মণিরামপুরের ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি মাত্র ৬ মাসেই ধ্বসে গেল!

মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি ঃ যশোরের মণিরামপুর উপজেলার চিনাটোলা বাজার সংলগ্ন হরিহর নদের উপর নতুন নির্মিত ৪২ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি জনসাধারনের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার মাত্র ৬ মাস পার না হতেই ধ্বসে পড়েছে সেতুর পলেস্তারা। ৩ কোটি ১২ লাখ ৯৩ হাজার ২১১ টাকায় নির্মিত সেতুটি চলতি বছরের প্রথম দিকে জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। গত আগস্ট মাসের প্রথম দিকে সেতুর মেঝের (স্লাব) পলেস্তারা ধ্বসে পড়তে শুরু করে। ওই মাসেই কয়েক দফায় সেতুর বড় একটি অংশ ধ্বসে রড বেরিয়ে পড়ায় গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে সেতুর উপর দিয়ে পারাপারে ভোগান্তিতে পড়েছেন পথচারীরা।
স্থানীয়রা বলছেন, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেশবপুরের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শাহীন চাকলাদারের ভাই শামীম চাকলাদার সেতু নির্মাণে ঠিকাদারের কাজ পান। প্রভাবশালী ঠিকাদার সেতুটি নির্মাণে সিডিউল অনুযায়ী কাজ না করে বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা আতœসাৎ করেছেন। নির্মাণ কাজ এতো নি¤œমানের যে উদ্বোধনের পরপরই সেতুতে ধ্বস নেমেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ সাবেক প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী আলম চেয়ারম্যান ঠিকাদারের নি¤œমানের কাজে বাধা না দিয়ে কাজে সহযোগিতা দিয়েছেন।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, চিনাটোলা বাজার থেকে মনোহরপুর বাজার সড়কের হরিহর নদের উপর ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ৪২ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালে ৬ অক্টোবর সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে নির্ধারিত মেয়াদের এক বছরের বেশি সময় পর দায়সারাভাবে সেতুর কাজ শেষ করেন। এরপর চলতি বছরের প্রথম দিকে জনসাধারণের চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেওয়া হয়।
সেতুর পূর্ব পাড়ের বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, সেতু খুলে দেওয়ার ৪-৫ মাসের মাথায় মেঝের প্লাস্টার ফেটে নদীতে পড়ে কয়েকটি গর্ত দেখা দেছে। খবর পেয়ে ইঞ্জিনিয়ার অফিসের লোক এসে গর্তগুলো বন্ধ করে দিতে চায়। আমরা বাধা দিয়ে সেতু ভেঙ্গে নতুন করে করার কথা বলেছি। আমাদের বাধার মুখে ইঞ্জিনিয়ার অফিস লোকজন এনে সেতুর মেঝে ভাঙ্গা শুরু করে। এখন কাজ বন্ধ করে রেখেছে ইঞ্জিনিয়ার অফিস। এতে করে জনসাধারনের চলাচলে কষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় জিয়ারুল গাজী বলেন, সেতু তৈরির সময় ঠিকাদারের লোকজন দায়সারাভাবে কাজ চালাচ্ছিল। তারা অন্য এলাকা থেকে সিমেন্ট বালু মিশিয়ে ট্রাকে করে এসে ঢালাই দিয়েছে। যতটুকু পুরু করে স্লাব ব ঢালায় দেওয়ার কথা ছিল সেই নিয়মে ঢালাই দেওয়া হয়নি। স্থানীয় আলম চেয়ারম্যানের বাহিনী সেতুর কাজ চলার সময় উপস্থিত থাকত। কাজে অনিয়ম দেখে বাধা দিতে কেউ সাহস পেত না। এই বিষয়ে শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলমগীর বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগ সত্যি না। ক্ষোভ থেকে এখন তারা অনেক কথা বলছেন।
স্থানীয়রা জানান, হরিহর নদের চিনাটোলা বাজার সংলগ্ন এই সেতুর উপর দিয়ে মণিরামপুরের পূর্বাঞ্চলের ৫টি ইউনিয়নসহ অভয়নগর, কেশবপুর, খুলনা, ডুমুরিয়া উপজেলার প্রায় ৪০/৫০ হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন। তাছাড়া ট্রাকযোগে এই রাস্তায় বন্দরনগরী নওয়াপাড়া থেকে সার, পাথর, রড সিমেন্ট সাতক্ষীরা কেশবপুর ও মণিরামপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে নেওয়া হয়। সেতুর মেঝে ভেঙ্গে পড়ায় এখন চলাচল ও পণ্য পরিবহণে মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
সেতু নির্মাণের ঠিকাদার শামীম চাকলাদার বলেন, আমার লাইসেন্সে অন্য ঠিকাদার কাজ করেছেন। মেঝে (স্লাব) ঢালায়ের সময় অন্য জায়গায় সিমেন্ট বালু মিশিয়ে এনে কাজ করা হয়েছে। এতে উপাদানের স্থায়িত্ব কমে যাওয়ায় এমনটি হতে পারে।
শামীম চাকলাদার আরও বলেন, যেহেতু আমার লাইসেন্সে কাজ করা হয়েছে। স্লাব ধ্বসে পড়ার দায় আমার উপর বর্তায়। স্ল্যাবের কার্পেটিং ভেঙ্গে নতুন ভাবে কাজ করা হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ দাস বলেন, সেতুর স্ল্যাব ধ্বসে পড়ার খবর পেয়ে আমরা মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। প্রথম দিকে স্থানীয়রা বাধা দিয়েছিল। এখন সবার সাথে কথা হয়েছে। দ্রুত সেতু সংস্কার কাজ শুরু করা হবে