চার বছর অপেক্ষার পর খালিশপুরের চাঞ্চল্যকর কলেজ ছাত্র হাসিব হত্যা মামলার রায় আজ
আসামী ২৬ জন
স্টাফ রিপোর্টার ঃ নগরীর খালিশপুরে চাঞ্চল্যকর কলেজ ছাত্র হাসিব হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম চার বছর পর আজ রায় ঘোষনা হবে। ইতোমধ্যে আগ্রুমেন্ট শেষ হয়েছে। মামলা বিচার চলছে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ৩নং আদালতে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ৭ মার্চ থেকে নগরীর খালিশপুরে আলোচিত কলেজ ছাত্র হাসিবুর রহমান নিয়াজ (২৫) হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। পরে নির্ধারিত সময়ে বিচার শেষ না হওয়ায় আদালত মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বদলী করে। সেই আদালতে বিচার কার্য চলছে। জীবনের নিরাপত্তার অভাবে মামলার বাদী ও নিহতের পিতা হাবিবুর রহমান শিকদার একাধীকবার বিভিন্ন থানায় জিডি করেন। তারপরও তিনি খুলনায় নিরাপত্তার অভাবে থাকতে পারেননি। গত চার বছর ধরে তিনি বরিশাল থেকে খুলনায় মামলার তারিখের দিন এসে চলে যেতেন। যার ধারাবাহিকতা এখনও রয়েছে। এর আগে আসামী অন্তু আর আরাফাত স্বেচ্ছাসেবকলীগের মহানগর কমিটিতে স্থান পাওয়ার পর তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। তাদের ভয়ে বাদী এলাকা ছাড়া হন অনেক আগে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ হত্যার ঘটনায় ২০২০ সালের ২০ আগস্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। গত ২৪ ডিসেম্বর ওই একই আদালতে চার্জশীটের ওপর শুনানি শেষে আদালত তা আমলে নিয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামীরা হলো-কবির হোসেনের ছেলে সৈকত(৩২), রুনু হাওলাদারের ছেলে মেহেদী হাসান রাব্বি (২২), আওয়ামী লীগ নেত্রী শারমীন রহমান শিখার ছেলে রওশন আনিজি অন্তু (৩৩), নুরু ওরফে কানা নুরুর ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (২২), শাহিন আলম সেন্টুর ছেলে ইমদাদুল ইসলাম হৃদয় (২২), আমির খানের ছেলে আরিফ ওরফে চোরা আরিফ (২৯), আমির খানের ছেলে মো. মুন্না (২৩), আমিন উদ্দীনের ছেলে রফিকুল হাসান শাওন ওরফে আতাং বাবু (২৭), ফখরুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৬), সিদ্দিকের ছেলে মোস্তাক আহমেদ (২৭), মাইকেল সরদারের ছেলে মিঠাই হৃদয় (২৭), মো. শাকিলের ছেলে ফাইম ওরফে কালা ফাইম (২২), চুন্নুর ছেলে রুবেল (২৫), কবির হোসেনের ছেলে মিজানুর রহমান (২৮), বাহারুল ইসলামের ছেলে সবুজ (২৫), কুদ্দুসুর রহমানের ছেলে আরাফাত হোসেন (৩০), গোলাম মোস্তফার ছেলে তুষার (২৪), সিরাজুল ইসলাম নান্নুর ছেলে আশিকুর রহমান তুষার (২৬), জাকির হোসেনের ছেলে রাব্বী ওরফে নাটা রাব্বী (২৬), মনোয়ার হোসেনের ছেলে নাঈম বাবু ওরফে পয়েন্ট বাবু (২৬), আব্দুল জব্বারের ছেলে রায়হান (২৩), বেল্লাল হোসেনের ছেলে ইয়াসির রাব্বী ওরফে নাটা জুয়েল (২৬), কালামের ছেলে সালমান (২০), নাজমুল শেখের ছেলে সাকিব শেখ (২৩), আব্দুর রহমানের ছেলে নাইমুর রহমান ফাইম (২১), আব্দুল বারেক হাওলাদারের ছেলে রুনু হাওলাদার (৩৫), মুহিত মুনতাসির ইথুন (১৫)। তদন্ত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ নেত্রী শারমীন রহমান শিখার ছেলে রওশন আনিজি অন্তুর নেতৃত্বে কলেজ ছাত্র হাসিবকে হত্যা করা হয়। জামিন বাতিল হওয়া আসামীরা হলো স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা রওশন আনিটো অন্তু ও ফয়জুর রহমান আরাফাত, সাজ্জাদ, সাইফুলসহ ১৬ জন। তারা জানান, হাসিব হত্যা মামলার আসামি সাকিব ও ফাহিমসহ তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তবে মামলার আসামী ইথুনের বয়স কম হওয়ায় তার বিচার হবে শিশু আদালতে বিচার হয়। সে রায়ে খালাস পায় বলে বাদীর স্বজনরা জানান। বাদীর আইনজীবী স্বপন কুমার দাস বলেন, আজ মঙ্গলবার খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এ রায় ঘোষণা করা হবে। যার জিআর নং-১৮৮/২০। এ আদালতের বিচার হচ্ছেন আঃ সালাম। এপিপি রয়েছেন রুমানা তানহা। এ মামলায় আসামী মোট ২৬ জন। এর মধ্যে ১৬ জন কারাগারে রয়েছে। বাকীরা পলাতক রয়েছে। এ মামলায় স্বাক্ষী হয়েছে ২৭ জনের। এ মামলাটি বাদীর জন্য ভাল মামলা। মামলায় তিন জন আসামীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী করা আছে। লোকহর্ষক খুনের ভিডিও রয়েছে। স্বাক্ষী আর প্রমাণ যা আছে তাতে ৩/৪ জন আসামীর ফাঁসির আদেশ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৯ আগস্ট রাত ৯ টার দিকে এলাকার মাদক বিক্রির প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে খালিশপুর ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশু পার্ক সংলগ্ন ক্রিয়েটিভ কার্টস এ্যন্ড কফি হাউজের মধ্যে একদল সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করে তৈয়্যেবা কলোনীর বাসিন্দা ও মিল শ্রমিক মো. হাবিবুর রহমানের ছেলে কলেজ ছাত্র হাসিবুর রহমান নিয়াজকে। এ সময় তাকে বাঁচানোর জন্য দু’ বন্ধু যোবায়ের ও রানা এগিয়ে এলে তাদেরও কুপিয়ে জখম করা হয়। হত্যাকান্ডের ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়। এ ব্যাপারে নিহতের পিতা হাবিবুর রহমান ঘটনার পরের দিন বাদী হয়ে খালিশপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।