মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ১০ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা

বাগেরহাট প্রতিনিধি ঃ বাগেরহাটের মোংলা বন্দর-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়ক বেহাল দশা পরিনত হয়েছে। ফলে ব্যস্ততম এ মহাড়কে যান চলাচল চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। গাড়ীর গতি কমিয়ে খানা খন্দকের উপর দিয়ে প্রতিনিয়ত হেলেদুলে চলাচল করছে হাজার হাজার বাস ট্রাক সহ হাজারো যানবাহন। সড়ক বিভাগ মাঝে মধ্যে এসব খানা খন্দে কিছু ইট ফেলে সাময়িক সংস্কার করলেও তা তেমন কোনো কাজে আসছে না। এদিকে সংস্কার কাজের ধীরগতির কারণে সড়কটিতে প্রায় সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। ঘন্টার পর ঘন্টা যানবাহন চালক ও যাত্রীদের যানজটে আটকে থাকার কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। মোংলা বন্দর সূত্র জানায়, মোংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে আমদানী রপ্তানী পণ্য নৌ পথে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে আনা নেয়া হতো। এতে সময় ব্যয় হতো অনেক বেশি। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে মোংলার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ১৯৮০ সালে মোংলা থেকে খুলনা রূপসা ঘাট পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটারের এ সড়কটি নির্মাণ করা হয়। এর ফলে মোংলা বন্দরের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বৃদ্ধি পায়। পরবর্তিতে খানজাহান আলী (রূপসা) সেতুর মাধ্যমে খুলনা শহরের বাইপাশ দিয়ে গল্লামারী পর্যন্ত সড়কটি দীর্ঘায়িত করা হয়। এখন বন্দরের ব্যস্ততা বেড়েছে অনেক বেশি। প্রতিদিন এ মহাসড়ক দিয়ে অসংখ্য আমদানী-রপ্তানী পণ্যবাহি গাড়িসহ হাজার হাজার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে থাকে। রাস্তার কাজ নিম্মমানের হওয়ায় বিগত প্রায় ২ বছর ধরে ওই সড়কে প্রায় ১০ কিলোমিটার খানাখন্দ হয়ে বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে এ মহাসড়কের খুলনা থেকে মোংলায় আসার পথিমধ্যে রামপাল উপজেলার ঝনঝনিয়া চেয়ারম্যান মোড় নামক বাসস্ট্যান্ড পার হলেই ভোগান্তি শুরু হয়। এ বাসস্ট্যান্ড থেকে মোংলার পাওয়ার হাউজ পর্যন্ত টানা ১০কিলোমিটার সড়ক এখন খানা খন্দ ও বড় গর্তে রূপ নিয়েছে। বৃষ্টি হলেই খানা খন্দ ও গর্তে হাঁটু সমান পানি জমে যায়। মোংলা থেকে পণ্য বোঝাই ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, দূর পাল্লার যাত্রিবাহী বাস ও অন্যান্য সব ধরনের ছোট-বড় যানবাহন খানা খন্দ ও গর্ত পেরিয়ে হেলেদুলে মন্থর গতিতে চলাচল করে আসছে। কোনো কোনো সময় খানা খন্দকে যানবাহনের চাকা আটকে গেলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া মহাসড়কে সৃষ্ট খানা খন্দ ও গর্ত সাময়িক সংস্কার করার সময় সড়কের এক পাশ বন্ধ রেখে ওয়ান ওয়ে রুটে সব ধরনের যানবাহনকে চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে। রোগী পরিবহনের সময় রোগী ও তাদের স্বজনদের এ সময় ভোগান্তির অন্ত থাকে না। এ অবস্থায় সব ধরনের যানবাহন চালক ও যাত্রীদের মাঝে মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে অভিযোগ রয়েছে। এ সড়কে নিয়মিত চলাচল করা সাইদুর রহমান নামের এক ট্রাক চালক বলেন, মহাসড়কটির কমপক্ষে দশ কিলোমিটার রাস্তায় গত ২ বছর ধরে দেখছি ভাঙ্গা চোরা ও গর্ত রয়েছে। এতে মোংলা বন্দর থেকে মালামাল নিয়ে আমার মতো শত শত ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছি। সময় মতো মালামাল গন্তব্যে পৌছানো যাচ্ছেনা। মাত্র ১০/১১ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার না করায় এমন বেহাল দশা হয়েছে। মোঃ বাহারুল ইসলাম নামের ঢাকা-মোংলা রুটে নিয়মিত চলাচলকারী একটি যাত্রীবাহি পরিবহন বাস চালক বলেন, এ সড়কের বাবুরবাড়ি পুরাতন বাসস্ট্যান্ড মোড় থেকে বাবুর বাড়ি জিরো পয়েন্ট ও মোংলার দিগরাজ বাসস্ট্যান্ড থেকে পাওয়ার হাইজ পর্যন্ত খানা খন্দ ও গর্তে পরিপূর্ণ। এ কারণে সময় মতো যাত্রী নিয়ে গাড়ি আনা নেয়ায় মোংলায় পৌঁছাতে বিলম্ব হয়। এ ছাড়া খানা খন্দ ও গর্তে পড়ে প্রায়ই গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ অকেজো হয়ে যাচ্ছে। মোংলা-খুলনা রুটের নিয়মিত কয়েকজন অফিসগামী যাত্রীরা জানান, অনেক সময় যানজটে পড়ে তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়িতে বসে অপেক্ষা করে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সময়মতো অফিস ও বাড়িতে পৌঁছানো যায় না। জানামতে সড়ক সংস্কারে প্রতিবছর বাগেরহাট সড়ক বিভাগ কে নির্ধারিত অংকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। অথচ, অতি গুরুত্বপূর্ণ মোংলা-খুলনা মহাসড়কের এ বেহাল দশা। অভিযোগ রয়েছে খান-খন্দে ইট ফেলে বাগেরহাট সড়ক বিভাগ মোটা অংকের ভাউচার দুর্নীতি করে থাকে। এ সড়ক বিষয়ে বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফরিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, মোংলা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের যেসব স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব স্থান আমরা মেরামত করেছি। কিছু জায়গা মেরামত করতে বাকি আছে। পর্যায়ক্রমে সে সব জায়গা মেরামত করা হবে এবং তার মেরামত কাজ চলমান আছে। বর্ষাকালে সংস্কারে হাত দিতে না পারায় একটু বেশি সমস্যা হয়েছে।