স্থানীয় সংবাদ

বিক্ষুব্ধ জনতার ধাওয়ায় পন্ড মাননববন্ধন

# উত্তপ্ত নগর ভবন এলাকা #

স্টাফ রিপোর্টার ঃ কাউন্সিলরদের অবর্তমানে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরবাসী। এমন অভিযোগ তুলে কাউন্সিলরদের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধনে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন কতিপয় নারী পুরুষ। তবে বিক্ষুব্ধ জনতার ধাওয়া খেয়ে পালাতে বাধ্য হন তারা। পরে তাদেরকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যায়িত করে দফায় দফায় মিছিল করেন বিক্ষুব্ধরা। এ নিয়ে নগর ভবন এলাকায় ছিল টানটান উত্তেজনা। গতকাল মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
সূত্র জানায়, আওয়ামীলীগ সরকারের পট পরিবর্তনের পর আত্মগোপনে চলে যান মেয়রসহ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের আধিকাংশ কাউন্সিলর। ২৬ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলরদের পদ বিলুপ্ত ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর ২ অক্টোবর ৩১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের স্থলে কেসিসির ৩১জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় নাগরিত্ব, উত্তরাধিকার, চারিত্রিক, জন্ম ও মৃত্যু সনদ এবং প্রয়োজনীয় প্রত্যয়নপত্র প্রদান এবং নাগরিক সেবা কার্যক্রম চলমান রাখতে। স্বাভাবিকভাবেই নাগরিকদের চাহিদা পূরণ হচ্ছিল না ওইসব কর্মকর্তাদের দিয়ে। কেননা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পরই অতিরিক্ত সময়ে তারা দেবেন নাগরিক সেবা। আর এই সুযোগে আত্মগোপনে থাকা কাউন্সিলররা কিছু নারী-পুরুষকে একত্রিত করে নগর ভবনের সামনে মানববন্ধনের মাধ্যমে সহানুভুতি আদায়ের চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কিছু মানুষ তাদের ধাওয়া দিলে তারা যে যার মতো পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
এদিকে, সেবা বঞ্চিত নাগরিকদের ব্যনারে কিছু সংখ্যক নারী-পুরুষকে রাস্তায় নামানো হলেও নেপথ্যে সমন্বয় করেছেন কয়েকজন কাউন্সিলর। দুপুর ১২টার দিকে কেসিসির প্রধান প্রকৌশলীর কক্ষে গিয়ে পাওয়া যায় সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও কেসিসির প্যানেল মেয়র-৩ এ্যাড. মেমরী সুফিয়া রহমান শুনুকে। এর কিছুক্ষণ পরই প্রধান প্রকৌশলীর কক্ষে প্রবেশ করতে দেখা যায় ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইমাম হাসান চৌধুরী ময়নাকে। শেখ পরিবারের আশির্বাদ নিয়ে কাউন্সিলর হওয়া ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের রাজুল হাসান রাজুকে ফোনে পাওয়া গেলেও তিনি বলেন, ‘আমি ওসব ফাও কাজের মধ্যে নেই’। কারা করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আছে কিছু কাউন্সিলররা’। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের আলী আকবর টিপু অথবা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স এগুলো জানেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। পরে একাধিকবার রিং দেওয়া হলেও রিসিভ হয়নি সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের আস্থাভাজন ও কেসিসির ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আলী আকবর টিপুর মোবাইলটি।
এদিকে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল চলাকালে শহীদ হাদিস পার্কের গেটে পাওয়া যায় খুলনা সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা ফরিদ আহমেদকে। বিগত সরকারের আমলে দায়ের হওয়ার রাজনৈতিক হয়রানিূলক মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে যাচ্ছিলেন তিনি। ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোল্লা ফরিদ বলেন, গায়ের জোরে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে হওয়া মেয়র ও কাউন্সিলরদের প্রতি ভোট বঞ্চিত জনগনের ক্ষোভ ছিল। ফ্যাসিবাদের পতনের মাত্র দুই মাসের মাথায় তাদের পুনরুত্থানের চেষ্টা মানুষকে ক্ষুব্ধ করে। তারা মানববন্ধন করতে আসা ব্যক্তিদের দালাল অভিহিত করে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। পরে তারা পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পলাতক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও অবৈধ ভাটের কাউন্সিলরদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি চেয়ে মিছিল করে।
উল্লেখ্য, গত ২ অক্টোবর কেসিসির পৃথক দু’টি অফিস আদেশে ৩১ জন কর্মকর্তাকে ৩১টি ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর ‘নাগরিক সেবা বঞ্চিত হয়ে কাউন্সিলরদের পুনর্বহালের দাবিতে’ কেসিসির সামনে মঙ্গলবারের ওই মানব বন্ধনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সচেতন মহলের ধাওয়া খেয়ে তাদের কর্মসূচি পন্ড হয়।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button