স্থানীয় সংবাদ

খুলনা আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এখনও আতঙ্কে

নানা দুর্নীতির অভিযোগে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসক
৫ই আগস্ট এর পর রাতের আঁধারে অ্যাম্বুলেন্সে করে পালিয়ে যান অধ্যক্ষ

স্টাফ রিপোর্টার ঃ একটা সময় ছিল সারা বাংলাদেশের মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থার আইকন ছিল খুলনার ঐতিহ্যবাহী খুলনা আলিয়া কামিল মাদ্রাসা। ১৯৫২ সালে গঠিত ঐতিহ্যবাহী এই মাদ্রাসাটি লেখাপড়া থেকে শুরু করে সর্বস্তরেই বাংলাদেশের মধ্যে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছিল রাজনীতিমুক্ত দ্বীনই এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। ২০১২ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষ মোঃ সালেহ এর মৃত্যুর পরেই রাজনীতিমুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দলীয়করণ করে সিনিয়র শিক্ষকদের বাদ দিয়ে জুনিয়র শিক্ষক মাওলানা আ খ ম জাকারিয়াকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। আর এরপর থেকেই খুলনা আলিয়া কামিল মাদ্রাসায় তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের আধিপত্য বিস্তার করে। লুটপাট করা হয় মাদ্রাসার অর্থ। লেখাপড়া, হোস্টেলসহ সবক্ষেত্রেই অধ্যক্ষের অনুসারী ছাড়া কেউ ক্লাস করতে পারতো না এবং হোস্টেলে থাকাও অসম্ভব ছিল। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র রাজনীতি না করলে ধরিয়ে দেওয়া হতো বোমা সহ বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে। ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে পালিয়ে যায় জাকারিয়া সহ তার দোসররা। অধ্যক্ষের দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগে খুলনা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে এখনও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে রয়েছে চাপা ক্ষোভ ও আতঙ্ক। রাজনীতিমুক্ত দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে দলীয়করণ করার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা যেমন ভেঙে পড়েছে, তেমনি এখনো তাদের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থী। আল হাদিস এন্ড স্টাডি এর অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, আমরা আগে হোস্টেল তো দূরে থাকা ক্লাস করতে পারতাম না । ছাত্রলীগ না করলে হোস্টেলে সিট হতো না। ক্লাসে দুই একজন স্টুডেন্ট হতো এছাড়া অন্য কোন শিক্ষার্থী ক্লাস করতে ভয় পেত। কামিল হাদিস এর তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খুলনা মাদ্রাসা সমন্বয়ক আবুলাইস বলেন, সাবেক অধ্যক্ষ খুলনা আলিয়া কামিল মাদ্রাসাটাকে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নানাভাবে নির্যাতন করেছে। তার পছন্দের দল না করলে হোস্টেলে সিটসহ ক্লাসেও স্থান মিলতো না সাধারণ শিক্ষার্থীদের। সিনিয়র শিক্ষার্থীদের তিনি কখনোই ক্লাশ করতে দিতেন না, কারণ তার অন্যায় ও অপকর্মের বিরুদ্ধে সিনিয়র শিক্ষার্থীরা যদি কোন প্রকার আন্দোলন ও তার বিরুদ্ধে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করে নেতৃত্ব দেয় এই ভয়ে। মুখ খুললেই ককটেল বোমা সহ বিভিন্ন অপরাধ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ধরিয়ে দেয়া হতো। তবে এখনো তাদের দোসরা মাদ্রাসার মধ্যে আনাগোনা করছে। এ নিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে নানা আতঙ্ক।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button