দৌলতপুরে ট্যাংকলরীর ভয়াবহ বিস্ফোরণ
# বিকট শব্দে আতঙ্কিত এলাকাবাসী #
# কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও, পার্শ্ববর্তী ভবন বেশ ক্ষতিগ্রস্ত #
স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা নগরীর দৌলতপুরহর খুলনা যশোর মহাসড়ক সংলগ্ন নিউ গাউছিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসে মেরামতের জন্য আসা ঝিনাইদহ-ঢ-৪১-০০৪১, রেজিষ্ট্রেশন নম্বরের ট্যাংকলরীটি রিপেয়ারিংকালীন সময়ে রবিবার ( ২০ অক্টোবর) সকাল আনুমানিক ১১টার পর বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় ট্যাংকলরীটির খন্ড বিখ-িত অংশ বিভিন্ন দিকে গিয়ে ছুটে পড়ে আশপাশের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে ওই ঘটনায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ট্যাংকলরীটির বিস্ফোরণের বিকট শব্দে প্রত্যক্ষদর্শীরাসহ আবাসিক বাসা-বাড়ীর লোকজন চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। খুলনা বিস্ফোরক পরিদপ্তর বলছে, পেট্রোলিয়াম (হাইড্রোকার্বন) হতে সৃষ্ট উচ্চ ঘনমাত্রার গ্যাস মিশ্রন এবং অক্সিজেনের লেবেল বেশি (৩০-৪০ পার্সেন্ট) থাকায় ট্যাংকলরীর কেবিনের পিছনের চেম্বারের সম্মুখ পার্টিশনসহ মধ্যবর্তী আরো দুটি পার্টিশন পর্যায়ক্রমে খুলনা-যশোর মহাসড়কের পশ্চিম পাশে অবস্থিত তিনতলা ভবনে একটি /দুটি এবং তিনতলা ভবনের দক্ষিণে হাস-মুরগী খামারের পুকুরে গিয়ে পড়ে। ওই এলাকার সচেতন মহল বলছে, আবাসিক এলাকার মধ্যেও এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুত সময়ের মধ্যে আবাসিক এলাকার মধ্য থেকে এই সকল প্রতিষ্ঠান অবসরণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, নচেৎ যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তার উদাহরণ হিসেবে তারা ঘটে যাওয়া এই বিস্ফোরণ কে দায়ী করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল রবিবার সকাল ১১ টার পর তারা নিউ গাউছিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসে কয়েকজন শ্রমিককে ট্যাংকলরীটির মেরামতের কাজ করতে দেখেন। হঠাৎ তারা একটি বিকট শব্দ শুনতে পান এবং চারিদিকে ধোয়া দেখতে পান। তারা জানান, এতই জোরে বিকট শব্দ হয়েছে যে তারা ভয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েন। বিস্ফোরণে ওয়ার্কশপটির চাল উড়ে যায়, বিদ্যুতের তার ছিড়ে যায়, ট্যাংকলরীটির কেবিন উড়ে গিয়ে খুলনা যশোর মহাসড়কের পশ্চিম পাশের একজন কর্মকারের দোকানে ভিতর গিয়ে ঢুকে পড়ে, ট্যাংকলরীর একটি পার্টিশন উড়ে গিয়ে মালেক মঞ্জিলের দেয়ালে গিয়ে আঘাত করে, আরেকটি পার্টিশন পার্শ্ববর্তী হাস খামারের পুকুরে গিয়ে পড়ে। এতে পার্শ্ববর্তী মালেক মঞ্জিল নামের একটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী তাপস কর্মকার জানান, এমন শব্দ কখনো শুনিনি। মনে হল আকাশ থেকে মিসাইল মারছে। আমরা ৫ জন মিলে আমার দোকানে বসে কাজ করছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনি, চারিদিকে ধোয়া ধোয়া হয়ে যায়। এত জোরে শব্দ হয়েছে চোখে মুখে ঝাপসা দেখেছি। ভয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েছি। ট্যাংকলরীটির কেবিন রাস্তার ওপর থেকে (খুলনা যশোর মহাসড়কের পূর্ব পাশ) উড়ে এসে আমার দোকানের ভিতর ঢুকে পড়ে। হয়তোবা জীবনে কোনো ভালো কাজ করেছিলাম, তাই উপরওয়ালা প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছেন। বিস্ফোরণে উড়ে আসা ট্যাংকলরীর কেবিনটি আমাদের গায়ে লাগলে জায়গায় মারা যেতাম।
মালেক মঞ্জিলের মালিক কলেজ শিক্ষক হাদিউল ইসলাম রনি জানান, ট্যাংকলরী
বিস্ফোরণের ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত কলেজ থেকে বাসায় ছুটে আসি। বাড়িতে এসে দেখি ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ট্যাংকলরীর একটি পার্টিশন উড়ে গিয়ে আমার ভবনের দেয়ালে আঘাত করে, এতে দেয়ালের অংশ বিশেষ ভেঙ্গে ঘরের ভিতরে ঢুকে যায়, ঘরের ভেতর ও বাইরের জানালার কাঁচের গ্লাস ভেঙ্গে যায়, দরজা জানালার লক ভেঙে পড়ে, দেয়ালে ফাটল দেখা গেছে। ঘরে স্ত্রীসহ ছোট দুটি বাচ্চা ছিল বিস্ফোরণের উচ্চ শব্দে তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। প্রশাসন এসে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার তালিকা করতে বলেছে। মালেক মঞ্জিলের দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া শিখা জানান, আমি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। সকাল সাড়ে ৭টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। ট্যাংকলরী বিস্ফোরণের ঘটনা শুনে দ্রুত বাসায় ছুটে আসি। এসে দেখি আমার ঘরের দেয়াল ভাঙ্গা, জানালার কাচ ভাঙ্গা। বাড়ির মালিকও এসে দেখে গেছে। এ ব্যাপারে নিউ গাউছিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস’র মালিক মাসুদ পারভেজ মুঠোফোনে জানান, ট্যাংকলরীটি মেরামতের জন্য আমার ওয়ার্কশপে আসে। ট্যাংকলরিটির ভিতরে থাকা দাহ্য পদার্থ ভালোভাবে ওয়াশ না করার কারণে ট্যাংকের ভিতরে থাকা গ্যাস বের হতে পারিনি। অসাবধানতাবশত কারণেই এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে আমার ধারণা।
এব্যাপারে দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) মীর আতাহার আলী জানান, দৌলতপুর থানাধীন নতুন রাস্তা মোড় সংলগ্ন (খুলনা -যশোর মহাসড়ক সংলগ্ন) এলাকায় ট্যাংকলরী বিস্ফোরণের ঘটনা শুনতে পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে আমিসহ আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছুটে যাই। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি, ওই ঘটনার তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় বিস্ফোরক পরিদপ্তরের পরিদর্শক ড. আসাদুল ইসলাম জানান, পেট্রোলিয়াম (হাইড্রোকার্বন) হতে সৃষ্ট উচ্চ ঘনমাত্রার গ্যাস মিশ্রন এবং অক্সিজেনের লেবেল বেশি (৩০-৪০ পার্সেন্ট) থাকায় ট্যাংকলরীর কেবিনের পিছনের চেম্বারের সম্মুখ পার্টিশনসহ মধ্যবর্তী আরো দুটি পার্টিশন পর্যায়ক্রমে খুলনা-যশোর মহাসড়কের পশ্চিম পাশে অবস্থিত তিনতলা ভবনে একটি /দুটি এবং তিনতলা ভবনের দক্ষিণে হাস-মুরগী খামারের পুকুরে গিয়ে পরে। এই ধরনের কাজ করার জন্য পূর্ব থেকে পেট্রোলিয়াম (হাইড্রো কার্বন) বাষ্পমুক্ত করে গ্যাস পরীক্ষাকরণ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা কার্য সম্পূর্ণ করে নিশ্চিত হওয়ার পর কাজ করা উচিত। বিষয়টি তদন্ত করে দাপ্তরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই দুর্ঘটনার সংবাদ শুনে তাৎক্ষণিক দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মীর আতাহার আলীসহ উদ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মীর আতাহার আলী বলেন, আজকের এই দুর্ঘটনার বিষয়ে আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। রাস্তার পাশে গড়ে তোলা এই ওয়ার্কসপটি বিধিসম্মত হয়েছে কিনা তাও আমরা খতিয়ে দেখব। নিউ গাউছিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস এর মালিক মাসুদুর রহমান জানান, আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে ছিলাম। তেল পরিবহনের ট্যাংকলরি গাড়ির ড্রাইভার এবং হেল্পার আমার কর্মচারীদের ভুল তথ্য দিয়ে কাজ করিয়েছেন বলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলী আজিম জানান, আমাদের এই ট্যাংকলরির যে ক্ষতি হয়েছে তার সমস্ত ক্ষতিপূরণ আমরা সঠিকভাবে সব এই ওয়ার্কশপ মালিকের কাছ থেকে বুঝে নেব। কারণ তাদের ভুলের কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। খুলনার সচেতন মহল মনে করেন খুলনা যশোর মহাসড়কে কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বহু এ ধরনের ওয়ার্কসপ যা বিপদজনক যেকোনো সময় এরকম বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিস্ফোরণ ঘটলে সবাই নড়েচড়ে বসে। এছাড়া কেউ কোনো খবর রাখে না। পরিবেশ অধিদপ্তর এগুলো কিভাবে লাইসেন্স প্রদান করে। তাই কর্তৃপক্ষের নিকট আমাদের আবেদন তারা যেন দ্রুত সময়ে এই জনবহুল এলাকা থেকে বড় ধরনের ওয়ার্কশপগুলো অপসারণ করেন।