মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনেই চলবে হেলিকপ্টার!

খুলনায় কলেজ ছাত্রের চমক
স্টাফ রিপোর্টার : ব্যতিক্রমি কিছু করার চেষ্টা থেকেই
হেলিকপ্টার তৈরি করে চমক সৃষ্টি করেছে খুলনার ফুলতলা উপজেলার কলেজ ছাত্র নাজমুল। মোটরসাইকেলের চায়না ইঞ্জিনে তৈরী এই হেলিকপ্টার তৈরিতে কোটি টাকা নয় খরচ হয়েছে মাত্র ২ লাখ টাকা। উপযুক্ত পরিবেশ পেলেই আকাশে উড়ানোর প্রস্তুতি নির্মাতা নাজমুলের।
নাজমুলের বাবা নজরুল ইসলাম খান পেশায় একজন কৃষক, রয়েছে একটি মুদি দোকানও। দারিদ্রতার মাঝেও ছেলে উদ্ভাবনী ইচ্ছাকে উৎসাহিত করতে যুগিয়েছেন অর্থ। ছেলের সাফল্যে আবেগাপ্লুত তিনি।
এদিকে, স্থানীয়রা নাজমুলের এমন উদ্ভাবনে উচ্ছ্বাসিত। তার হেলিকপ্টার বানানোর পরিকল্পনাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন এলাকাবাসী। বর্তমানে যন্ত্রটি কাজ করায় গর্বিত তারা। প্রতিদিনই দূর দূরান্ত থেকে উৎসুক জনতা ভিড় করছেন এটি দেখার জন্য।
খুলনার ফুলতলা উপজেলার জামিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা নাজমুল খান গেল তিন বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে তৈরী করেছেন এক আসন বিশিষ্ট হেলিক্প্টার। ওয়েবসাইটের সহযোগিতায় জ্ঞান অর্জন করে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী করেছেন এই হেলিক্প্টার। হেলিক্প্টারের ইঞ্চিন ব্যয়বহুল হওয়ায় নিজস্ব মেধায় মোটর সাইকেলের ইঞ্জিনের আরপিএম বাড়িয়ে ব্যবহার করা হয়েছে এখানে।
খুলনার ফুলতলার জামিরা ইউনিয়নের ছাতিয়ানি গ্রামের কৃষক পরিবারের একমাত্র সন্তান নাজমুল। পড়াশুনা করছেন বিএল কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে। নিজের স্বপ্ন থেকে নাজমুল ওয়েবসাইটের সহযোগিতায় জ্ঞান অর্জন করে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছেন এই হেলিকপ্টার। নিজস্ব মেধায় মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন মডিফাই করে এটি তৈরি করেছেন তিনি। পরিবারের মা-বাবার কাছ থেকেই টাকা নিয়ে তিন বছরের চেষ্টায় সফল হয়েছেন তিনি।
এখন আকাশে ওড়ার অপেক্ষায় নাজমুলের হেলিকপ্টার। তবে এর জন্য প্রয়োজন আরও নিরাপত্তা সরঞ্জাম। ইতোমধ্যে নাজমুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে খুলনা জেলা প্রশাসন। হেলিকপ্টারটিকে আরও নিরাপদ ও আকাশে ওড়ার উপযোগী করে তোলার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এখন প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতার।
হেলিকপ্টার প্রস্তুতকারী নাজমুল খান জানান, হেলিকপ্টারের বডি তৈরিতে ব্যবহার করেছেন এস এস পাইপ। আর চায়না দেড়শ সিসির মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের আরপিএম সাড়ে ৬ হাজার থেকে বাড়িয়েছেন ৯ হাজার আরপিএমএ। এর পাখা সাড়ে আট ফিট লম্বা, চওড়া ২১ মিটার। পুরো হেলিকপ্টারটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ২২ ফিট। হেলিকপ্টারটি এক লিটার অকটেনে ১৮ থেকে ২০ মিনিট চলবে। যার সর্বোচ্চ গতিবেগ হবে ৩২০ কিমি/ঘণ্টা।
তিনি বলেন, অনলাইন থেকে হেলিকপ্টার তৈরির ভিডিও দেখে সেখান থেকে ধারণা নিয়ে হেলিকপ্টার তৈরি করেছি। ইতোমধ্যে আমার হেলিকপ্টার তৈরির ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করি, এটা অচিরেই আকাশে উড়াতে পারবো। এটা তৈরিতে ১৫০ সিসি চায়না ইঞ্জিন ব্যবহার করেছি। কিছু যন্ত্রপাতি স্থানীয়ভাবেও সংগ্রহ করা হয়েছে।
হেলিকপ্টার তৈরিতে আমার দুই লাখের বেশি টাকা খরচ হয়েছে। এটা তৈরি করতে কারও সহযোগিতা নেইনি। আমার ওজনসহ ২১০ কেজি নিয়ে উড়তে পারবে। সরকার যদি কোনো সহযোগিতা কিংবা সরকারের কোনো সংস্থা যদি আমাকে কোনোভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করতো তাহলে আমি উপকৃত হতাম।
নাজমুল জানান, খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিছুদিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বৃষ্টি কমলে হেলিকপ্টার উড়ানো সম্ভব হবে।
নাজমুলের এমন উদ্ভাবনে উচ্ছ্বাসিত গ্রামবাসী ও তার শিক্ষকরা। নাজমুলের হেলিকপ্টার বানানোর পরিকল্পনাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন তারা।
স্থানীয় জামিরা বাজার আসমোতিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ গাজী মারুফুল কবীর বলেন, নাজমুল আমাদের কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। দুই বছর ধরে হেলিকপ্টার তৈরির কাজটা চালাচ্ছে নাজমুল। ও যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে আশা করছি অতি অল্প সময়ের মধ্যে হেলিকপ্টার আকাশে ওড়াতে পারবে।
স্থানীয়রা বলেন, নাজমুল হেলিকপ্টার তৈরি করে চমক সৃষ্টি করেছে। সে আমাদের এলাকার গর্ব। আমরা তার সফলতা কামনা করি। তার তৈরি হেলিকপ্টার দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছে মানুষ।
নাজমুলের পিতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, পেশায় আমি একজন কৃষক, এছাড়া বাড়তি আয়ের জন্য একটি মুদি দোকান চালাই। দরিদ্রতার মাঝেও ছেলে উদ্ভাবনি ইচ্ছাকে উৎসাহিত করতে যুগিয়েছি অর্থ। এলাকাবাসী নাজমুলের এমন উদ্ভাবনে উচ্ছোসিত। নাজমুলের হেলিক্প্টার বানানোর পরিকল্পনাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন এলাকাবাসী। বর্তমানে যন্ত্রটি কাজ করায় গর্বিত তারা। প্রতিদিনই দূর দূরাস্ত থেকে উৎসুক জনতা ভীড় করছেন এই যন্ত্রটি দেখার জন্য। এতে নাজমুলের বাবা বলেন আমি গর্বিত।
নাজমুল বলেন, আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আমাকে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া আমার বাবার সম্পূর্ণ সহযোগিতা ছিল।
নাজমুল আরো বলেন, শুধু সাইন্সের স্টুডেন্ট নয়, অন্যান্য বিভাগের ছাত্রদের মধ্যেও মেধা সম্পূর্ণ ছাত্ররা রয়েছে। যাদের সুযোগ-সুবিধা দিলে তারা আমার থেকেও ভালো কিছু করে দেখাতে পারবে।
নাজমুল বলেন, হেলিক্প্টারটি এখন আকাশে ওড়ার অপেক্ষায়। তবে এর জন্য প্রয়োজন আরও নিরাপত্তা সরঞ্জাম ও আয়োজন।
ফুলতলা উপজেলার জামিরা ৩ নং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুল ইসলাম সরদার বলেন, প্রশাসন তার পাশে এসে দাঁড়ালে তাকে সহযোগিতা করলে সে একদিন ক্ষুদে বিজ্ঞানী থেকে বড় বিজ্ঞানী হতে পারবে।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, হেলিকপ্টার প্রস্তুতকারক কলেজ শিক্ষার্থী নাজমুলকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ সহযোগিতা করা হবে। হেলিকপ্টার ওড়ানোর সময় ফায়ার সার্ভিসসহ সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।


