স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় টেন্ডার-চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিতে দপ্তরে দপ্তরে হানা!

ছাত্রনেতা পরিচয়ে এরা কারা?
প্রয়োজন গোয়েন্দা নজরদারির

স্টাফ রিপোর্টার : ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পরিবর্তনের পর আপামর জনসাধারণ স্বস্থির নিশ্বাস নিয়েছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারেরও পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার। কিন্তু এরই মধ্যে ক্ষমতা পরিবর্তনের সুযোগ নিতে শুরু করেছে একটি দুষ্টুচক্র। করছে টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজিও। বিশেষ করে ‘ছাত্রনেতা’ পরিচয়ধারী দুষ্টুচক্রটি টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিতে খুলনা মহানগরের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে হানা দিচ্ছে। অফিস প্রধান-কর্তাদের বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে টেন্ডার বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। একাধিক সরকারি দপ্তর থেকে এ ধরণের অভিযোগ উঠলেও কর্তা-ব্যক্তিরা চাকরির ভয়ে এ বিষয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না। তবে, সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি দপ্তরে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর ওপর তাগিদ দিয়েছেন তারা।
সূত্র মতে, নগরীতে চাঁদবাজির অভিযোগ নতুন নয়। গণমাধ্যমে প্রায়ই উঠে আসছে চাঁদাবাজির অভিযোগ। সড়ক থেকে শুরু করে বাজার ব্যবস্থা, ফুটপাতের হকার মার্কেট ও সব ক্ষেত্রেই চাঁদাবাজি, অনিয়ম-দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা সৃস্টির পায়তারা চলছে। চাঁদাবাজি বন্ধে অতীতে কখনো কখনো প্রশাসনকে তৎপর হতে দেখা গেলেও পরোপুরি চাঁদাবাজি বন্ধ করা যায়নি। বর্তমানেও বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে মেতে উঠছে চক্রগুলো। চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও টেন্ডারবাজির জন্য দায়ী মূলত রাজনীতির ধারা।
ইতিপূর্বে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির কারণে কোনো দল ক্ষমতাসীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সমর্থিত বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। বিশেষ করে পতিত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন রাজনৈতিকভাবেই তারা চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির নিয়ন্ত্রণ করেছে। খুলনার শেখ বাড়িই ছিল চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণ ও ভাগ-বাটোয়ারার আখড়া। এ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয় অস্ত্র ও পেশিশক্তি দিয়ে। এই চাঁদাবাজি নিয়ে অসংখ্যবার গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। চাঁদাবাজি বন্ধ করার কার্যকর কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। বরং চাঁদাবাজির মাত্রা দিন দিন বেড়েই গেছে।
এই সূত্র জানান, ৫ আগষ্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর খুলনার চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজদেরও পরিবর্তন হয়েছে। তবে, আগে শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন দলের নামে এসব অপকর্ম হলেও বর্তমানে রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি নতুন সংযোজন হয়েছে ‘ছাত্রনেতা’ পরিচয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সুযোগ ও নাম ব্যবহার করে সুযোগ সন্ধানী চক্রটি চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে খুলনা সিটি কর্পোরেশন, এলজিইডি, সড়ক ও সেতু বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ- ওজোপাডিকো, খাদ্য বিভাগ-আরসি ফুড, ডিসি ফুড, স্বাস্থ্য বিভাগ, ওয়াসা, শিক্ষা প্রকৌশল, গণপূর্ত বিভাগ ও জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে এদের অপতৎপরতা লক্ষণীয়। তবে, অনেক ক্ষেত্রে পরস্পর যোগসাজসে খোদ প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির অভিযোগ পাওয়া যায়। সরষের ভেতরেই লুকিয়ে রয়েছে ভূত। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে যাদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, তাদের যোগসাজশেই চলছে এই অপকর্ম। বিশেষ করে ফ্যাসিবাদের দোসররা পুরণো চাঁদাবাজদের পরিবর্তে এখন নতুন চাঁদাবাজদের পৃষ্ঠপোষকতাও শুরু করেছে। বিনিময়ে আগের মতই হালুয়া-রুটির ভাগ পাচ্ছেন তারা।
চাঁদাবাজির এই দুষ্টচক্র ভাঙা জরুরি। শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। দ্রুত সরকার ও প্রশাসনকে চাঁদাবাজির অভিযোগ আমলে নিতে হবে। সরকারি দপ্তরগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। যারা চাঁদা আদায় করছে তাদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ ছাড়া এই চাঁদাবাজি বন্ধ হবে না। চাঁদাবাজি, অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ এবং শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button