পানি সরাও জীবন বাঁচাও! জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান চাই!

# ভবদহ পাড়ের লাখ লাখ পানিবন্দী মানুষের আকুতি! #
# ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আশ^াস দিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত #
মোঃ আব্বাস উদ্দীন, মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি ঃ সেই ষাটের দশকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত ভবদহ স্লুইসগেট নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক ¯্রােতধারা রোধ করার পরিনাম আজও ঘোঁচেনি ভবদহপাড়ের লাখ লাখ মানুষের । তাদের এখন শুধু দাবি পানি সরাও, জীবন বাঁচাও! জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান চাই। এবার ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আশ^াস দিলেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। বিভিন্ন তথ্য সুত্রে জানা গেছে,”ভবদহ” অঞ্চলের ২৭টি বিলের পানি মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী দিয়ে সমুদ্রে প্রবাহিত হতো। জোয়ারের সমুদ্রের লবণ পানি ঠেকিয়ে চাষাবাদ সহজ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৬১ সালে ভবদহ অঞ্চলের পাঁচটি স্থানে ৪৪টি স্লুইসগেট স্থাপন করে। জোয়ারের সময় এসব স্লুইসগেট বন্ধ রাখা হতো। যার ফলে নদীর স্বাভাবিক ¯্রােতধারা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভবদহের মেইন পয়েন্টের ২১টি কপাটের মধ্যে ১৮টি কপাট পলি জমে বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া পলি জমে ষাটের দশকে ভবদহ থেকে বারোহাটি পর্যন্ত ১৫০ থেকে ২০০ মিটার প্রশস্ত নদী সরু হয়ে কালক্রমে তা এখন মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিটার সরু হয়ে গেছে। পলি জমে অন্য সব নদ-নদীও মরে গেছে। ফলে ১৯৮১ সালের পর থেকে ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা শুরু হয়। প্রতিবছর সামান্য বৃষ্টিতেই নদীর দুই কূল ছাপিয়ে প্লাবিত হয় সমতল ভূমি ও ভবদহ সংলগ্ন বিলাঞ্চল। ভবদহের জলাবদ্ধতার ভয়াবহতা পরিলক্ষিত হয় ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে। এ সময় ভবদহ অঞ্চলের প্রায় ৯৮ ভাগ মানুষের ঘর ছিল মাটি ও খড়ের তৈরি। অপ্রত্যাশিতভাবে ৯০ ভাগ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। সেই থেকে শুরু হয় জলাবদ্ধ মানুষের মানবেতর জীবনযাপন। প্রতিকুলতার মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য শুরু হয় নতুন এক যুদ্ধ। কিন্তু কোনো সরকারের আমলেই এই অঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য স্থায়ী সমাধানের তেমন তাগিদ পরিলক্ষিত হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভবদহের সমস্যা সমাধানে যত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, তার তেমন সুফল পাওয়া যায়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কেশবপুর উপজেলার ভরতভায়না নামক স্থানে স্থানীয় জনগন বাঁধ কেটে দিয়ে ভায়নার বিলে নদীর জোয়ারের পলি ঢোকায়ে সুফল পায়। ভায়নার বিলের তলদেশ পলি জমে উচু হয়ে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাওয়ায় কৃষকেরা কাংিখত ফসল ফলাতে সক্ষম হয়। সেই থেকে ভবদহের আড়পাতা বিল , বিল বোকড়,বিল কেদারিয়া, বিল খুকশিয়ায় প্রাকৃতিকভাবে নদীর জোয়ার-আধার বিলে প্রবেশের প্রকল্প টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) প্রকল্পের দাবি উঠে আসে ভবদহের ভুক্তভোগী জনগনের পক্ষ থেকে। কিন্তু অপরিকল্পিত টিআরএম প্রকল্প বিভিন্ন বিলে বাস্তবায়নের ফলে সেটিরও তেমন সুফল আসেনি। ফলে টিআরএম কর্মসূচির বিপক্ষেও ভুক্তভোগীদের একটি অংশ জনমত গড়ে তোলে। তথাপিও পানি উন্নয়ন বোর্ড ভবদহের স্থায়ী সমাধানে তেমন কোন টেকসই কোন প্রকল্প গ্রহণ না করে নদীর নব্যতা ফিরিয়ে আনতে অস্থায়ীভাবে নদীর পলি অপসারেনে ড্রেজিং করা, সেচপাম্প দিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে মাত্র। কিন্তু তেমন সুফল আসেনি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে কোটি কোটি টাকার প্রকল্পে লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে ভুক্তভোগী জনগনের পক্ষ থেকে। এ পর্যন্ত ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্পে সিংহভাগ লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
চলতি বছরে অতিবৃষ্টির কারণে ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা ভয়াবহতা রূপ ধারন করেছে। প্রায় ৩/৪ মাস যাবত জলাবদ্ধতা যেন স্থায়ী হয়ে আছে। সামান্যতম কমছে না। বৃষ্টি হলে পানি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ভবদহ অঞ্চলের পানিবন্দী গৃহহীন মানুষ পরিবার-পরিজন পশুপাখি নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ অবস্থার স্থায়ী সমাধানে তাই মণিরামপুর উপজেলা বিএনপি ভবদহ জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে ১০ দফা দাবীতে গত ২৭ অক্টোবর বিকেলে ভবদহ অভিমুখে লংমার্চ ও গণজমায়েত কর্মসূচির আয়োজন করে।
মণিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কপালিয়া রাজবংশী পাড়ার মন্দির প্রাঙ্গণে মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এড. শহীদ ইকবাল হোসেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত গণজমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগাঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম আমিত। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে। নির্বাচনী ব্যবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে। এ জন্য দেশের প্রতিটি জনগনকে সম্মিলিতভাবে একযোগে কাজ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। ভবদহ অঞ্চলের ভুক্তভোগী জনগণের উদ্দ্যেশ্যে তিনি আরও বলেন, বিগত আওয়ামীলীগ সরকার জনগনের ভোটে নির্বাচিত সরকার ছিলো না। তাই জনগনের কল্যাণে কাজ করে নাই । বিগত সরকারের আমলে এ অঞ্চলের জনপ্রতিধিরা ভবদহ সমস্যার সমাধানে বড় বড় প্রজেক্ট এনে লুটপাট করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে । ভবদহ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের কোন পনিবর্তন হয়নি। উপস্থিত জনতাকে আশ^স্ত করে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত আরও কলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে ভবদহ সমস্যা নিয়ে কথা হয়েছে। তারেক রহমান দেশে ফিরলে সুবিধা সুযোগমত ভবদহ অঞ্চলে সরেজমিন স্বচক্ষে ভবদহ সমস্যা দেখবেন এবং ভবদহ সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ নিবেন বলেন তিনি জানান। কুলটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক নাজমুল হক লিটনের সঞ্চালনায় সমাবশে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির আহবায়ক ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার ফারুক মিন্টু। বিশেষ অতিথি ও অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সমাজকল্যান সম্পাদক জাহানারা সিদ্দিকি, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, জেলা বিএনপির সদস্য মোহাম্মাদ মুছা, মিজানুর রহমান খান, কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ, অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মতিয়ার রহমান ফারাজী,মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মফিজুর রহমান, পৌর সভাপতি খায়রুল ইসলাম, সাধারন সম্পাদক আব্দুল হাই, মুক্তিযোদ্ধা আকতার হোসেন খান, অ্যাডভোকেট মকবুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান মিন্টু, জেলা মহিলাদলের সহসভাপতি মেরী ইকবাল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুন্নাহারসহ জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা বিএনপি, পৌর বিএনপি , ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃবৃন্দ। এ লংমার্চ ও গণজমায়েতে ২০ হাজার জনগনের সমাগম ঘটে।