অন্তিম যাত্রায় মুক্তিযুদ্ধের চিরস্মরণীয় সংগ্রামী গণশিল্পী সুজেয় শ্যামÑগণশিল্পী সংস্থা

খবর বিজ্ঞপ্তি ঃ মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম কণ্ঠযোদ্ধা,বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থার কেন্দ্রীয় সভাপতি, বিশিষ্ট সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী সুজেয় শ্যাম দীর্ঘদিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় (১৮ অক্টোবর) রাত ৩টার সময় ৭৮ বছর বয়সে চলে গেলেন অন্তিম যাত্রায়। শিল্পীর এ সময় কাছে থাকা একমাত্র জামাতা দীপঙ্কর দেব ও কন্যা রূপা মঞ্জুরী শ্যাম এই দুঃসংবাদ নিশ্চিত করেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গণসঙ্গীত পরিবেশনার মধ্যে দিয়ে শিল্পী সুজেয় শ্যামের নাম আমাদের কাছে পরচিত হয়ে ওঠেন। শিল্পীর সুরারোপিত গানগুলো সে সময়ে রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাদের যেমনি দ্রোহের শাণিত চেতনায় লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করতো তেমনি পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিকামী জনগণকে সে গান সাহসী করে তোলে। তাঁর সুরারোপিত গান, রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি বাংলাদেশের নাম, রক্ত চাই রক্ত চাই, আহা ধন্য আমার জন্মভূমি, আয়রে চাষি মজুর কুলি, মুক্তির একই পথ সংগ্রাম, শোনরে তোরা শোন, এমনিসব বারুদে বিস্ফোরণের মতো গান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রতিনিয়ত প্রচারিত হতো। নয় মাসের যুদ্ধশেষে বিজয়ের গৌরবগাঁথায় ১৬ ডিসেম্বর একাত্তরে যখন পাক-হানাদার বাহিনী ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করছে তখন গীতিকার শহীদুল ইসলামের দ্রুত লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ শিল্পী সুজেয় শ্যাম চটজলদি সুর করে ফেলেন এবং ওই কালজয়ী গান সে মুহূর্তে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বার বার প্রচারিত হতে থাকে, সে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। মুক্তিযুদ্ধের এমনি টুকরো টুকরো কত গল্পকথার ইতিহাস বাংলাদেশের প্রামাণ্য দলিল হয়ে আছে, তাকি কোনো অপ-শক্তি শত চেষ্টাতেও মুছে ফেলতে পারবে ??? এক একটি গান ছিল বুলেটের চেয়েও দ্বিগুণ শক্তিশালী। শিল্পী সুজেয় শ্যামের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৪ মার্চ সিলেট জেলাতে। পিতা অমরেন্দ্র চন্দ্র চা বাগানের মালিক, পরিবারে বাবা-মা দু’জনেই নজরুল সঙ্গীতের পারদর্শী শিল্পী ছিলেন, অন্যান্য ভাই-বোনেরাও সঙ্গীতের চর্চায় ছিলেন। পারিবারিকভাবেই শিল্পী সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন। চলচ্চিত্রের বহু গানে সুরারোপ করেছেন এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছন, যেমনÑভুল যখন ভাঙলো, সূর্য গ্রহণ, সূর্য সংগ্রাম, অবাঞ্ছিত, হাছন রাজা, একাত্তরের ক্ষুদিরাম, একাত্তরের মা জননী, জয়যাত্রা, এমনি সব চলচিত্র। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ৯৬টি গান নিয়ে পরবর্তীতে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের নিয়ে প্রকাশিত দু’টি এ্যালবামের সঙ্গীত পরিচালনা করেন শিল্পী সুজেয় শ্যাম। শিল্পী অনেক সম্মাননায় পুরষ্কৃত হয়েছেন, ২০১৮ সালে একুশে পদক, চলচিত্রে কয়েকবার শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালকের জাতীয় পুরষ্কার, শিল্পী আবিদ স্মৃতি পরিষদ পুরষ্কার, বাচসাস পুরষ্কার, ভারত গৌরব সম্মাননা ইত্যাদি এমনি বহু সম্মাননা পুরস্কারে শিল্পী ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থার তিনি দীর্ঘদিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন এবং দেশের বিভিন্ন টেলিভিশনে ও বেতারে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন। শিল্পী সুজেয় শ্যাম আজীবন দেশের মানুষের প্রতি সংগ্রামী এক দায়িত্ব উপলব্ধি করতেন এবং তার গান শুনলেই তা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। মুক্তিযুদ্ধের এই মহান শিল্পী সুজেয় শ্যামের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করে বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থার কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এ্যাড. মিনা মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান এক শোকবার্তায় বলেন, দেশের একটি চরম ক্রান্তিকালে যখন মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ঐতিহাসিক গৌরবগাঁথা চিরতরে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রে একটি শ্রেণী লিপ্ত, ঠিক সেই সময়ে শিল্পী সুজেয় শ্যামের এই চলে যাওয়া নিশ্চয়ই জাতি একটি গভীর শূন্যতা অনুভব করবে। শোকবার্তায় আরো বলা হয়, দেশের আগামী সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রামে ও জনগণের সার্বিক মুক্তি সংগ্রামে শিল্পী সুজেয় শ্যামের গান, তাঁর স্মৃতি আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। এই মহান শিল্পীর মৃত্যুতে গণশিল্পীর পক্ষ থেকে তাঁর প্রিয়জনদের সমবেদনা জ্ঞাপন ও শিল্পীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে শোক-বিবৃতিতে আরো স্বাক্ষর করেছেন সংগঠনের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য নাট্যজন মামুনুর রশীদ, খায়রুল আলম সবুজ, প্রফেসর সুশান্ত দাস, অন্যতম সহ-সভাপতি অধ্যাপক আব্দুস সালাম, নাসরিন খান লিপি, এড. বেলায়েত হোসেন খান, রুচিরা সুলতানা, মাহমুদুর রহমান এজাজ, এড. মোশফেকা জাহা কণিকা, আতিয়ার রহমান, সামস উজ জোহা, যোগেন বিশ্বাস, রুবেল মজুমদার, তৈয়বুর রহমান বাবু, জাহিদ পান্হ, শাওন জাহিদ, মাযহারুল হক লিপু, অধ্যাপক গৌতম কুমার কুন্ডু, ফিরোজ আহম্মেদ বাবলু, এড. মাসুদুল আলম দোহা, পিন্টু ভৌমিক, পলাশ, আব্দুল গফ্ফার, মির্জা খলিল জিব্রান টুটুল, তনুজা আকবর, সুভাষ বিশ্বাস, সমিরন রাহা, আজমল হোসেন ঢালি, অধ্যাপক অমিত কুমার, সাইফুজ্জামান পলাশ, কাওছার আহম্মেদ, এস এম মিল্টন, মল্লিক বাবুল হোসেন, মঞ্জুর মোর্শেদ সাগর, মৃত্যুঞ্জয় সরদার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।