খুলনায় একদিনের ব্যবধানে দ্বিগুণের বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি : দোলখেলা ও রায়পাড়া ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’ ঘোষণা
# খুলনা বিভাগে একদিনে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ১৪৩ জন : খুলনায় ৬৭ #
কামরুল হোসেন মনি ঃ টানা কয়েকদিন ধরে খুলনা বিভাগের মধ্যে ডেঙ্গু রোগী ভর্তিতে শীর্ষে রয়েছে খুলনা জেলায়। গতকালও (বৃহস্পতিবার) ডেঙ্গু ভর্তিতে খুলনায় সর্বোচ্চ। খুলনা বিভাগে একদিনে ( বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ১৪৩। এর মধ্যে খুলনাতে ভর্তি হয়েছে ৬৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ রয়েছে ৩৯ জন এবং মহিলা রয়েছে ২৮ জন। এর মধ্যে শিশু (পুরুষ) ১১ জন এবং শিশু (মহিলা) ৪ জন রয়েছে। আক্রান্তদের বয়স এক বছর থেকে ৫৫ বছর মধ্যে রয়েছেন। এর আগের দিনও খুলনায় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলো ৩১ জন। একদিনের ব্যবধানে ডেঙ্গুতে দ্বিগুনের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। এদিকে গত বুধবার খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ কমিটির চতুর্থ সভায় জানানো হয় বর্তমানে খুলনা মহানগরীর দোলখোলা ও রায়পাড়া এলাকাকে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে চিহিৃত করা হয়েছে। যার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বিগ্ন দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৩ হাজার ৯০৫ জন। এ সময়ে মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। শনাক্ত ও মৃত্যুতে শীর্ষে রয়েছে খুলনা জেলা। এই জেলায়তে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৭৯ জন এবং মৃতৃ্যু হয় একজেনর। এই সময়ের মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় ৪০৮ জন এবং মৃত্যু হয় ৭ জনের। খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) অধিপ্তর ও খুলনা সিভিল সার্জন দপ্তরের সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) অধিপ্তরের সূত্র মতে, গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ১৪৩ জন। এর মধ্যে খুলনায় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৬৭ জন। যা আগের দিনের তুলনায় দ্বিগুনেরও বেশি। এছাড়া বাগেরহাটে ২ জন, যশোরে ৯ জন, ঝিনাইদহ ৫ জন, মাগুরায় ৬ জন, নড়াইলে ৯ জন, কুষ্টিয়ায় ১৩ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১২ জন, মেহেরপুরে ৭ জন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে একদিনে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ১১ জন। এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৩ হাজার ৯০৫ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। এ সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ হাজার ৫২৩ জন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৩১৯ জন। এ পর্যন্ত রেফার্ড করা হয়েছে ৫১ জনকে। খুমেক হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার সুহাষ রঞ্জন হালদার বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় এ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ১১ জন। এ সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৯ জন। এ পর্যন্ত হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৪৩৯। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের । বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৬৮ জন। খুলনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র মতে, গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা জেলাতে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৬৭ জন। যা এ বছরে এখন পর্যন্ত বিভাগের মধ্যে ডেঙ্গু রোগী ভর্তিতে সর্বোচ্চ। ভর্তির মধ্যে পুরুষ রয়েছে ৩৯ জন এবং মহিলা রয়েছে ২৮ জন। যার মধ্যে শিশু ( পুরুষ) ১১ জন এবং শিশু ( মহিলা ) রয়েছে ৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য এলাকাগুলো হচ্ছে নগরীর নতুন বাজার, মুন্সী পাড়া, ময়লাপোতা মোড়, বাগমারা, শিববাড়ি, খালিশপুর, হাজী মহাসিন রোড, টুটপাড়া, সোনাডাঙ্গা, পশ্চিম বানিয়াখামার, খানজাহানআলী রোড, বসুপাড়া, খুলনাসদরসহ রূপসা, দিঘলিয়ার বাসিন্দারা রয়েছেন। এ পর্যন্ত খুলনায় ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ১০৭৯ জন এবং মৃত্যু হয় একজনের। এসময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯৭৪ জন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৭৪ জন। এ সময়ে উন্নতি চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা হয়েছে ৩০ জনকে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে খুলনা মহানগরীর দোলখোলা এবং রায়পাড়া এলাকাকে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুরর হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দুটি এলাকাসহ খুলনা সিটি করপোরেশনের অন্যান্য জনবহুল স্থানে জনসচেতনতায় মাইকিংসহ অন্যান্য প্রচার কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। বুধবার সকালে সিটি করপোরেশনের জিআইজেড সভাকক্ষে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ কমিটির চতুর্থ সভায় এ তথ্য জানানো হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন খুলনা বিভাগের স্থানীয় সরকার দফতরের পরিচালক মো. তবিবুর রহমান। সভায় তিনি বলেন, ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতার বিকল্প নেই। ডেঙ্গু পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। খুলনা শহর একটি আদর্শ হেলথ সিটি। কাজেই বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। প্রত্যেকে তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে এটির প্রকোপ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। সভায় কেসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান জানান, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ওয়ার্ডভিত্তিক ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু আছে। প্রোগ্রামের আওতায় মশা নিধনে প্রতিটি ওয়ার্ডে দিনে দুই শিফটে কাজ করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় জানুয়ারি থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কোনও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।