যুক্তিতর্ক চলাকালে আদালতে বাদীকে হত্যা হুমকি

# খালিশপুরে চাঞ্চল্যকর কলেজ ছাত্র হাসিব হত্যা মামলা #
# ২১ আসামী কারাগারে #
# আ’লীগ নেত্রী শিখার হুংকার-‘তোর কোন বাপ আছে তোকে বাঁচাবে’#
স্টাফ রিপোর্টার ঃ নগরীর খালিশপুরে চাঞ্চল্যকর কলেজ ছাত্র হাসিব হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম চারবছর পর শেষ হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আগ্রুমেন্ট শুরু হয়েছে। আবারো ১৫ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় আগ্রুমেন্ট করার জন্য আদালত সময় বেধে দিয়েছে। মামলা বিচার চলছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ৩নং আদালতে। এরপরই জানা যাবে এই লোমহর্ষক হত্যা মামলার রায় কবে। তবে রায়ের আগেই হত্যাকারী আসামীদের স্বজন ও পলাতক আসামীরা মামলার বাদীকে খুন করার হুমকি দিয়েছে। এসব অপরাধীরা আদালতের বারান্দায় ফেলে বাদীকে এভাবে হুমকি দিয়েছে বলে বাদী জানান। মামলার প্রথম দিনের যুক্তিতর্ক শেষে কাঠগড়ায় থাকা ২১ আসামীর জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেয়। কোর্টের বারান্দায় থাকা বাকী আসামীরা পালিয়ে যায়। এই পালিয়ে যাওয়া আসামী ও তাদের স্বজনরা বাদী হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় বাদী খুলনা সদর থানায় জিডি করেন। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ১৯ আগস্ট বাদীর ছেলে কলেজ ছাত্র হাসিবকে এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে। যা ভিডিও ভাইরাল হয়। মামলাটি বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের ৩নং আদালতে বিচারাধীন। যার জিআর নং-১৮৮/২০। মামলার আসামীরা বিগত দিনে জামিনে এসে বাদীকে হত্যার হুমকি দেয়। নিরাপত্তার অভাবে তিনি খালিশপুর ছেড়ে চলে যান। মামলার তারিখের দিন তিনি কোর্টে আসেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১০ অক্টোবর মামলার নির্ধারিত আগ্রুমেন্টের দিন তিনি কোর্টে আসেন। যথারীতি কোর্ট শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১১টার সময় এজাহারে উল্লেখিত ৩নং আসামী ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা অন্তুর মা শারমীন রহমান শিখা (খালিশপুর থানা মহিলা আ’লীগের সভাপতি) আরো ৮/১০ জন আসামীর অভিভাবকগণ মিলে বাদীকে হুমকি দিয়ে বলে, “পরবর্তী তারিখে কিভাবে তুই কোর্টে আসিস দেখব। ” উক্ত শিখার ছেলে অন্তু মামলার ৩নং আসামী সেহেতু আমাকে উক্ত শিখা বলে“আমার ছেলের কিছু হলে তোকে জীবনের মত শেষ করে ফেলবো। তুই এক ছেলে হারিয়েছিস আর এক ছেলে হারাবি। ” যার কারণে আমি ভয়ে কোর্ট শেষ হওয়ার আগেই চলে যাই। কোর্ট শেষ হওয়ার পর শিখা আমাকে মোবাইলে ফোন করে বলে“তুই কই, কোর্টে আয়। তোর কোন বাপ আছে তোকে বাঁচাবে।” পরবর্তী ১৫ অক্টোবর মামলার আগ্রুমেন্টের তারিখ আছে। আমার আশংকা আ’লীগ নেত্রী শিখা আমিসহ আমার পরিবারের যে কোন বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে বা করাইতে পারে। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ৭ মার্চ থেকে নগরীর খালিশপুরে আলোচিত কলেজ ছাত্র হাসিবুর রহমান নিয়াজ (২৫) হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। পরে নির্ধারিত সময়ে বিচার শেষ না হওয়ায় আদালত মামলাটি অন্য আদালতে বদলী করে। সেই আদালতে বিচার কার্য চলছে। এদিকে মামলার রায়ের দিন যত ঘনিয়ে আসছে পলাতক আসামী ও তার স্বজনরা আরো বেশী বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা মামলার বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। জীবনের নিরাপত্তার অভাবে মামলার বাদী ও নিহতের পিতা হাবিবুর রহমান শিকদার সদর থানায় জিডি করেন। এর আগে আসামীরা স্বেচ্ছাসেবকলীগের মহানগর কমিটিতে স্থান পাওয়ার পর তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। তাদের ভয়ে বাদী এলাকা ছাড়া হন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ হত্যার ঘটনায় ২০২০ সালের ২০ আগস্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। গত ২৪ ডিসেম্বর ওই একই আদালতে চার্জশীটের ওপর শুনানি শেষে আদালত তা আমলে নিয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামীরা হলো-কবির হোসেনের ছেলে সৈকত(৩২), রুনু হাওলাদারের ছেলে মেহেদী হাসান রাব্বি (২২), আওয়ামী লীগ নেত্রী শারমীন রহমান শিখার ছেলে রওশন আনিজি অন্তু (৩৩), নুরু ওরফে কানা নুরুর ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (২২), শাহিন আলম সেন্টুর ছেলে ইমদাদুল ইসলাম হৃদয় (২২), আমির খানের ছেলে আরিফ ওরফে চোরা আরিফ (২৯), আমির খানের ছেলে মো. মুন্না (২৩), আমিন উদ্দীনের ছেলে রফিকুল হাসান শাওন ওরফে আতাং বাবু (২৭), ফখরুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৬), সিদ্দিকের ছেলে মোস্তাক আহমেদ (২৭), মাইকেল সরদারের ছেলে মিঠাই হৃদয় (২৭), মো. শাকিলের ছেলে ফাইম ওরফে কালা ফাইম (২২), চুন্নুর ছেলে রুবেল (২৫), কবির হোসেনের ছেলে মিজানুর রহমান (২৮), বাহারুল ইসলামের ছেলে সবুজ (২৫), কুদ্দুসুর রহমানের ছেলে আরাফাত হোসেন (৩০), গোলাম মোস্তফার ছেলে তুষার (২৪), সিরাজুল ইসলাম নান্নুর ছেলে আশিকুর রহমান তুষার (২৬), জাকির হোসেনের ছেলে রাব্বী ওরফে নাটা রাব্বী (২৬), মনোয়ার হোসেনের ছেলে নাঈম বাবু ওরফে পয়েন্ট বাবু (২৬), আব্দুল জব্বারের ছেলে রায়হান (২৩), বেল্লাল হোসেনের ছেলে ইয়াসির রাব্বী ওরফে নাটা জুয়েল (২৬), কালামের ছেলে সালমান (২০), নাজমুল শেখের ছেলে সাকিব শেখ (২৩), আব্দুর রহমানের ছেলে নাইমুর রহমান ফাইম (২১), আব্দুল বারেক হাওলাদারের ছেলে রুনু হাওলাদার (৩৫), মুহিত মুনতাসির ইথুন (১৫)। তদন্ত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ নেত্রী শারমীন রহমান শিখার ছেলে রওশন আনিজি অন্তুর নেতৃত্বে কলেজ ছাত্র হাসিবকে হত্যা করা হয়। জামিন বাতিল হওয়া আসামীরা হলো স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা রওশন আনিটো অন্তু ও ফয়জুর রহমান আরাফাত, সাজ্জাদ, সাইফুল, রুবেল, সাকিব, নাইমুর রহমান ফাহিম, নাটা জুয়েল, সালমান, রুনু হাওলাদার, আতাং বাবু, পয়েন্ট বাবু, তুশার উল্লেখযোগ্য। নিহতের স্বজনরা জানান, পলাতক আসামী ও অন্তু মা আ’লীগ নেত্রী শিখা এসে এলাকায় মহড়া দিচ্ছে। মামলার বাদীকে চাপ প্রয়োগ করছে। নানাভাবে হয়রানী করার চেষ্টা করছে। খুনিদের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে নিহতের পিতা, স্বজন ও স্বাক্ষীরা অনেকেই এলাকা ছেড়েছে। তারা জানান, হাসিব হত্যা মামলার আসামি সাকিব ও ফাহিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তবে মামলার আসামী ইথুনের বয়স কম হওয়ায় তার বিচার হবে শিশু আদালতে বিচার হয়। সে রায়ে খালাস পায় বলে বাদীর স্বজনরা জানান। বাদীর আইনজীবী ফরহাদ আব্বাস বলেন, ২৬ জন আসামীর মধ্যে ২১ জন আসামী জেল হাজতে রয়েছে। আগামী ১৫ অক্টোবর আসামী পক্ষের ্আগ্রুমেন্ট হবে। আরো কয়েকবার আগ্রুমেন্ট শেষে মামলার রায় হবে বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৯ আগস্ট রাত ৯ টার দিকে এলাকার মাদক বিক্রির প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে খালিশপুর ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশু পার্ক সংলগ্ন ক্রিয়েটিভ কার্টস এ্যন্ড কফি হাউজের মধ্যে একদল সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করে তৈয়্যেবা কলোনীর বাসিন্দা ও মিল শ্রমিক মো. হাবিবুর রহমানের ছেলে কলেজ ছাত্র হাসিবুর রহমান নিয়াজকে। এ সময় তাকে বাঁচানোর জন্য দু’ বন্ধু যোবায়ের ও রানা এগিয়ে এলে তাদেরও কুপিয়ে জখম করা হয়। হত্যাকান্ডের ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়। এ ব্যাপারে নিহতের পিতা হাবিবুর রহমান ঘটনার পরের দিন বাদী হয়ে খালিশপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।