ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র আঘাতে ক্ষতির আশঙ্কায় দিঘলিয়ার মৎস্য চাষিসহ কৃষকেরা

সৈয়দ জাহিদুজ্জামান, দিঘলিয়া থেকে ঃ দিঘলিয়ায় বর্তমানে সারাদেশের ন্যায় মাঠে মাঠে আমন ধান ফুলতে অথবা পাকতে শুরু করেছে। কোনো কোনো জায়গায় আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন কৃষক। মাঠে মাঠে কৃষকরা শীতকালীন সবজি রোপণ করছেন। লাল শাক, সবুজ শাক, লাউ, কুমড়া, পেঁপে, বরবটি, মালঞ্চ, ফুলকপি, পাতাকপি, মূলাসহ নানা জাতের সবজি। এমন সময় সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় ডানা আঘাত হানলে কৃষির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সারাদেশেই এক সপ্তাহ ধরে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রবল বর্ষণ হতে পারে। এর প্রভাবে সারাদেশেই প্রচুর বৃষ্টি হতে পারে। ১৩০ কিমি বেগে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। এর প্রভাবে বিশেষ করে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর ওপর খুবই ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন আশঙ্কায় দিঘলিয়া উপজেলা প্রশাসন দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতিমূলক কর্মসূচি নিয়ে সভা করেছেন। দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ কিশোর আহমেদ এ প্রতিবেদককে জানান, চলতি সপ্তাহের ২৪ তারিখ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যে সারাদেশেই বৃষ্টিপাত হতে পারে। শাক-সবজির জমি থেকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জমা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জন্য কৃষকদের পরার্মশ দিয়েছেন তিনি। ঘূর্ণিঝড় প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের সবজি রোপণ না করার কথা বলছেন তিনি। সেই সঙ্গে কৃষকদের ফসলের ক্ষেতে এ সময় সেচ না দেওয়া এবং যাদের মাঠে পাকা আমন ধান রয়েছে, তাদের দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য দিঘলিয়া উপজেলায় কিছুদিন আগে কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে নিম্নাঞ্চলের অনেক কৃষি জমি তলিয়ে গিয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ১২০ হেক্টর জমির সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ৫ হেক্টর জমির পান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোপা আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৮০ হেক্টর জমির। দিঘলিয়া উপজেলায় মাছের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ জনপদের ১৫৫ হেক্টর জমির ৫৫০টি তলিয়ে যায়। প্রায় ৯৫ ভাগ মাছের ঘের ডুবে গিয়ে মাছ ভেসে যায়। চিংড়ি, সাদা মাছ ও বিভিন্ন মৎস্য পোনা ঘের তলিয়ে গিয়ে ৯ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি হয় ঘের পাড়ের সবজি ক্ষেত। দিঘলিয়া উপজেলার কৃষকেরা ও মৎস্য চাষিরা আসায় বুক বেঁধে সামনে এগিয়ে চলছে। এ জনপদের কৃষককূলের এতবড় ক্ষয়ক্ষতির পরেও কৃষকদের মাঝে শক্ত অবস্থান তৈরিতে সরকারিভাবে কোনো আর্থিক সহযোগিতা বা প্রণোদনা দেওয়া হয়নি এমনটাই জানিয়েছেন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।
আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের বার্তা পেয়ে এ জনপদের কৃষকদের মাঝে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ জনপদে শুরু হয়েছে কখনও হালকা মাঝারি বর্ষণ। ঘূর্ণিঝড়ের কবলে আবার কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি? নিভে যাবে কি তাদের অবশিস্ট আশার প্রদীপ!