডিয়ার, সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন, খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কারখানা কমিটির উপদেষ্টা মোঃ নূরুল ইসলাম, শ্রমিকনেতা আবদুল হাকিম, শফিউদ্দীন আবদুল আজিজ, মফিজ ইময়া, আবুল খায়ের প্রমুখ। সমাবেশে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০২০ সালের ২ জুলাই বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান একযোগে ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ ঘোষণা করেন। তখন থেকেই আমরা পাটকল চালু, শ্রমিকদের সকল বকেয়া পাওনা প্রদান, পাটকল আধুনিকায়নের দাবিতে শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তুলি। আন্দোলনের শুরুতেই রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিশেষ সংস্থা, পুলিশ প্রশাসন দ্বারা আমাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে এসেছে। খুলনা বিভাগীয় শ্রম পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান তৎকালীন সরকার ও সাবেক শ্রমপ্রতিমন্ত্রীর আর্শীর্বাদপুষ্ট হয়ে শ্রমিক স্বার্থের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং এখনো শ্রমিক স্বার্থ পরিপন্থী ভূমিকা রেখে চলেছেন। রাষ্ট্রীয় মালিক আমাদের শ্রম শোষণ করেছেন, রক্ত চুষে নিয়েছেন। শ্রমিক নেতারা বলেন, আমাদের শ্রমের টাকা, আমাদের ঘাম ঝরা টাকা কোনোভাবেই আত্তসাৎ হতে দেবো না। সমস্ত ষড়যন্ত্র, সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার থাকবো, আমাদের লড়াই চলবে অবিরাম।খালিশপুর জুটমিলসহ অন্যান্য ৫টি জুটমিলের শ্রমিকদের সমুদয় টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। শ্রম পরিচালকের বিচার ও অপসারেণের দাবি তুলে শ্রমিক নেতারা বলেন, পাটকল আন্দোলন চলাকালে আমরা আমাদের মিলগুলো চালু এবং বকেয়া বেতনের জন্য খুলনা বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে গেলে তিনি আমাদের প্রত্যক্ষ হুমকি দেন। আমরা কিভাবে রাজপথে আন্দোলন করি তা তিনি দেখে নেবেন। রাজপথে আন্দোলন করলে আমাদের ওপর প্রশাসন দিয়ে হামলা চালাবেন, হাত-পা ভেঙ্গে দেবেন, এমন কি গুলি করে মেরে ফেলবেন বলে হুমকি প্রদান করেন। তিনি ছিলেন ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক শ্রমমন্ত্রীর একান্তভাজন কর্মকর্তা। উক্ত পরিচালক দীর্ঘ ১৭ বছরে একাধারে খুলনায় থাকার কারণে তিনি ফ্যাসিবাদী সরকারের স্বৈরাচার পরিচালকে পরিণত হয়েছেন। কিভাবে তিনি এতো বছর খুলনায় থাকেন সরকারী কর্মকর্তা হয়ে। সাবেক সরকারের ১৭ বছরে তিনি ১৫জনকে ডিঙ্গিয়ে পরিচালক হন। খুলনায় তিনি গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতাধীন শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের উল্টো দিকে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ৬৭ নং প্লট সাবেক শ্রমমন্ত্রীকে দিয়ে ২০১২ সালে ১কোটি টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন। এখন তিনি সেই জায়গার ওপর ৯তলা বাড়ী নির্মাণ করছেন। তিনি কিভাবে বিশাল সম্পদের মালিক হলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা অবিলম্বে শ্রম পরিচালক মিজানুর রহমানের বিচার – অপসারণ এবং মিল চালু ও সকল বকেয়া প্রদানের জোর দাবি জানাচ্ছি, নতুবা দ্রুত গণ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। উল্লেখ্য শ্রমিকদের কর্মসূচি চলাকালীন বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে শ্রমিকনেতাদের এক মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। এই মতবিনিময় সভায় কর্মকর্তারা বলেন, শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্ঠা করবো এবং ওপর মহলে অবহিত করবো। তবে শ্রম পরিচালকের অপসারণের ব্যাপারে আমরা কোনো ভূমিকা পালন করতে পারবো না। একথা বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের কানে পৌঁছালে তারা প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে শ্রম কর্মকর্তারা আবারো শ্রমিক প্রতিনিধিদের সাথে জরুরী বৈঠক করেন। ঐ সভায় শ্রমিকনেতাদের আশ্বস্ত করেন, আপনারা আমাদের ৭দিনের সময় দেন। তখন শ্রমিক নেতারা হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, আগামী ৭দিনের ভেতর কোনো পদক্ষেপ না নিলে আপরা রাজপথে অগ্নিঝরা আন্দোলন শুরু করবো।