স্থানীয় সংবাদ

সাবেক ভিসি, প্রো ভিসিসহ ১৮ শিক্ষককে অপসারণ ও বিচারের দাবিতে উত্তাল কুয়েট

ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনপীড়নে সহযোগী, নিয়োগ ও হলের সিট বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার : জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দমনপীড়ণ, বিশ^বিদ্যালয়ে ব্যাপক রাজনৈতিক প্রভাব, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, হলগুলো মাদকের আখড়ায় পরিণত করা, সিট বাণিজ্য, হল ডাইনিংয়ের অর্থ আত্মসাৎ, সাধারণ ও নিরীহ ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষককে বিশেষ ট্যাগ দিয়ে অমানবিক শারীরিক নির্যাতন, জীবন নাশের হুমকি দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর বিশ^বিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর, সাবেক প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. সোবহান মিয়া, সাবেক পরিকল্পনা ও উন্নয়নের পরিচালক বিশ^বিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. শিবেন্দ্র শেখর শিকদার, বিশ^বিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ রাফিজুল ইসলামসহ বিশ^বিদ্যালয়ের ১৮ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে (কুয়েট)। তাদের কুয়েটে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর এর কাছে স্বারকলিপি প্রদান এবং প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
কুয়েট পরিবারের ব্যানারে বুধবার সকাল ১০টায় বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ঘন্টাব্যাপি মানববন্ধন শেষে অভিযুক্ত শিক্ষকদের দ্রুত অপসারণসহ বিচারের দাবিতে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ এর নিকট স্বারকলিপি প্রদান করেন।
স্বারকলিপিতে বলা হয়, বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি খুবই শান্তিপূর্ণ ভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি বজায় রেখে পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু বিগত ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুলাই-আগষ্ট মাস পর্যন্ত একটি সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীতন্ত্র কায়েম করে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের সুনাম, ঐতিহ্য, সুশাসন, কর্মপরিবেশ, সহাবস্থান, পারস্পরিক সম্প্রিতি ও শ্রদ্ধাবোধ ইত্যাদি ধ্বংস করা হয়েছে। ব্যাপক রাজনৈতিক প্রভাব, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, হল গুলোতে মাদকের আখড়া ও মাদক বাণিজ্য, হলের সীট বাণিজ্য, হল ডাইনিং এর বরাদ্দ থেকে অর্থ আত্মসাৎ সাধারণ ও নিরীহ ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষকসহ অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল শ্রেণির মানুষের উপর অমানবিক শারীরিক অত্যাচার ও নির্যাতন, অনেককে জীবন নাশের হুমকি ইত্যাদি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক ও নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছিল। কুয়েটের অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সরাসরি এবং তৎকালীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনকে লেলিয়ে দিয়ে এসকল অন্যায়, অত্যাচার ও অপকর্মগুলো অত্যান্ত সূচারুরুপে ও সুপরিকল্পিতভাবে সংঘটিত করেছে। এ নিপীড়ক ছাত্র সংগঠনটি (ছাত্রলীগ) অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোন অপরাধ নাই যা সংঘটিত করেনি। তারা চাকরি বিধিমালার তোয়াক্যা না করে রাজনৈতিক দলের হয়ে স্বশরীরে নির্বাচনি লিফলেট বিতরণ, দলীয় প্রচার-প্রচারনা, মাইকিং, সভামঞ্চে বক্তৃতা প্রদান করেছে এবং অনেককে ভয়ভীতি, হমকি ধমকি দিয়ে এসব কাজ করতে বাধ্য করেছে। পূর্বের অপকর্মগুলোর ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে তারা সক্রিয় থেকে আন্দোলনকারী ছাত্র জনতা শিক্ষকগণকে অত্যান্ত নিকৃষ্ট ভাষায় কটুক্তি, মারধর, গালিগালাজ, হমকি-ধামকি, চাকরিচ্যুত করার হুমকি এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র- জনতাসহ সকলকে অকথ্য ভাষায় হমকি দিয়েছিল। বর্তমানে তারা বিভিন্ন জায়গায় গোপন বৈঠক করে কিভাবে তারা কুয়েটকে অশান্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ ধ্বংশ করাসহ বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করার চক্রান্ত করছে।
স্বারকলিপিতে বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও পুরকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর, পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. শিবেন্দ্র শেখর শিকদার, সিএসই বিভাগের প্রফেসর ড. পিন্টু চন্দ্র শীল, রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. আব্দুল মতিন, পুরকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. কাজী এবিএম মহিউদ্দিন, পুরকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ রাফিজুল ইসলাম, সাবেক প্রো ভিসি ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. সোবহান মিয়া, পুরকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. সজল কুমার অধিকারী, ইসিই বিভাগের প্রফেসর ড. পল্লব কুমার চৌধুরী, এলই বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ আবুল হাসেম, ইউআরপি বিভাগের প্রফেসর ড. তুষার কান্তি রায়, বিইসিএম বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ ইকরামুল হক, পুরকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ আতাউর রহমান, গণিত বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ হাবিবুর রহমান, ইইই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস, পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, মোঃ আলমগীর হোসেন, মানবিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহরিয়ার রোমান এবং মানবিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুহেলী শায়লা আহমেদর এর নাম উল্লেখ করে তাদেরকে বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত করে অপসারণ এবং বিচারের দাবি জানানো হয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button